গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০১ | Story: Ruper Tori | Episode-01
গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০১ | Story: Ruper Tori | Episode-01 #পর্ব_১
গল্পঃ #রূপের_তরী
Writer: #Ashura_Akter_Anu
.......
"আমি কি এখন থেকে মেয়েদের জামাকাপড় ছেড়ে ছেলেদের টি শার্ট আর শর্টস পরে থাকবো?"
শপিংমল থেকে ফিরে তাড়াহুড়ো করে টাওয়াল টা নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়াবে তরী, এমন সময় ছোট বোনের এমন কথায় মেজাজ গরম হয়ে যায় ওর।টাওয়ালটা কাধের ওপর রেখে একটানে বিছানা থেকে সবগুলো শপিংব্যাগ একসাথে তুলে নিয়ে আলমারীতে রেখে বন্ধ করে দেয় তরী। আরিশা হতবাক হয়ে তরীর দিকে চেয়ে আছে। কি এমন বললো ও যাতে আপু এতটা রাগ দেখালো।
"হ্যা রে আপু কি হয়েছে?"
তরী রাগীভাব করে আরিশার দিকে একবার তাকিয়ে বাথরুমে চলে গেল।
আরিশা বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে তরীর হ্যান্ড ব্যাগ,ও তরীর পড়ার টেবিলের ওপরে থাকা কলমদানি থেকে চকলেটের প্যাকেটগুলো আস্তে করে সরিয়ে রাখলো।
গোসল শেষে মাথায় টাওয়ালটা জড়িয়ে রুমে এসে কলমদানির মধ্যে রাখা চকলেট না পাওয়াতে নিজের হ্যান্ড ব্যাগে তা খুজতে শুরু করলো। সেখানেও যখন চলেটের সন্ধান সে পেলনা তখন তরীর চোখে গেল আরিশার ওপর।
আরিশা মনোযোগ সহকারে বিছানায় বসে বই পরছে। পড়ছে বললে ভুল হবে কারন চশমার ফাকে আরিশার নজরটা তরীর ওপর। তরী সোজা গিয়ে বোনের সামনে গিয়ে দাড়ায়,
"আমার চকলেটের প্যাকেটগুলো কোথায় রেখেছিস?"
আরিশা কথাটি শুনে এমন একটা ভাব দেখায় যেন সে কিছুই যানেনা।
--ওমা, আমি কিভাবে বলবো?তোমার চকলেট তুমি যানো।
--দেখ আরিশা,মার যদি না খেতে চাস তো বল।
--তুমি আমায় সবসময় কেন দোষ দাও বলোতো আপু?আমিই যো তোমার চকলেট নিয়েছি তা এতটা জোড় দিয়ে কিভাবে বলছো?
--আমায় তুই ওভাবে দেখছিলি কেন তখন?
--কখন?আমি তো বই পড়ছিলাম (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
--আচ্ছা? আজকাল লেখকরা উল্টো করে বই লিখতে শুরু করেছে বুঝি?
আরিশা একবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে জিভে লামড় দেয়। মনে মনে বলে,
"ইশশশ রে, বইটাও উল্টোই ধরতে হলো?এখন যে আপু আমায় কয়প্রকার প্যারা দেবে আল্লাহ মালুম। "
একটা ছোট ডোক গিলে তরীর দিকে অসহায় ভাবে তাকায় আরিশা।
--ইয়ে মানে, আপু তোমার চকলেট...
--থাক লাগবেনা। তুই ই নে।সবাই খালি আমার পেছনেই লাগে।(কাঁদো কাঁদো মুখে)
কথাটি বলে তরী ব্যালকনিতে চলে আসে।আরিশা বড় বোনের এমন মন খারাপ হওয়ায় একটু কষ্ট পায়। তাই দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে তরীকে পেছন থেকে গলা ধরে জড়িয়ে ধরে। তরী আরিশার এমনভাব দেখে হাসার চেষ্টা করে বলে,
--হয়েছে হয়েছে, এখন আবার ভালোবাসা দেখাতে হবেনা। আমার চকলেটগুলো দিয়ে দে।
--আচ্ছা দিয়ে দেব, তুমি তো জানো আমি তোমার মত অত চকলেট খাইনা। আগে বল, বমার আপুটার মন খারাপ কেন?
তরী একটু চিন্তিত মুখ করে আরিশাকে ছাড়িয়ে দৌড়ে রুমে চলে যায়। আলমারী থেকে শপিং ব্যাগগুলো বের করে সবগুলো প্যাকেট খোলে। সবগুলো ঠিকই আছে তবে একটা প্যাকেট যেটাতে জেন্টস টি শার্ট ও শর্টস রয়েছে।আরিশা তরীকে জিজ্ঞেস করে,
--আপু এগুলো কার?আমি তো টি শার্ট পড়ি কিন্তু এগুলো তো মনে হচ্ছে ছেলেদের।
--ছেলেদের না রে, একটা হারামজাদার। (মনে মনে)
--কি?
--কিছুনা । তুই পড়তে বস।
......
দু ভাই একভাবে মেঝেতে পড়ে থাকা কাপড়টির ওপর তাকিয়ে আছে।দুজনেরই দৃষ্টি কিঞ্চিৎ ছোট হয়ে আছে। মেঝেতে একটি মেয়ের গাউন পড়ে আছে।
রূপের ছোট ভাই আদ্রিয়ান যে হেসেই চলেছে। ওদিকে রূপের মেজাজ গড়ম হচ্ছে এটা ভেবে, এই গাউন এখানে কি করে এলো। এতক্ষন শুধু ওরা দুজনেই মেঝেতে পড়ে থাকা গাউনটির দিকে তাকিয়ে ছিল তবে এখন ওদের মা যে কিনা ওদের খেতে ডাকতে এসেছিল, একটা মেয়ের গাউন পড়ে থাকা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
--মেয়েদের জামা তোদের রুমে কি করে এলো?
মায়ের এমন কথায় রূপ ও আদ্রিয়ান দুজনেই থতমত খেয়ে যায়।রূপ মেঝে থেকে গাউনটা তাড়াতাড়ি করে তুলে নিয়ে শপিং ব্যাগে ঢুকিয়ে বললো,
--মা আসলে একজনের সাথে ব্যাগ চেইঞ্জ হয়ে গেছে। তাই এমনটা হয়েছে।
--ওহহ,তাহলে ঠিক আছে। চল খেতে চল তোরা।
মা চলে যাওয়ার পর আদ্রিয়ান রূপকে জিজ্ঞেস করে,
--ভাইয়া এটা কার গাউন?
--আর বলিস না, একটা ঝগড়ুটে, উফফফ আমার তো মাথা ব্যাথা করছে। চল তো খেয়ে নেই।
....চলুন কয়েকঘন্টা আগে ফিরে যাই....
"আংকেল আমার ড্রেসগুলোর দাম দেখে দিন"
তরীর কথায় পাশ থেকে রূপ বলে উঠলো,
"সরি মিস, আমি আগে লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম,একটা কল এসেছিল তাই লাইনটা মিস করে ফেলেছি,আমি আগে দামটা মিটিয়ে নেই তারপর আপনি না হয়...
" এই যে মিস্টার, আপনার ফোনকল এসেছিল সো প্লিজ পরে বিলটা পে করুন। দেরি যখন হয়েছে আরেকটু দেরি করুন"
"ওহ হ্যালো আমি আগে এসেছি হ্যা। সো বিলটা আমিই আগে পে করবো"
"নো ওয়ে, আমি করতে দিলে তো,আংকেল আমার বিল কত হয়েছে?"
"আংকেল আমি কিন্তু আগে এসেছি,আমার বিলটা আগে দেখবেন,এই ঝগরুটে মেয়ের কথা শুনবেন না"
তরী রূপের দিকে অগ্নি চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলে ওঠে,
"হোয়াট ডু ইউ মিন?ঝগরুটে মানে?আপনার তো চরম সাহস দেখছি"(রূপের দিকে এগিয়ে গিয়ে)
"এই যে দেখুন এগোবেন না বলছি,খুব খারাপ হয়ে যাবে"
"তাই না? আপনাকে তো ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারা উচিত...আহ্
থাপ্পড়ের আওয়াজে দোকানের সমস্ত লোকজন রূপ ও তরীর দিকে তাকালো। তরী গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সামনেই রূপ মাথায় হাত দিয়ে আছে। আজ আবারও এ কি করে ফেলল সে।মনে মনে ভেবে নিল,নাহ এখন এখান থেকে কেটে পড়া উচিত,তাই।
তরী কিছু বলার আগেই সেলসম্যানের কাছে দিগুন বিলটা দিয়ে তারাতাড়ি নিজের ব্যাগগুলো হাতে করে ওখান থেকে চলে আসে রূপ।
তরীর যতক্ষণে বাস্তব জগতে ধ্যান ফেরে ততক্ষনে সেখান থেকে রূপ চলে গেছে। স্যাড ফেস নিয়ে কাপড়চোপড়ের বিলটা মিটিয়ে বাড়ি চলে আসে।
..........
রাত আটটার সময় বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে যখন রূপ রুমে ঢোকে তখন এক মন মাতানো সুবাস ওর নাকে আসে। এবং তা আসে ব্যালকনি থেকে। ঘাড় থেকে তোয়ালেটা বিছানার ওপর রেখে ব্যালকনির দিকে পৌছে রূপ।
সকালের সেই গাউনটি পড়া অবস্থায় একটি মেয়ে ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে.......
.
.
.
★আসসালামু আলাইকুম। ভেবেছিলাম কয়েকমাস গল্প লিখা বন্ধ করবো। কিন্তু থিম মাথায় ঘুরপাক খায়। তাই না লিখে পারলাম না। আবারও চলে এলাম রূপের তরী গল্পটি নিয়ে। সিজন ১ এর সাথে সিজন ২ মেলানোর চেষ্টা করবেন না। দুটো একদমই আলাদা। অবশ্য সিজন ১ এর চরিত্রগুলো এখানে পাবেন। কিন্তু অন্যরকম ভাবে। কেমন লাগছে জানাবেন। ★
হ্যাপি রিডিং