গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০২ | Story: Ruper Tori | Episode-02
গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০২ | Story: Ruper Tori | Episode-02
#পর্ব_২
#সিজন_২
গল্পঃ #রূপের_তরী
Writer: #Ashura_Akter_Anu
......
---খাওয়াদাওয়া আজ কদিন খুব বেড়েছে তোর, এতো খাসনা মোটা হয়ে যাবি।শেষে তোর জন্য ছেলে খুজতে বাবার অবস্থা শেষ হয়ে যাবে৷
কথাটি একদমে বলে খাওয়ার টেবিল ছেড়ে শান্ত পায়ে রুমে চলে গেল তরী।ওর কথায় আরিশা মোটেও কোন ভ্রুক্ষেপ করে নি। বরং আরও দুটো লেগপিস নিজের প্লেটে তুলে নিয়ে ভালোমত খাওয়ায় মনোযোগ দিল।কিছুদিন হলো খুবই খাওয়া বেড়েছে৷থাইরয়েড প্রবলেম থাকার কারনে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে আরিশার সাথে। মাঝে মাঝেই খাওয়া বেড়ে যায়। আবার মাঝে মাঝে একদমই খাওয়া কমে যায়। এমনি আজ কদিন ধরেই আবার হচ্ছে। ড. এর কাছে যেতে হবে আবারও। জটিল কোন সমস্যা হয়ে গেলে মুক্তি পাওয়া দূস্কর।
খাওয়া শেষে তরীর কাছে গেল আরিশা।
তরী রুমে বসে হুমায়ুন আহমেদের কিছু উক্তি পড়ছিল৷ আরিশা রুমে যেতেই সে বলে,
---''তরুনী মেয়েদের হঠাৎ আসা আবেগ হঠাৎ চলে যায়। আবেগকে বাতাস না দিলেই হলো।আবেগ বায়বীয় ব্যাপার। বাতাস পেলেই তা বাড়ে। অন্য কিছুতে বাড়ে না''-হুমায়ুন আহমেদ
---কথাটি দিয়ে কি বুঝাতে চাইছিস আপু?আমার তো কিছুই বুঝে আসলো না।
---জানিস আমাদের, মানে মেয়েদের কিছু সময় কিছু আবেগ খুবই গুরুত্বপূর্ন।আবেগটা বাড়তে দিলে আমাদেরই ক্ষতি হয় কখনো কখনো। আবেগটা ধরে রাখতে গেলেই আবার কষ্ট পেতে হয় গোপনে গোপনে। আমার মনে হয় আবেগটাকে একটা বাক্স বন্দি করা উচিত। যাতে চাইলেই সেটা খুলে দেখতে পারি, নতুন করে আবেগাপ্লুত হতে পারি,আবার চাইলেই সযত্নে সেই বাক্সে রেখে দিতে পারি।
---কিসব বলছিস? কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি। ধ্যাত। তুই জেগে জেগে বকবক কর। আমি ঘুমোই।
---আচ্ছা তুই আর কতদিন এভাবে আমার কাছে ঘুমোবি বলতো?একা থাকলে কি তোকে কেউ খেয়ে ফেলবে!
---আচ্ছা আপু ঘুমোই না।। এই রুমে থাকা একটু প্রাকটিস করছি। তোর বিয়ে হয়ে গেলে তো আমি এই রুমটা দখল করব!।
---হুম করতে দিলে। ঘুমো চুপচাপ।বেশি কথা বলিস না।
---ওকে,গুড নাইট।
আরিশা তো ঘুমিয়ে গেল। তবে তরী ঘুমোচ্ছেনা। হাজারো উদ্ভট চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায় সারাদিন।সেসব উদ্ভট চিন্তাভাবনার মাঝে আজকে ওই অচেনা ছেলেটার(রূপের) থাপ্পড় খাওয়াটা এক চিন্তা।
--"কি অদ্ভুত ছেলেটা, কেউ এভাবে অচেনা কাউকে কখনো মারে?.এমন অদ্ভুত মানুষের সাথে খুব কমই আলাপ হয়েছে তরীর। মানুষ অদ্ভুত হওয়াটা অসাধারন কিছু না হলেও সাধারনের তালিকায়ও পড়েনা বলে মনে হয় । কেননা যারা অদ্ভুত তাদের চিন্তাধারার বিষয় আলাদা হয়। তাদের ভাবনা অন্যরকম হয়। তারা চুপচাপ থাকাটা পছন্দ করে। যদি ছেলেটি আসলেই অন্যরকম হয় তাহলে এর সাথে আবারও আমার একবার দেখা হওয়াটা উচিত। আমিও চাই অদ্ভুত হতে। সবার মত নয়। আমার নিজের মত,যেমনটা আগে ছিলাম কিন্তু এখন আর নেই। "
বই হাতে নিয়ে বেডের পাশে থাকা ল্যাম্পের আলোয় তাকিয়ে এতক্ষন মনে মনে এসবই বলছিল তরী।ঘড়িতে তাকিয়ে কপাল খানিক কুচকে কি একটা ভেবে বইটা রেখে দিল টেবিলে। আরিশার গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল ওর পাশেই। নতুন ভোরের আশায়।
......
পরদিন সকালে---
---নতুন করে আবারও মেয়েটির প্রেমে পড়লাম। কিন্তু চেহারাটাই তো দেখা হলোনা। প্রতিবারই এমন কেন হয়। প্রতিবারই ও আসে, বারান্দায়,ওই মন মাতানো সুবাস চুলে মেখে। কিন্তু আমি ওকে কোনবারই দেখতে পাইনা। প্রতিবার এই একই ঘটনা কেন ঘটে।
---আজ আবার সেই মেয়ে এসেছিল তোমার স্বপ্নে?
---আরে ধুর বোকা, কতবার বলবো। স্বপ্নে নয়, আমার সামনে। আমার চোখের সামনে। কয়েক ক্ষনের জন্য। যে ক্ষনে আমি মেয়েটির কাছে যাব তার পরক্ষণেই মেয়েটি উধাও হয়ে গেল।
---ভাইয়া, তুমি একটু বেশিই ভাবো তো সববিষয় নিয়ে, তাই এমন কল্পনা তোমার সামনে ভেসে ওঠে। এাব হ্যালুজিনেশন ছাড়া আর কিছুই না।
---হুম হতে পারে৷ আবার নাও হতে পারে৷ কারন সবকিছুই যদি এমন হ্যালুজিনেশন হতো তাহলে অনুভুতি বা চিন্তাভাবনা নামক কোন বস্তুই এই পৃথিবীতে আবিষ্কার হতো না।
---ওহহ ভাইয়া তুমি কি সব উল্টাপাল্টা বল বলতো?আমার মাথায় কিছুই ঢোকে না।
---মাথায় কি ঢোকানোর কথা চলছে?
---মা ভাইয়া কি যেন বলছিল, একটা মেয়ে,কল্পনায়...
---মেয়ে?কোন মেয়ে?রূপ?
----আহহ মা, তুমি ওর কাথায় কান দিওনা তো। ও আবল তাবল বকছে।
---আচ্ছা এখন আমি আবলতাবল বকছি!?
---আহহ তোরা থামবি এখন? খওয়ার সময় এত কিসের কথা তোদের! চুপচাপ খেতেও পারিস না?
চুপটি করে খেয়ে বেরিয়ে পর। আর কথা বলবি না।
---"ভাইয়া আমাকে নিয়ে যা। আমি একা যেতে পারবোনা,বিশেষ করে রোড ক্রস করাটা আমি একদমই পারবোনা"।
---''ঠিক আছে, আয়"।
---''আচ্ছা শোন তুই গাড়িতে গিয়ে বোস।আমি আসছি"।
আদ্রিয়ানকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে গেল রূপ। সেখানে কালকের ওই গাউনসহ শপিংব্যাগ হাতে তুলে নিল। বলা যায়না, যদি আবার দেখা হয়ে যায়। তাহলে তো গাউনটা ফেরত দিতে হবে।
...
''আমি কালকে আমার বন্ধু ওই যে ডক্টর যিনি, তার কাছে তোমার সমস্যার কথা বলেছি। কাল যেতে বলেছেন৷"
"বাবা সবই বুঝলাম, আমি কি একা যাব?"
"নাহ তরী তোমার সাথে যাবে, তোমার মা এবং আমি আজ তোমার নানুর বাসায় যাব একটু। তোমার নানু নাকি অসুস্থ অনেকটা।"
"তাহলে তুমি আপুকে বলে দাও আমার সাথে যেতে''।
" বলতে হবে কেন?ও এমনিই যাবে,আর কেউ তো নেই তোমায় নিয়ে যাবে"
''ঠিক আছে। কাল ক'টা বেজে যেতে হবে?''
"ওই সকাল সোয়া দশটা নাগাদ"
"আচ্ছা,তুমি আপুকে বলে দিও আমি স্কুলে গেলাম"
"হুম যা,সাবধানে যাস"
(তরী এবং আরিশা বাবা মায়ের আদরের দু মেয়ে।আরিশা ছোট। সবসময় ও আদর বেশি পেলেও তরী কোনকিছু মনে করে না। কারন ভালোবাসা পাওয়ার দিক দিয়ে ও আরিশার চেয়ে ছ বছর এগিয়ে আছে। অন্যদিকে রূপ ও আদ্রিয়ানের বিষয়টাও একই।)
মানুষ যতই বলুক রাস্তার ধারের দোকানগুলোয় যে সব খাবার পাওয়া যায় সেগুলো দূষিত থাকে। হ্যা এটা ঠিক।কিন্তু সবচেয়ে বেশি আনন্দ ওইসব খাবার খেয়েই হয়ে থাকে। ফুটপাতের ধারে পাওয়া চটপটি,ফুচকা, আইসক্রিম,শরবত এসব খাবার প্রতিটি সময়ই আরিশাকে ম্যাগনেটের মত টানে। তরী এসব পছন্দ করলেও আরিশার অসুস্থতার জন্য ওকে খেতে দেয়না। তাইতো আরিশা লুকিয়ে লুকিয়ে এসব খাবার খায়।
ফুটপাতের ধারে বানানো ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাওয়াটা আরিশার স্বভাব বলা যেতে পারে। ক্লাস টেনে উঠলেও আজও এই স্বভাবটা পাল্টাতে পারেনি ও।
রাস্তার কোল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা ও খাওয়ায় মনোযোগ থাকার কারনে কখন যে একটা গাড়ি এসে পড়লো টেরই পায়নি আরিশা। গাড়িটা হাল্কা ধাক্কা দেওয়ার ফলে আরিশা নিচে পড়ে গেল সাথে হাতে থাকা ফুচকার প্লেটটিও।। পড়া থেকে উঠে নিজের ইউনিফর্ম এর ধুলো ঝারতে লাগলো সে। গাড়ি থেকে একি ছেলে(রূপ) বেরিয়ে এসে আরিশার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,
"সো সরি লিটল প্রিন্সেস, আসলে ফোনে কথা বলছিলাম একজনের সাথে তোমায় খেয়াল করিনি। চল তোমায় হসপিটালে নিয়ে যাই''
" আরে না না ভাইয়া, আমার কোথাও লাগেনি। আর এমনিতেও কেউ কারও সাথে ইচ্ছে করে তো এমন করবেনা তাইনা, ইটস ওকে।"
"তাহলে তো ভালোই, কিন্তু তোমার ফুচকাগুলো পড়ে গেছে, ওয়েট আমি কিনে দিচ্ছি"
''না না ভাইয়া লাগবেনা, এমনিতেও আমার স্কুলের জন্য লেইট হয়ে যাচ্ছে "
"ওকে তো চলো আমি ড্রপ করে দেব "
"নাহ ভাইয়া, আমি চলে যেতে পারবো, আসলে আর দু এক মিনিট হাটলেই আমার স্কুল"
"তা কিভাবে হয় লিটল প্রিন্সেস,তুমি কোন কিছুই করতে দিচ্ছনা আমায়"
"আচ্ছা ভাইয়া, না হয় ফুচকার দামটা আপনার কাছে জমা থাক, অন্য কোন দিন খাওয়া যাবে, (হাসিমুখে)আমি একন যাই"
রূপ আরিশার যাওয়ার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে৷ কি সুন্দর ব্যবহার মেয়েটির। গারিতে ধাক্কা লাগার পরও কারও এমন ব্যাবহার হবে তা জানা ছিল না রূপের। কাল সামান্য বিল নিয়ে একটা মেয়ের ওভাবে ঝগড়া করলো, আর আজ? আসলেই পৃথীবিটা অদ্ভুত।সব ধরনের মানুষেরই সমাগম এখানে রয়েছে৷ শুধু অপেক্ষা বাকি,দেখা হওয়ার।
.......
... "এই মেয়ে কি করছো তুমি!তুমি ঠিক আছো তো?"
মধ্যবয়সী কোন মহিলার কন্ঠে ঘুরে তাকালো তরী।
★আপনাদের কি ভালোলাগছেনা? যদি ভালোনালাগে তাহলে একটু ক্লিয়ার করে বলবেন। ভালোলাগলেও বলবেন।।আপনাদের মতামত জানাটা খুবই জরুরি।।।
হ্যাপি রিডিং
চলবে _____