গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০৪ | Story: Ruper Tori | Episode-04

গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ০৪ | Story: Ruper Tori | Episode-04
#পর্ব_৪

Writer: #Ashura_Akter_Anu
 
 
রাত আটটা বাজতে চলেছে। মাত্রই বাইরে থেকে এসে রুমে বসলো তরী, এরই মাঝে ফোনটা বাজতে শুরু করলো। আরিশা মোবাইলটার যে অবস্হা করে রেখেছে তাতে কে ফোন করছে কিছুই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। মনে মনে কিছুটা রাগ নিয়ে ফোনটা তুলে নেয়। আচমকাই ওপাশ থেকে কেউ সালাম দেয়।
---আসসালামু আলাইকুম!
--ওয়ালাইকুম আসসালাম.."
ওপাশের ব্যাক্তিটা রূপ ছাড়া আর কেউ নয়। ওর মা অনেকবার করে বলেছে এই নম্বরে ফোন করতে। তাছাড়া অপরিচিত কারও সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন বোধ করে না সে। অপরিচিত ব্যাক্তি হলেও কন্ঠস্বর তার কাছে অপরিচিত মনে হলো না। এ কন্ঠ আগেও যে কোথাও শুনেছে তা নিসন্দেহে বলতে পারবে সে। তবে কোথায় শুনেছে ঠিক মনে করতে পারছে না। রূপের কাছে কন্ঠ নামক জিনিসটা যদিও অসাধারণ কিছু নয় তবে এই কন্ঠস্বরকে সাধারনের তালিকাভুক্ত করলে নিতান্তই ভুল করা হবে। আরও একবার শুনার প্রয়াসে রূপ বলে উঠলো,
---শুনছেন আমার কথা?
--জ্বি! বলুন?..ঠিক চিনতে পারলাম না.."।
---"তা কি করে হয়".. ??
--ক্ষমা করবেন,তবে আপনার পরিচয়টা দিন আমি মনে করে নিচ্ছি।
---আজ না হয় থাক.. কাল একই সময়ে অপেক্ষা করবেন যদি ব্যাস্ত না থাকেন তো।..পরিচয়টা তোলা রইলো।
--হ্যালো!..কাল? মানে আমি ঠিক বুঝলাম না?.. হ.হ্যালো??
আর কিছু বলার আগেই রূপ ফোন কেটে দিয়েছে। আওয়াজটা যদিও আরও শুনতে ইচ্ছে হচ্ছিল তবুও। োোোমানুষের প্রেমে পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যদি বলা হয় কারও কন্ঠস্বরের "প্রেমে পড়েছি" ব্যাপারটা অন্যরকম হয়ে দাড়ায় তাইনা?নাহ রূপের কাছে এমন অনেক অন্যরকম কর্মকান্ডও একদমই স্বাভাবিক। মায়ের বলে দেয়া এই মেয়েটির নম্বর পেয়ে কথা বলাটা, " অনেকটা শামুক খুজতে মুক্তো পাওয়ার মতন"।
বারবার কন্ঠটি শুনতে চেয়েও নিজের মনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টায় আছে রূপ। যদি সে বিরক্ত হয় তাই বেশি কথা বললো না আজকে। কাল তো আবারও পাবে সে শুনতে, আজ না হয় থাক"..।
 
""তরীর চিন্তার মাঝে আরেক নতুন চিন্তা যোগ হলো।কে হতে পারে?এমন অদ্ভুত রকম কথা বলে ফোনটা কেটে দিল। এমন কেউ কেন আমার সামনে আসেনা?আমি যে তাদের দেখা পেতে চাই,কথা বলতে চাই,তাদের মত করে ভাবতে চাই। কবে পাব এমন কারও দেখা???
.
রূপ নিজের গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। যদিও ওর চাকরি করার প্রতি অনেক নেশা তবুও রূপের বাবা জোড় করে ওকে নিজের কোম্পানিতেই বসিয়ে দিয়েছে।
রোজ য়াওয়ার পথে আদ্রিয়ানকে ড্রপ করে দেয় সে। যাওয়ার পথেই সেদিন দেখা হয়েছিল আরিশার সাথে। খুবই মিস্টি মেয়েটি। ভদ্রতা দেখলেই মন ভরে যায়। নিশ্চয়ই বাবা মা অনেক ভালো শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে ওকে।
 
....আরিশাকে দেখে খুব টেন্সড মনে হচ্ছে আজ।
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরেই ব্যাগটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে সোফায় বসে পড়ে মন খারাপ করে। আরিশাকে এমনভাবে দেখে ওর মা জিজ্ঞেস করে,
---আরু মা, কি হয়েছে?
--মা আপু কোথায়?
---ও তো একটু বেরিয়েছে, কেন?কি হয়েছে?আমায় বল..!
--মা কলেজে একটা ছেলে আমার সাথে রোজই খারাপ বিহেভ করে।
---কিহ?আগে বলিসনি কেন? ছেলেটা কি তোর গায়ে হাত দিয়েছে?
--নাহ মা তেমন খারাপ বিহেভ নয়, আমায় বকে,অপমান করে আরও অনেক কিছু। আমি এতদিন কিছুই বলিনি,কারন আমি সেখানে নতুন।কিছু বলতে বা করতে চাইলেও পারবোনা। কিন্তু আজ যা করেছে তাতে আমি...
---কি করেছে?
--আমার ব্যাগের ভেতর স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা ছিল ছেলেটি সেটা সবার সামনে বের করেছিল।
---তুই আমায় আগে কেন বলিসনি?আচ্ছা শোন তোর বাবাকে এসব বলিসনা, টেনশন করবে। তরী আসুক তারপর দেখছি কি করা যায়।
--ঠিকাছে..!
________
তরীর সামনে আরিশা চুপটি মেরে বসে আছে।তরী মনের সুখে চকলেট খেয়ে যাচ্ছে। আরিশার থেকে পুরো ঘটনা শোনার পর সে বলল,
---বুঝলাম,আচ্ছা কাল সব দেখবো। আমিও তোর সাথে তোর কলেজে যাব।
--তুই গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে তো?
---অবশ্যই,দেখবি কাল কেমনভাবে ছেলেটাকে শায়েস্তা করি। আচ্ছা ছেলেটার নামটা কি?
--ওইতো,আদ্রিয়ান না কি যেন,সবাই ওকে আদ্র বলে ডাকে...!
---আদ্রিয়ান না??যাহ কাল দেখে নেব। যা এখন পড়তে বোস।
এর মাঝে আটটাও বেজে গেছে। তরীর ফোনে কল চলে আসলে। কালকেরই ওই নম্বর থেকে। আরিশাকে টেবিলে পড়তে বলে নিজে ব্যালকনিতে চলে এলো।
---হ্যালো?
--আপনি আজ আবার ফোন করেছেন?
---আপনি তো আজ আবারও আমার ফোন ধরেছেন..।
--এভাবে কাউকে ফোন দেয়াটা কিন্তু ঠিক না।
---আচ্ছা?তাহলে আর ফোন করবোনা?
--না...(মনে হালকা সংকোচ নিয়ে)
ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি হয়তো তরীর মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা সংকোচটুকু বুঝতে পেরেছে, তাইতো বললো,
---আচ্ছা ঠিক আছে, কাল রাত আটটায় আবারও?
তরী এবার মৃদু হাসলো। ভালোনালাগলেও আনন্দ কাজ করছিল কথা বলার মাঝে। কি অদ্ভুত লোকটি।এমনও কেউ হয়?
______
.
..
...
আদ্রিয়ান ও রূপ গাড়িতে করে কলেজ যাচ্ছে। রূপ প্রচন্ড রেগে আছে আদ্রর ওপর। একটা মেয়ের সাথে এমনটা করা কোনমতেই ওর উচিত হয়নি, যাই হয়ে যাক।
এমন কিছুর জন্য কখনোই রুপ প্রস্তুত ছিল না। ছোট ভাইয়ের এমন কাজে সে আসলেই খুবই লজ্জিত।
কলেজের গেইট দিয়ে গাড়িটা সোজা পার্কিং করল।এরপর আদ্রের সাথে ওর ক্লাসরুমে ঢুকল। সেখানে আগে থেকেই তরী ও আরিশা ছিল। আদ্রকে রুমে ঢুকতে দেখে আরিশা বলে উঠলো ওইতো এসে গেছে।
আদ্রের সাথে রূপকে দেখে আরিশা যেমন চমকালো ঠিক তেমনি রূপও চমকালো। রাগটাও বাড়তে থাকলো এটা ভেবে যে এই মেয়েটার সাথে এমন ব্যাবহার করেছে আদ্রিয়ান। যে মেয়ে কিনা কাউকে ঘুরে জবাব দেয়না।
তরী আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখে রূপ। সেদিন শপিংমলে যে ওকে থাপ্পড় মেরেছিল সেই ছেলেটি। তরীর রাগও সপ্তম আসমানে,। আদ্রিয়ানকে কিছু বলার আগে সে রূপের দিকে এগোয়,
--এইতো পেয়েছি আপনাকে। সেদিন খুব তো আমায় থাপ্পড় মেরে কেটে পড়লেন।আজ সামনে পড়তেই হলো তো?
---দেখুন আমি এখানে ঝামেলা করতে আসিনি, আর যদি জানতাম আপনি আসছেন আমি কখনোই এখানে আসতাম না।
--ওহহ তাই বুঝি?আমি মনে হয় আপনার পেছনে লেগে থাকি?
---দেখুন আমরা এসেছি ওদের মাঝের ঝামেলা মেটাতে। এভাবে ঝগড়া করবেন না প্লিজ।
--করবোনা। কিন্তু সেদিন যে আপনি আমায় থাপ্পড় মেরেছিলেন সেটার কি হবে?।।
---ওটা ভুলে যান না, ওটা তো হিট অব দা মোমেন্টে হয়ে গেছিল।
--হাহ,আপনার ন্যাকামি বাদ দিন। আপনাকে তো আমি পুলিশে দেব। আমায় থাপ্পড় মারার অপরাধে।
আরিশা ও আদ্রিয়ান হা হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি জন্যে এদের নিয়ে এলাম আর এরা কি করছে। তার চেয়ে ভালো আমরা ফ্রেন্ডশিপ করে নেই।
আরু ও আদ্রের মাঝে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে, কিন্তু ওরা এখনো ঝগরা করেই চলেছে। ..
একপর্যায়ে আরু ও আদ্র দূপাশ থেকে দুজনকে ধাক্কা দেয়। যার ফলে দুজনে একে অপরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বলা চলে কাউকে জড়িয়ে ধরলে যেমনটি হয় ঠিক তেমন।
"সামনাসামনি হলেও কেউ কারও কন্ঠ বুঝতে পারছেনা, কারন এখনও যে অনেক দেরী ওদের মিল হওয়ার...।
★আপনারা অনেকেই বলছেন রোমান্টিক করুন আরও। তাদের বলছি, আমি অত রোমান্টিকতা নিয়ে লিখতে পারিনা। পারলেও লিখবোনা। কারন আপনারাি পরে আঙ্গুল তুলবেন, যে ১৮+ হয়ে গেছে। সো আমায় মাফ করবেন। যতটুকু সিমার মাঝে লিখলে ভদ্র থাকা যায় আমি ততটুকুই লিখবো।এর চেয়ে বেশি আর আশা করবেন না আমার কাছে। 🙏
আমার ফোনের সমস্যা হওয়ার কারনে কিছুদিন গল্প দিতে পারিনি বলে মাফ করবেন।
হ্যাপি রিডিং

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url