হয়তো তুমিই আমায় | Joutuk Hishebe Bou 2 | যৌতুক হিসেবে বউ ২ | Bangla Natok | Sabuj Ahmed | Zara Noor | Natok
Admin
13 Sep, 2022
পার্ট -১
#হয়তো_তুমিই_আমায়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
হ্যাপি রিডিং
বিয়ে বাড়িতে গিয়ে যখন জানতে পারলাম আমার হবু স্ত্রী আমার থেকে বয়সে পাঁচ বছরের বড়৷ তখন আব্বু দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে এটা স্পষ্ট যে আমাকে বিয়েটা করতেই হবে। এমন সময় আসে পাশের লোকের নানান কথা আমার কানে এলো৷
-- আরে ভাই ছেলের মনে হয় দোষ আছে। না হলে কি কেউ নিজের থেকে বড় মেয়েকে বিয়ে করে নাকি?
-- হুম দোষ ছেলের আছে কিনা জানি না তবে মেয়েটার তো আছে। তাতো সকলেই জানে। দোষ আছে বলেই তো এমন সুন্দরী মেয়ের বিয়ে হয় না।
-- আরে ভাই সব কিছু টাকা। মেয়ের বাপ ছেলে পক্ষকে বিশলাখ টাকা দিয়েছে তাই তো ওমন মেয়েকে বিয়ে করছে।
-- টাকার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে। আজ তা নিজের চোখে দেখলাম। না হলে কেউ কি এই মেয়ে বিয়ে করো নাকি?
এমন সময় আমার এক বন্ধু আমার কাছে এসে বললো ঃ- কিরে কতটাকায় বিক্রি হলি তুই? আমাদের তো জানতেই দিলি না। গভীর পানির মাছ কিন্তু তুই!
সকলের কথা শুনে আমার চোখ থেকে পানি পড়ছে। আসলেই তো আমাকে কেন আমার থেকে বড় মেয়েকে বিয়ে করতে হবে? শুধু কি টাকার জন্য? আসলেই কি মেয়ের বাড়ি থেকে আমাদের টাকা দিয়েছি। নিজের বাবা শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য রক্তের ছেলেকে বিক্রি করে দিলো৷ নাহ আর কিছু ভাবতে পারছি না। চোখ থেকে পানি পড়ছে। কি করে এসব হয়ে গেলো।
আমি আকাশ। সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি। এই বয়সে মানুষের কত স্বপ্ন থাকে আমারও ছিলো৷ কিন্তু আজ সবকিছু শেষ মনে হচ্ছে। বাবা মা আর আমি। তিনজনের ছোট পরিবার আমাদের। বাবা সামান্য বেতনের চাকরি করে তাই দিয়ে আমাদের খুব ভালো চলে যায়৷ বলতে গেলে সুখী পরিবার আমরা৷ সকলের মতো আমারও ইচ্ছে ছিলো কলেজ শেষ করে একটা চাকরি পাওয়ার পর মিষ্টি একটা মেয়েকে বিয়ে করবো কিন্তু নাহ তার আগেই কি থেকে কি হয়ে গেলো।
বিয়ের সকল পর্ব শেষ করে বিদায় নেওয়ার সময় মেয়ের বাবা আমার হাত ধরে বললো ঃ- আমার মেয়েটাকে সুখী রেখো বাবা। ও খুব ভালো।
তার কথার কোনো উত্তর আমি দিলাম না। আব্বু বিয়ের আগে যে মেয়ের ছবি দেখিয়ে ছিলেন তাকে দেখে আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে নিজের চোখে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি। হয়তো নিজের চোখে দেখলে এমনটা হতো না। যেখানে নিজের বাবা মেয়ের সকল খোঁজ খবর নেয় সেখানে আমার নাকগলানোটা প্রয়োজন মনে করিনি।
বাড়ি ফিরে সকলের কথায় আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছিলো। এমন সময় মা আর বাবার কিছু কথা কনে ভেসে এলো-
-- ছেলেটা কে কি এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়া উচিত কাজ হলো? ( বাবা)
-- আরে তুমি চুপ করো। সাথে যে বিশলাখ টাকা পাচ্ছো সেইটাও তো দেখো। কে কি বললো তাতে আমাদের কি?
-- ছেলেটার জীবনটা শেষ করে দিলাম মনে হয়!
-- আরে কিসের জীবন শেষ? ওকে বাঁচাতেই তো..............................
আমাকে দেখে মা বাবা দুইজনই চুপ হয়ে গেলো। মা আমাকে রাগী গলায় ঘরে যেতে বললো। কিন্তু আমার ঘরে যেতে ইচ্ছা করছে না। এখনও আমার ওই মেয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না। কি নির্লজ্জ মেয়ে যে নিজের ছোট ভাইয়ের বয়সের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়।
।
।
মা বাবার কথায় জোর করে একবার ঘরে গেলাম। গিয়ে দেখলাম মাথায় ঘোমটা দিয়ে একটি মেয়ে বসে আছে। মানুষের মনে নানান আবেগ অনুভূতি হয় কিন্তু আমার শুধু ঘৃণা আর রাগ হচ্ছে৷ শব্দ করে দরজা লাগাতেই সে কেঁপে উঠলো। আমার ওকে ছোঁয়ার বা ওর সাথে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছাই নেই। তাই ওর পাশে রাখা বালিশ আর কাঁথাটা আনতে গেলে সে আর্তনাদ করে বলে উঠল
-- আমার পিরিয়ড চলছে। প্লিজ আমাকে জোর করবেন না।
-- আমার আপনাকে ছোঁয়ার কোনো ইচ্ছা নেই৷ সবাইকে নিজের মতো ছোট মনে করবেন না৷ আমি নিচে ঘুমাচ্ছি আপনি খাটে ঘুমিয়ে পড়ুন। ( বেশ রেগে রেগে কথাগুলো বললাম)
মেয়েটা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো৷ আমি বালিশ আর কাঁথা নিয়ে নিচে ঘুমিয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে আমার একটু ঘুম দরকার। মেয়েটার মুখ দেখতেই ইচ্ছে করলো না। যাকে দেখে মায়ায় পড়েছিলাম সে কিছুতেই এই বুড়ি হতে পারে না৷ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলতেই দেখলাম কেউ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল হবে। কেউ জানালাটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। আমি অবাক হয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলাম
-- এতো রাতে জানালা বন্ধ করছেন কেন?
-- আপনাকে দেখলাম বাতাস আসার জন্য ঘুমাতে পারছেন না। তাই বন্ধ করতে দিতে চাইলাম। কিন্তু পারছি না।
-- চুপচাপ নিজের কাজ করেন। আমার ঘরের জিনিস বা আমাকে নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা করতে হবে না আপনাকে,। নিজের ছেলের বয়সি ছেলেকে বিয়ে করেন লজ্জা করে না আপনার?
-- আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি৷ যেখানে আমি কোনোদিন মা হতে পারবো না সেখানে কাউকে কেন বিয়ে করবো? আব্বু আমার জোর করে নিজের সম্মান বাঁচাতে বিয়ে দিয়েছেন৷ আমি কারো ক্ষতি করতে চাইনি। ( কিছুটা ভেজা গলায়)
-- বিয়ে করার ইচ্ছে নেই হা হা হা। আরে যদি এতো ভালো হন আপনি তাহলে নিজের হাত কেটে মরে যেতেন৷ আমার জীবনটা শেষ করে দিয়ে এখন নাটক না করলেই হয়। ( কড়া গলায় কথাগুলো বললাম)
-- আমি সত্যি নাটক করছি না।
-- আরে তুই তো একটা বাজারের মেয়ের মতো যে শরীরের সুখের জন্য কোনো ছেলের গলায় ঝুলে যায়। তোর তো কাউকে বাবা ডাক শোনানোর ক্ষমতাও নেই। নিজের মুখ দেখাতে লজ্জা করে না? আমি হলে কবেই মরে যেতাম।
মেয়েটা আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ঘাটের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লো। স্পষ্ট কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম কিন্তু মনে কোনো মায়া দয়া আসলো না। তাই চুপচাপ ঘুমাতে গেলাম।
সকালে উঠে দেখলাম সারাঘর রক্তে ভেসে আছে। তাহলে কি মেয়েটা সত্যি আত্মহত্যা করেছে? না না এমন কিছু হলে আমি সহ আমার পরিবার জেলের ভাত খাবে। তাড়াতাড়ি উঠে মেয়েটার কাছে গেলাম। মুখের সারা জায়গাতে কালি লেপটে আছে। হাত দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম বেশ গভীর করে হাত কাটা। ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে সকলে ডাকলাম। এখন কি হবে? আমার সামান্য কথায় মেয়েটা এমন করে বসবে আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি।
কালকে একটা ডিভোর্স এর কেইস শেষ করলাম। খুব সামান্য কারণে ডিভোর্স হয়েছে। ছেলে মেয়ে অ্যারেন্জ ম্যারেজ এর বিয়ে ছিল।দুজনে প্রাপ্তবয়স্ক। বিয়ের আগে সময় মেয়েকে ছেলে বলছিল যে তার ফ্যামিলিতে বিয়ের পর মেয়েরা চাকরি করতে দেয় না।
মেয়ে সেসময় নাকি সে শর্ত মেনে নিছে। বিয়ের কিছুদিন আগে একটা জায়গায় মেয়ে ইন্টারভিউ দেয়। এর কিছুদিন পর পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে দুইমাস সময় মেয়ের এই চাকরির কনফার্মেশন লেটার আসে।
এখন ছেলে পক্ষ চাকরি করতে দিবে না। ফ্যামিলি একটু কনজার্ভেটিভ টাইপ এর ফ্যামিলি। কিন্তু মেয়ে চাকরি করতে চাই। ছেলে পক্ষ এর ভাই তিনজন। আগে দুইপক্ষ এর ভাবি রা কেউ চাকরি করে না।
এমনে শিক্ষিত মার্স্টাস পাশ। তো তাদের মধ্যে এই নিয়ে ভেজাল ঝগড়া। দীর্ঘদিন ধরে তারা সেপারেট ছিল। মেয়ে চাকরি জয়েন করে চাকরি করে কিন্তু ছেলেপক্ষ আর তাদের যোগাযোগ করে নাই ছেলেও। কালকে ছেলের সাথে আমি এক ঘন্টা কথা বলছিলাম।
ছেলে বক্তব্য ছিল তাকে বিয়ের আগে এই শর্ত দিয়েছিলাম কিন্ত তখন সে এই শর্ত মেনে নিয়েছিল।এখন সে এখন এই ব্যাপারটা নিয়া বাড়াবাড়ি করছে। সে যদি চাকরি করতে চাই তাহলে আমরা আলাদা হয়ে যাব। তো ছেলে সার্পোট করত বাট ছেলের ফ্যামিলি এখানে বাদ শাধে। মেয়ের সাথেও কথা বললাম কিছুক্ষন মেয়ে ছেলের সাথে থাকতে চাই বাট চাকরিওটা সে করতে চাই।
ছেলে কথা হচ্ছে সে যদি আসতে চাই তাহলে চাকরি ছেড়ে আসুক।আমাদের টাকা পয়সার অভাব নাই। তবে মেয়ে নারাজ। পরে অনেকক্ষন তর্ক করার পরে দুইজন এ পেপার সাইন করে দিছে।