গল্পের নামঃ অনুতাপ | Story Onutap Full & Final

 

আমার বিয়ের কথা চলছে। ছবি দেখে মনে হলো পাত্রের গায়ের রং বেশ চাপা, চেহারাও আহামরি নয়।ভাবী বললেন,ছবিতে তো নিগ্রোকেও ইংরেজ লাগে আর এই ছেলেকে লাগছে কালো।তাহলে বোঝো বাস্তবে এই ছেলের গায়ের রং কেমন?আমি ভাবীর কথার কোনো জবাব দিলাম না। গতকাল ই ভাবী ফোনে তার মাকে বলেছিল,আহ! গায়ের চামড়া সাদা দেখে কত্ত দেমাগ। আমার ভাইকে পাত্তা দিলো না। এখন বিয়ে হচ্ছে কার সাথে? উগান্ডার রাজকুমারের সাথে।
 
এইসব বলে খুব হাসছিল। দরজার বাইরে থেকে শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো।
রাত বাড়ে, কিন্তু আমার মনে কিসের যেন একটা খচখচানি থেকেই যায়।ঘরের আলো জ্বালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াই।নিজেই নিজেকে দেখি মুগ্ধ হয়ে।জীবনের প্রথম প্রেমপত্র পেয়েছিলাম মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়াকালীন।সেটার একটা লাইন ছিল এমন,"আমি পরী দেখিনি ‌কিন্তু তোমাকে দেখেছি।"
 
এরপর আরো কতশত চিঠি,গোলাপ ফুল,প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি হিসাব নেই। বিয়ের প্রস্তাবও আস্তে শুরু করে খুব ছোট থেকেই। কিন্তু,বাবা রাজি হতেন না।বলতেন,মেয়েকে পড়াবো।জর্জ-ব্যারিস্টার বানাবো। কিন্তু, বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলাম না আমি... সৃষ্টিকর্তা বুঝি সবাইকে সবদিক দিয়ে পারফেক্ট বানায় না।
 
একবার একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল।পর্দার আড়াল থেকে ছেলেটাকে দেখেছিলাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,ছেলেরাও এতো সুন্দর হয়?ভালো চাকরিও করতো। কিন্তু,বাবা নাকচ করে দিলেন।
কেন করলেন জিজ্ঞেস করা হয় নি।বাবাকে ভীষণ ভয় পাই। একদিন কলেজ থেকে ফিরছি।দেখি সেই ছেলে আমাকে ফলো করছে। একপর্যায়ে ডেকে বললো,আমি তোমাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি পদ্মা।প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিও না।
 
ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল।মাঝ-রাস্তায় এসব কি বলছে?কোনো রকম বাড়ি ফিরলাম। এভাবে কিছু দিন আমাকে প্রেম নিবেদন করে সে একদিন তার হাত খানিকটা কেঁটে ফেললো ব্লেড দিয়ে।এটা নাকি তার আমার প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ।
 
সেদিন বাড়ি ফিরে খুব কেঁদেছিলাম।মায়া লেগেছিল খুব!বাবা সব শুনে আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,যে অচেনা একটা মেয়ের জন্য নিজের হাত কাটতে পারে সে নিজেকে ভালোবাসে না।আর,যে নিজেকে ভালোবাসে না সে অন্য কাউকে কিভাবে ভালোবাসবে?এমন আবেগী ছেলেরা প্রেমিক হিসেবে পারফেক্ট,স্বামী হিসাবে নয়।
 
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে বাবা কিছু ক্ষন চুপ থাকলেন। এরপর বললেন, আমার মেয়ের জন্য আমি ঘোড়ায় চড়া রাজকুমার আনবো। সবচেয়ে সেরা ছেলেটার সাথেই আমার মেয়ের বিয়ে দিবো!
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবার বলা এইকথা গুলো ভাবছিলাম।তোশকের নিচ থেকে পাত্রের ছবিটা আরেক বার বের করে চোখ বুলালাম।এই তাহলে বাবার রাজকুমার,সেরার সেরা?
 
শুনেছি ছেলেটার বাড়ি গ্রামে। পড়াশোনা করেছে বিএ অবধি। রেজাল্ট তেমন ভালো না।গ্রামে সে মাছ চাষ করে। বিশাল-বিশাল দুইটা দিঘী আছে তার।সেই মাছ বিক্রি করে ভালোই টাকা-পয়সা বানিয়েছে। আচ্ছা, আমার হবু স্বামীর পেশা কি? জেলে?
 
পরদিন আমাদের বাসায় ছেলের মা এলেন।এমন গ্রাম্য ভাষায় কথা বলছিলেন যে অর্ধেক এর অর্থই আমি বুঝতে পারছিলাম না।
 
ভদ্রমহিলা চলে যাওয়ার পর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদলাম খানিকক্ষণ। আমার বাবাকে এলাকার সবাই আদর্শ হিসেবে মানে।এক ওয়াক্ত নামাজও আমি উনাকে ঘরে পড়তে দেখি নি কখনো। ছোট বেলায় আমাকে আর ভাইয়া কে বলতেন, কোনো মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবে না।সেই মানুষ দেখতে যেমনই হোক, তার পেশা যা-ই হোক মনে রাখবে তোমাকে যেমন আল্লাহ সৃষ্টি করেছে তেমনি তাকেও আল্লাহ সৃষ্টি করেছে।
 
এই কথা গুলো আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি কিন্তু তবুও কেন আজ এমন অদ্ভুত লাগছে।এক বান্ধবী ম্যাসেজ দিয়েছে, তোর হবু বরের একটা ছবি দেখা।
আমি তার ম্যাসেজ সিন করি নি।কারণ, আমার লজ্জা লাগছে।তাকে কি করে ছবি পাঠাবো?সে নির্ঘাত মুখের উপর বলে দিবে,এই ছেলের পাশে তোকে মানাবে না দোস্ত।মনে হবে বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা!
 
পরদিন সকালে সাহস করে আমি মাকে বললাম, আমার ছেলে পছন্দ হয়নি।
মা একথা বাবাকে বললেন।বাবা মাকে ধমক দিয়ে বললেন,কেনো?কারণটা জানতে পারি? যদি কারণ হয় ছেলে কালো তাহলে বলবো বাজারে গিয়ে তোমার মেয়েকে একটা মন-মানসিকতা ফর্সা করার ক্রিম খুঁজতে বলো।
 
আমি আর কিছুই বললাম ‌না। বিয়ের আগে সেই ছেলে আমাকে ২বার কল দিয়েছে।আমি ধরিনি।ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়েছি,ব্যস্ত আছি!
আসলে মন চায়নি কথা বলতে।
 
অবশেষে বিয়ের দিন এলো।লাল শাড়ি, সোনালী গয়না পরার পর মা আর দাদি মিলে দুয়া পড়ে আমার বুকে ফুঁ দিয়ে দিলেন।নজর যেন না লাগে তাই.....
বিয়ের আসরেই তাকে প্রথম দেখলাম।সাদা পাঞ্জাবিতে আরো কালো লাগছিল। চেহারারও কোনো সৌন্দর্য নেই। আমার বান্ধবীরা বললো,কেমন গরিলা-গরিলা লাগছে। বুঝলাম,সবাই আড়ালে হাসাহাসি-কানাকানি করছে।
বিদায়ের সময় আমি খুব খুব কাঁদলাম। বাবা-মা কে ছেড়ে যাচ্ছি এই জন্য না। কার সাথে সারা জীবন থাকতে হবে এই কষ্টে।
 
ভাঙা-চোরা রাস্তা দিয়ে জার্নি করে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
গ্রাম্য নিয়ম-কানুন পালন করতে করতে আর খাওয়া দাওয়া করতে লাগলো আরো ২ ঘন্টা।
অবশেষে,আমি বাসরঘরে ঢুকলাম।সে তখনো আসেনি।
দমবন্ধ হয়ে আসছিল আমার।সে তো নিশ্চয়ই ঘরে ঢুকেই স্বামীর অধিকার ফলাতে চাইবে। কিভাবে মানিয়ে নিবো?তাও, আবার সারা জীবন।
না চাইতেও চোখ ভর্তি হয়ে গেলো জলে।
 
চোখ মুছছি ঠিক সেইসময় ই লোকটা ঘরে ঢুকলো। চোখ বড়বড় করে বললো,ও বউ কান্দো কেনো?
আমি রাগে দুঃখে দাঁত চেপে বললাম, আমার নাম পদ্মা।
সে বললো, কিন্তু তুমি তো আমার বউ।
এরপর দরজা লাগিয়ে খাটের উপর এসে বসলো।বসে আবার বললো,সারা রাস্তা তুমি কানতে কানতে আসছো আমার অনেক খারাপ লাগছে বউ। কিন্তু,গাড়ি ভর্তি মুরুব্বির মধ্যে তোমারে সান্ত্বনা দিতে পারি নাই।
বলেই সে আমার হাতটা ধরে ফেললো।
আমি একঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিলাম।কি মানুষ ইয়া আল্লাহ!ন্যুনতম ম্যানার্সও নাই।ঘরে ঢুকে এক সেকেন্ডের মধ্যেই গায়ে হাত।
 
সে মাথানিচু করে বললো, আচ্ছা তোমার আবার কোনো প্রেমিক-ট্রেমিক ছিলো না তো? আমার কিন্তু এইসব ছিল না। ছোট কালে একটা হাঁসের বাচ্চা পালছিলাম।বড়ই মায়া করতাম।আমি গোসল করতে গেলে ঐটাও আমার পিছু পিছু যাইতো। একদিন বেজি এ নিছেগা ঐটারে।আমি সাতদিন কানছি জানো?বড় হয়ে যখনই প্রেম করার কথা মাথায় আসছে তখনই হাঁসের বাচ্চা টার কথা ভাবছি।ঐটারে হারাইয়াই এতো মায়া লাগছে আর যদি প্রেম করে ছেকা খাই তখন আস্ত একটা মানুষ হারাইয়া তো আমি মইরাই যামু।হা...হা...হা।
 
এই কথা গুলো বলে সে এমন ভাবে হাসছিল যেন মস্ত জোক করে ফেলেছে।
মনে মনে বলছিলাম,শালা গরিলা তুই চাইলেই বা তোর সাথে কোন মেয়ে প্রেম করতো।
কতখানি নির্বোধ হলে মানুষ নতুন বউকে প্রথম দেখায় এইসব বলতে পারে।
এমন সময় হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো।ভয়ে আমি শিউরে উঠলাম।খালি মনে হচ্ছিল,এই বুঝি লোকটা আমার গায়ে হাত দিবে, ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার উপর।
সে বড় গলায় বলে উঠলো,শালারা করলো কি কাজডা দেখছোনি?মন চাইতাছে ধইরা মুইরাই।এই গরমে মানুষ কারেন্ট নেয়?
 
কি তার কথা বলার ধরণ।ছিঃ... সুন্দর ভাবে কথাও বলতে জানে না।
বিদ্যুৎ ওয়ালাদের গালাগালি দিতে দিতে সে মোম জ্বাললো। এরপর বললো,বসো বউ একটা জিনিস নিয়া আসি।
যাওয়ার সময় চেয়ারে একটা হোঁচট খেলো।
আমি ভাবতে লাগলাম সে কি আনতে গেলো?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিলাম।দেখি বাবা বড় একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে।
 
"পদ্মা মা আমার,তুই আজ খুব কেঁদেছিস। তোর কান্নার কারণ আমি বুঝেছি। আমি মানুষ কে বাহ্যিক সৌন্দর্য বা পেশাগত দিক দিয়ে বিচার করি না। আমার কাছে অভ্যন্তরীন সৌন্দর্যটাই মুখ্য।আরো দুই মাস আগে একদিন বাসে ছেলেটার সাথে প্রথম দেখা হয়। আমার পাশের সিটে বসেছিল।এক আমড়াওয়ালা আমড়া বেঁচতে আসায় সে ২টা আমড়া কিনলো।আমড়াওয়ালা লোকটা তার থেকে দাম বেশি রাখলো।সে বিনা বাক্য ব্যয়ে দিয়ে দিলো।পরে আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, একটার আমড়ার দাম কত সেটাও কি তুমি জানো না?তোমার থেকে টাকা বেশি নিলো।
 
সে হেসে বললো,আমড়ার দাম জানি চাচাজি। তবুও কিছু বলি নাই কারণ মাত্র ১০ টাকাই তো বেশি নিছে।কত বড় বড় জায়গায় গিয়ে আরো বেশি টাকা ঘুষ দেয়া লাগে এদেশে। তখন তো সেই অফিসার রূপী ঘুষখোর দের কিছু কইতে পারি না। এখন ১০ টাকার জন্য এতো উতলা হয়ে লাভ কি?১০ টাকা বেশি লাভ করলে করুক,খেঁটে খাওয়া মানুষ।
 
আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। এরপর, কৌতুহল বশত তাকে বললাম, তোমার কথা শুনে তোমাকে ভালো ছেলে মনে হচ্ছে।আমি অনেক অর্থকষ্টে আছি।টাকা ধার করতে বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম কিন্তু টাকা পাইনি। তুমি আমাকে দুই হাজার টাকা দিবে? তোমার নাম্বার দিয়ে যেও।আমি পরে শোধ করে দিবো বিকাশে।ছেলেটা আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার কি দরকার টাকার?আমি মিথ্যা করে বললাম, আমার মেয়ের পরিক্ষার জন্য কিছু বই কিনতে হবে বাবা। জানিস মা,ছেলেটা আমাকে সত্যিই দুই হাজার টাকা দিলো।আর তার বিকাশ নাম্বার দিলো।পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,আমি যদি আর তোমাকে ফেরত না দিই টাকাটা?
 
সে সরল ভাবে হেসে বললো,আমাকে আল্লাহই দিবে। দুই হাজার এর বদলে চার হাজার। কিন্তু,বিপদে মানুষ কে সাহায্য না করলে আমি কেমন মানুষ হলাম?
 
সেদিন ফিরে এলাম বাড়িতে। এরপর একমাস কাটলো। তোর রমিজ আংকেল এর সাথে তার ভাইয়ের ছেলের বিয়েতে গেলাম। গিয়ে দেখি সেই ছেলের বাড়ি সেই গ্রামে। অনেক ক্ষন কথা বললাম।পরে স্থানীয় কয়েকজন এর কাছে ছেলেটার ব্যাপারে শুনলাম। ছোট বেলায় ওর বাবা মারা গেছে। অনেক কষ্টে বড় হয়েছে।সকালে স্কুল করে বিকালে এসে লোকের ক্ষেতে কাজ করতো। এখন,সে মাছ চাষ করে।সৎপথে উপার্জন করে পাকা বাড়ি বানিয়েছে,জায়গা-জমি কিনেছে। তার একটা স্কুলও আছে গ্রামে। পাশাপাশি ছোট একটা তাঁতের শাড়ির ব্যবসা। গ্রামের মানুষের বিপদে সবার আগে সে যায়।সব শুনে ছেলেটাকে আমার দারুন লেগেছিল।
 
এরপর আমি এই ছেলের সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নিয়েছি। বিশ্বাস কর, একজন মানুষও তার নামে একটা নেগেটিভ কথা বলেনি। সবমিলিয়ে আমার মনে হয়েছে এই ছেলেটা পারফেক্ট।তাই, আমি নিজেই তার মায়ের কাছে তোর জন্য প্রস্তাব নিয়ে গেছি।
 
তোর মনে আছে ,একটা ছেলে হাত কেটেছিল তোর জন্য।সেই ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জেনেছিলাম সে নেশাখোর।যাই হোক,তোকে ছোটবেলার থেকে শিখিয়েছি মানুষ কে বাহিরটা দেখে জাজ করিস না। তবুও,তুই.....মনে হয় আমার শিক্ষা দেয়ায় ভুল ছিল। সর্বোপরি, তোর স্বামী ভালো মানুষ। সুন্দর মানুষ, টাকাওয়ালা মানুষ অনেক আছে দুনিয়ায়। কিন্তু, ভালো মানুষের বড়ই সংকট।ভালো থাকিস..."
 
বাবার ম্যাসেজ টা পড়ে একটু লজ্জা পেলাম।
এমন সময় সে আসলো রুমে।হাতে একটা হাতপাখা।বললো, দরকারের সময় কোনোকিছু ই তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় না।গ্রাম তো,তাই লোডশেডিং হইলে কারেন্ট দ্রুত দেয় না।
আমি চুপ করে রইলাম।
 
সে বললো, তুমি তো জার্নি করে এসেছো অনেক খানি।ঘুমাবা?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
বিছানায় শোয়া মাত্র ই সে আমাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো।
আর বলতে লাগলো, খুব ই শরমিন্দা আমি বউ।এই বাড়িতে পা দিয়াই তুমি এতো কষ্ট পাইতাছো।এতো গরমে তোমার থাকতে কষ্ট হইতাছে আমি বুঝতাছি।
আমি মনে মনে বললাম,মোটেই কষ্ট হচ্ছে না।
 
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও বুঝলাম না। অনেক ক্ষন পর ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখি সে এখনো আমার মাথার পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে। মোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেছে।সে ঘরের জানালা খুলে দিয়েছে ঠান্ডা আসার জন্য।যদিও,বাইরে গাছের পাতা এক বিন্দুও নড়ছে না।তবে,আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে।উথাল পাতাল জোছনা জানালা ঠেলে ঘরে আসছে।চাঁদ দেখে বুঝলাম সময় অনেক হয়েছে।আর সেই, চাঁদের আলোতেই তাকে দেখলাম এখনো বাতাস করছে।
চাঁদের আলোয় তাকে কি মায়াবী ই না লাগছে!কি সুন্দর আর নিষ্পাপ তার মুখটাকে দেখাচ্ছে।
আমাকে জাগতে দেখে আরো জোরে বাতাস করতে লাগলো।বললো, শালার পুতেরা এখনো কারেন্ট দেয় নাই দেখছো? তোমার কি খুব বেশি গরম লাগছে ?
 
আমি বললাম, গরম পরলে তো গরম লাগবেই। এইবার পাখা টা আমার কাছে দিন। আপনাকে আমি একটু বাতাস করি.....
 
সে বললো,আরে তুমি নতুন বউ মানুষ..কি বলো এইসব..
আমি বললাম,আপনিও তো নতুন জামাই..
সে হা...হা করে হেসে উঠলো। এরপর,পাখা আমার হাতে দিলো। বললো,আমি যে এতো জোরে হাসলাম তুমি আবার কিছু মনে করলা না তো?আসলে, তুমি তো আমার আপন মানুষ। আপনজনের কাছে আমি নিজেরে ভেঙে-চুড়ে তুইলা দেই।এতো ফরমাল হইতে পারি না।
 
আমি হাসলাম।সে ও হাসলো। আমার চোখের কোনে চিকচিক করা অশ্রু সে চাঁদের আবছা আলোয় দেখলো না।এই অশ্রু অনুতাপের। একজন সুন্দর মানুষকে অসুন্দর ভাবার অনুতাপ।
(সমাপ্ত)
#অনুতাপ
লেখক-শাপলা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url