কেমন করে ঘুমাও তুমি ফজর করে কাজা | Kemon Kore Ghumao Tumi | Rajiya Risha
কেমন করে ঘুমাও ফজর করে কাজা | Kemon Kore Ghumao Tumi | Rokonuzzaman | Bangla Islamic Song
১.
মেয়েটাকে বললাম আমি এই এলাকায় নতুন রাস্তাঘাট তেমন চিনি না! তবুও মেয়েটা বারবার প্রশ্ন করে যাচ্ছে, "হসপিটালে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তাটা কোনদিকে?"
কিছুক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্স এসে মেয়েটার লাশ নিয়ে চলে গেল। মেয়েটাকে গাড়ির নিচে ধাক্কা মেরে না ফেললে, সে এতো তাড়াতাড়ি হসপিটাল পৌছাতে পারতো না!
২.
রাত ১ টা নাগাদ হঠাৎ অরিনের ঘুম ভেঙে যায়। বড্ড পিপাসা পেয়েছে, গলা শুকিয়ে কাঠ! বেডরুমে পানি না থাকায়, অরিন ডাইনিং রুমে এসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।
হঠাৎ খেয়াল করে ডাইনিং টেবিলের পাশের চেয়ারটাতে বসে আছে অন্তু! অরিনের শির দাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে যায়! অন্তু রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে আজ ৩ বছর হলো!
হাতে থাকা গ্লাসটার দিকে নজর যেতেই অরিন খেয়াল করে সেটা রক্তে লাল হয়ে আছে! গা গুলিয়ে ওঠে তার! এতক্ষণ ঢকঢক করে এক গ্লাস রক্ত খেয়েছে সে??
৩.
রাত ১০ টার দিকে অবনি আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছিল! অতুল মজা করে বললো, "রাতে আয়না দেখতে নেই, আয়নায় ভুত থাকে!" অবনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, "তা তুমি কখনো আয়নায় ভুত দেখেছো?"
অতুল উত্তর দিতে গিয়েও থেমে যায়! তারপর একবার অবনির দিকে তাকায় আর একবার আয়নার দিকে তাকায়! আয়নার বাইরে অবনি থাকলেও আয়নার ভেতর অন্য কারো প্রতিচ্ছবি!!
৪.
মাঝরাতে প্রচন্ড অসস্থিতে অরিনের ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে নিজের বাম পাশে নিজেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় আবিষ্কার করে সে! ভয়ে সরে আসতে গিয়ে খেয়াল করে, তার ডান পাশেও সে নিজেই শুয়ে আছে !!
আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে অরিন! এমন সময় দরজার ফাক গলে মুখ বাড়িয়ে, তারই মুখের প্রতিচ্ছবি প্রশ্ন করে, "এনি প্রবলেম ডিয়ার??"
৫.
কলিংবেলটা বাজতেই অবনি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। বাবা-মা এসেছে, এক আত্মীয় অসুস্থ থাকায় হসপিটালে গিয়েছিল তাকে দেখতে। দুজন কোনো কথা না বলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। অবনি কিছু জিগ্যেস করতে যাবে,
এমন সময় ল্যান্ড ফোনটা বেজে ওঠে! অবনি ফোনটা ধরতেই থমকে দাঁড়িয়ে যায়, তার মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না!
মা ফোন করেছে, তাদের বাসায় ফিরতে রাত হবে! তাহলে এইমাত্র দরজা খুলে যে দুজনকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে দিলো, তারা কারা??
_
গল্পঃ- সাসপেন্স | অণুগল্প-০১
লেখাঃ- মোহাম্মাদ হোসেন।
================= = = = == = = =
বড় ভাবীর মুখ মলিন হয়ে আছে। ডাক্তারের কাছ থেকে আসার পর থেকেই এমন।কারোর সাথে কোন কথা টথা বলছে না। আমি দু' তিন বার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসেছি,'কী হয়েছে বলো তো ভাবী, এমন মুখ গোমড়া কেন তোমার? ডাক্তার কী বলেছে?'
ভাবী আমার দিকে তাকালোও না পর্যন্ত। পরপর তিনবার যাওয়ার পরেও যখন কিছু বললো না তখন আর যেতে ইচ্ছে করলো না কাছে। শুধু শুধু কাউকে বিরক্ত করে কী লাভ? যদি সে যেচে না উত্তর দেয়।হতেও পারে শেষমেশ কোন দুঃসংবাদ শুনেই এসেছেন তিনি।এটা আগেই সন্দেহ ছিল আমাদের। ভাবীর অন্যসব বোনগুলোও এমন।বড় তিনটের বিয়ে হয়েছে একটারও সন্তান হয়নি। ভাবীর বিয়েরও দিন কম হয়নি। প্রায় ছয় বছর।এই এতদিনেও যেহেতু বাচ্চা কাচ্চা হলো না তবে আর হবে বলে মনে হয়? তবুও আম্মার আদর! নিজের মেয়ে নেই।তাই বড় শখ করে ভাবীকে ঘরে এনেছেন। ভাবীর গায়ের রং দুধে আলতা না।অনেকটা ময়লাই। তবে চোখে কী জানি একটা কিছু আছে। দেখলেই মায়া হয়। ভীষণ ভীষণ মায়া! নয়তো কী এতো কিছু জেনে,মানে যার অন্য তিনটে বড় বোনের বাচ্চাকাচ্চা নাই, তবুও তাকেই ঘরের বউ করেন?
ভাইয়া তো প্রথমে রাজীই ছিল না।না গায়ের রং দেখে নয়, সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায় বলে। আমিও আম্মাকে বলেছিলাম,'আজীবন শুধু খামখেয়ালি করে গেলে,এটা মানুষ বিয়ে নট পুতুল খেলা,বুঝেছো?'
আম্মা গাঢ় হেসে বলেছিলেন,'তোরা যা ভয় পাচ্ছিস তার কিছুই হবে না।ওর সন্তান ঠিকই হবে। আমি আল্লার উপর বিশ্বাস রেখে বলছি।'
আমি কিংবা ভাইয়া সেই বিয়ের ব্যাপারে সত্যিই সুমত দেইনি। যদিও বিয়ের পর ভাবীর ব্যবহার আমাদের মুগ্ধ করেছে এবং তার ভালোবাসার কাছে ভাইয়া পরাজিত হয়েছে। আমার বলতে একটুও বাঁধবে না যে জগতে এমন নম্র -ভদ্র আর চরিত্রবান মেয়ে মিলানো কঠিন। তবে প্রশ্ন হলো যাকে দিয়ে কোন ভবিষ্যৎ নেই তাকে কেন বিয়ে করে ঘরে আনতে হলো?
আম্মা এখনও হাসপাতাল থেকে ফিরেননি। ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়িতে দুজনের কেউই নেই। পরে শুনেছি ডাক্তারের কাছে গেছে।ভাবী এসে গেলেও আম্মা আসেননি এখনও। মনে হয় রিপোর্ট নিয়ে ফিরবেন। ভাইয়া আজ এক মাস যাবৎ জাপান। তার অফিসের কী এক কাজে যেতে হলো। ওখানে তিনি তিন মাস থাকবেন।