গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০৩ | Story: Ruper Tori | Episode-03

গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০৩ | Story: Ruper Tori | Episode-03


#পর্ব_৩
Writer: #Ashura_Akter_Anu
........
গলায় হাত চেপে এমনভাবে ধরায় যে কেউ মনে করত তরী আরিশাকে মারতে চাইছে। এমনভাবে গলা ধরে থাকায় একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে তরীকে জিজ্ঞেস করে,
"এই মেয়ে কি করছো তুমি!তুমি ঠিক আছো তো?"
তরী পেছনে ফিরে তাকানোর পরে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ হাসে। এবং বলে,
"আসলে আন্টি ও আমার ছোট বোন, ওর গলার প্রবলেম আছে একটু৷ মাঝে মাঝে এমন হলে ওর গলায় হালকা চাপ দিতে হয় বাইরে থেকে, নইলে ওর সমস্যা হয়, আপনি বুল বুঝবেন না!"
'ওহহ,সেটা বলো,আমি তো ভাবলাম কি না কি, আচ্ছা আমি গিয়ে বসি। একটু পর আমার সিরিয়াল "
"ঠিকআছে আন্টি"
মহিলাটি গিয়ে সিটে বসে পড়ল।
ড. এর কাছে এসেছে তরী ও আরিশা।বাবা মা নানুর বাড়ি গেছে জন্য কেউ আসতে পারেনি ওদের সাথে। তাই দু বোন নিজেরাই চলে এসেছে।
তরী ও আরিশাও গিয়ে ওই মহিলাটির পাশে বসে পড়ল৷ কিছুক্ষণ পর মহিলাটিকে সেখানকার কম্পাউন্ডার ভেতরে যেতে বললেন।
ড. দেখানো শেষ হলে যখন উনি বাইরে এলেন কেমন যেন চিন্তিত দেখালো ওনাকে। তরী ওনালে জিজ্ঞেস করল,
___আন্টি কোন সমস্যা হয়েছে?আপনাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন?
---না, আসলে তেমন কিছুনা।
---আন্টি আমি আপনার মেয়ের মতন, আমায় বলতে পারেন।
---আসলে, ড. অনেকগুলো টেস্ট দিয়েছেন, কিন্তু সঙ্গে করে তত টাকা নিয়েই আসা হয়নি। এখন.
তরী নিজের পার্স থেকে টাকা বের করে মহিলাটির হাতে দিয়ে বললেন,
---আন্টি আপনার যতটুকু লাগে আপনি নিন।
---কিন্তু আমি কি করে...
---সমস্যা নেই আন্টি। না হয় পরে আবার ফিরিয়ে দেবেন।।
---ঠিকআছে কিন্তু কিভাবে আবার তোমার সাথে যোগাযোগ করবো?।
---আপনার মোবাইল নম্বরটা দিন(হাসিমুখে)
---আচ্ছা কিন্তু মোবাইল নম্বরটা...
---না আন্টি আপনি যদি না দিতে চান তবুও সমস্যা নেই,
---না মা, তুমি নম্বরটা নাও
---ঠিকআাছ আন্টি সাবধানে যাবেন।
মহিলাটি মনে মনে বলছে,মেয়ে তোমায় তো বলাই হলোনা ওটা আমার নয়, আমার ছেলের নম্বর।
......
তরী রুমে বসে ব্যাগ গোছাচ্ছিল, ওর বাবা আজ চট্টগ্রামে চলে যাবেন আবার। সরকারী চাকরিজীবী হয়তো এ জন্যই এতটা প্রবলেম এর মাঝে থাকতে হয়। মাসে মাত্র চার থেকে পাচদিন মত পরিবারের মানুষের সাথে দেখা করতে পারেন,থাকতে পারেন, বাকওটা সময় নিজের অফিসিয়াল কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজনের সাথে ফোনে কথা বলারও সময়টুকু পান না।
তরীর বাবা মা তরী এবং আরিশা দুজনকেই অনেক ভালভাবে বড় করে তুলেছেন। তরী এখন বিয়ের যোগ্য হয়ে উঠলেও উনি তরীকে কিছু বলেন না। কারন উনি তরী খুব বিশ্বাস করেন।কেনই বা করবেন না,প্রতিটা বাবাই তার মেয়েকে বিশ্বাস করে। সেক্ষেত্রে তরীকে যে বিশ্বাস করতেই হয়। আজ পর্যন্ত তরীর মাঝে কোন খারাপ ব্যাবহার লক্ষ্য করেন নি ওর বাবা।
---আচ্ছা মা তোর ব্যাগ গোছানো শেষ?
---হ্যা বাবা, এইতো শেষ।
---আচ্ছা তাহলে তোরা থাক।পরের মাসের কবে আসব তা না হয় পরেই বলে দেব। তোরা সাবধানে থাকিস।
---বাবা পরের মাসে পাঁচ তারিখের আগে আসার চেষ্টা করবে। তুমি তো জানোই আরিশার বার্থডে ঔদিন।
---ঠিকআছে মা আমি চেষ্টা করবো। আসি কেমন?তাহিয়া(তরীর মা) মেয়েদের খেয়াল রাখবে আর নিজেরও।আসি। আল্লাহ হাফেজ..!
বাবাকে গেইট অব্দি এগিয়ে দেয়ার পর ঘরে এসে টেবিলে এলোমেলো হয়ে পড়ে থকা বই গোছাচ্ছিল তরী। সকালের ওই আন্টির কথা মনে পড়তেই মনে মনে চিন্তা হলো ওনার একবার খোঁজ নেয়া উচিত, ঠিক আছে কিনা। বিছানার ওপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আন্টির নম্বরে কল করলো।
দু বার কল করার পর তৃতীয়বার তরীর হালকা বিবেকে বাধলো, মনে হলো, এত রাতে হয়তো আন্টি ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাই আর ফোন দিল না।। ফোনটা হাতে নিয়ে আবারও ভাবছিল কিছু একটা এরই মাঝে আরিশা এসে ফোনটা কেড়ে নিল। আরিশার এমন কান্ডে তরীর কিছুটা রাগ হলো। আরিশার কাছে ফোন চাইলেও যখন সে দিলোনা তখন দুজনেই ফোন নিয়ে টানাটানি করতে লাগল।
এমনভাবে ফোনটা টানাটানি করায়, এবং টাচস্ক্রীন ফোন হওয়ায় কোথায় চাপ লেগে রিবোট হয়ে গেল সবকিছু।।। ফোনে থাকা যত কনট্যাক্ট নাম্বার, ছবি প্রয়োজনীয় যা ছিল সব ডিলিট হয়ে গেল।তরী একটানে আরিশার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে এমন অবস্থা দেখে ফ্লোরে বসে পড়ল।। ওদিকে আরিশা ভয়ে কাতর। না জানি তরী ওকে এখন কি করে৷
---এটা কি করলি??
---নিশ্চুপ
---এভাবে ফোনটা নেয়ার কি মানে ছিল বলতো?এখন দেখ কি হলো...!..আরু সবসময় ইয়ার্কি করাটা ঠিক না। ইয়ার্কিরও একটা টাইম থাকে৷ যে কোন সময় হুটহাট এমন ছেলেমানুষি করাটা কেউই পছন্দ করে না। তোর এমন বিহেভিয়ার কবে চেন্জ হবে বলতো??...এখন এভাবে দাড়িয়ে না থেকে প্লিজ আমার সামনে থেকে যা..!
আরিশা আর একমুহূর্তও দাড়ালো না, ওরও খারাপ লাগছে। যদিও ও এমন ইচ্ছে করে করেনি।
.......
--ভাইয়া একটা আননোন নম্বর থেকে কাল রাতে কল এসেছিল তুই যখন ওয়াশরুমে ছিলি।
---তো একন কেন বলছিশ?আগে কেন বলিশনি?
--আমার তো মাথায় ছিল না। আর এমনিতেও তোমার ফোন তোমার তো জানার কথা।
---ঠিক আছে আমি দেখছি।
রূপের মা ওদের রুমে সকালের নাস্তা দিতে এসে বলল,
--জানিস রূপ কাল একটা মেয়ের সাথে দেখা হলো এত্ত ভালো মেয়েটা।
---তাই নাকি?অবশ্য আমারও একটা মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। ওই পিচ্চি মেয়েটার মাথায় যে এত্ত বুদ্ধি।
--আচ্ছা?নাম কি?
---তা জানিনা, তোমার যে মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল তার নাম কি?
--ইশশশশ নামটাই জানা হয়নি(মুখ গোমড়া করে)
---হা হা, ভালো করেছো।
--কিন্তু হ্যা মেয়েটাকে তোর মোবাইল নম্বর দিয়েছি।
---কিহহ?কেন?কি প্রয়োজনে?মানে টাকি?
--আরে আরে শান্ত হ। ও আমায় কাল টাকা দিয়ে হেল্প করেছিল। তো সে টাকাটা তো আমায় ফেরত দিতে হয়ে তাই না?সে জন্যই।
---তাই বলে আমার নম্বর দিয়েছো?
--তো আর কি করবো?আমার নম্বর তো মনে ছিল না।
---তাহলে কাল রাতে হয়তো ওই মেয়েই কল করেছিল।।
--হতেও পারে, আচ্ছা মেয়েটা কল করলে আমায় বলিশ কেমন?
---ওকে...
.....
''তুমি কে বলনা প্রিয়,
আসো মোর কল্পনায়
ক্ষনিকের নীড়ে যেমন পাখিরা এসে চলে যায়,
এবার থেকে যাওনা,
হাতদুটি ধরলে ছাড়বোনা
কখনো যদি আবার আসো বসিয়ে দেব
এই মনের দোলনায়..❣
---কি অদ্ভুত মায়াবী কন্ঠে আজ সে আমায় প্রিয় বলে ডেকেছে। আহ্ কি মধুর সে কন্ঠ, যেন একআার শুনলে মন ভরবে না। কি আছে ওই কন্ঠে। আবারও কি আসবে সে? শোনাতে ওই মধুর কন্ঠ?আমি যে চিরকাল শুনতে চাই। গান না হয় নাইবা শুনলাম, আরও একটিবার প্রিয় বলে ডাকলে মনটা শীতল হয়ে যাবে যে।।।।।
রূপের কল্পনার সেই তরুনী আজ আবারও দেখা দিয়েছিল। দেখা দিয়েছিল বললে ভুল হবে ওকে "প্রিয়" বলে সম্বোধন করেছিল। বহু মেয়েদের কন্ঠই সে শুনেছে। তবে এতটা মধুর কন্ঠ যে ওর কল্পনার তরুনীর মাঝে আছে তা সে জানতো না।।।।।।
রূপের মনে একটাই আক্ষেপ শুধু,
"এটা কল্পনা, বাস্তবে এমন কোন তরুনীই নেই "
...'তবে সে হয়তো জানে না #রূপের_তরীও খুব বেশী দূরে নেই। সেও রূপের মতই কাউকে খুজছে"...!
"অপেক্ষা শুধু কাংখিত মুহুর্তের''.....!!
★সরি, আমি এই দুইদিন অনেক ব্যাস্ত ছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি। তবে এখন থেকে নিয়মিত পোস্ট করবো ইনশাআল্লাহ ❣
হ্যাপি রিডিং
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url