Bhalobashar Bho Bojhena | ভালবাসার ভ বোঝেনা | Afran Nisho | Tisha

নাটক ভালবাসার ভ বোঝেনা 

অভিনয়ঃ আনিকা কবির শখ ও আফরান নিশো 

পরিচালনাঃ মিলন ভট্টাচার্য

একজন বুদ্ধিমান শিক্ষক একবার তার স্কুলে অনেকগুলো বেলুন এনেছিলেন, তার ছাত্রদের তিনি সেসব বেলুনে নিজেদের নাম লিখে তা ওপরে নিক্ষেপ করতে বললেন। বাচ্চারা হলের মধ্যে তাদের বেলুনগুলি ছুঁড়ে ফেলার পরে, শিক্ষক সমস্ত বেলুন এলোমেলো করে মিশ্রিত করে হলের মাঝে ফেলে রাখলেন।  

আফরান নিশোর একটি নাটক দেখেছিলাম যে সে একটি রেস্টুরেন্ট চালায়। সে জানেনা তার একটি মেয়ে আছে। বিদেশ থেকে তার মেয়ে আসে এবং কিছুদিন থেকে চলে যায়। কেউ কি সেই নাটকটির নাম বলতে পারেন?

Osombhob Bhalo lagse natok ta..nisho ki bolbo osadharon .. good very good.. long live nisho

একেবারে শেষের দৃশ্যটায় (রাস্তায় নীলাকে আটকানোর পর থেকে) নিশো নিজের সমস্ত সংলাপ যেন সামনের কোনও স্ক্রীন থেকে পড়ে পড়ে বলে গেলেন। একঘেয়েভাবে, ভাবলেশহীনভাবে, কোনও অভিব্যক্তি ছাড়া — যেন পুরো দৃশ্যটা ওঁকে জোর করে করানো হয়েছে। এ যেন এক অন্য নিশো।ঠিক বুঝলাম না, উনি তো এ'রকম অভিনয় করেন না! মনে হয় হয়ত date-এর সমস্যার জন্য এই দৃশ্যের বেশ‌ কিছু shots আলাদা-আলাদাভাবে শুধু নিশো ও শুধু শখকে নিয়ে তোলা হয়েছে ও পরে edit করে দৃশ্যটা গড়ে তোলা হয়েছে। তাই নিশোর অভিনয় ও কন্ঠ দুই-ই expressionless — সামনের মানুষটা নেই তো! বড্ড বেশি চোখে পড়েছে ব্যাপারটা। 

বিছানা থেকে বালিশ গুলো একে একে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলতে লাগলো রুপা। বিছানার চাদর’টাও ফেলে দিলো। টেবিলের উপর রাখা ফুলদানিটা জোড়ে-সোড়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো যাতে ভেঙে যায়।
এর বিকট আওয়াজ গিয়ে পৌঁছে আজিজ চৌধুরীর কানে। খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে সাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
-'বাড়ি’টা কি পাগলা গারদ বানাতে চাচ্ছো? ভাড়াটিয়ারা শান্তি পাচ্ছে না। সারাক্ষন বাসার ভেতর ভাংচুর। এগুলো কে সহ্য করবে?'
আজিজ চৌধুরীর কথা শুনে ঠান্ডা গলায় সাহেলা বেগম বলল,
-'ওর মা-বাবা আজ আসছিলো। সেজন্যই অমন করছে। মা-বাবা কে একদম সহ্য করতে পারে না রুপা।'
একরাশ বিরক্ত নিয়ে আজিজ চৌধুরী বলল,
-'ওর বাবা-মায়ের টাকায় কি কমতি আছে? কোন ভালো মেন্টাল হসপিটালে মেয়েকে ট্রিটমেন্ট করাতে পারে না? এটা ভদ্র লোকের বাসা।'
-'এভাবে বলছো কেন? আর রুপা তো স্বাভাবিক প্রায়। তোমার সন্তান কি তুমি পাগল গারদে রাখতে চাইতে?'
-'আমার সন্তান পাগলা গারদে না রাখলেও অন্য কারো ঘাড়ে চাপাতাম না।'
এই বলেই আবার খবরের কাগজে চোখ বুলালো আজিজ চৌধুরী। রুপার ব্যাপারে সাহেলা বেগম কে কিছু বলে লাভ নেই। সে এ ব্যাপারে পজেটিব। সব সময় রুপার সাপোর্টই করে যাবে। আনমনে এসব বিড়বিড় করে বলছে আজিজ চৌধুরী।
সাহেলা বেগম দ্রুত উঠে রুপার রুমে গেলো। রুমের পুরো নাজাহেল অবস্থা । রুপা ফ্লোরে বসে হেচকি দিয়ে কাঁদছে।
সাহেল বেগম গিয়ে রুপার মাথায় হাত বুলিয়ে আদরের সুরে বলল,
-'কি হয়েছে আমার রূপা মা মনির? কে রাগিয়েছে?'
রুপা এবার কান্না থামিয়ে সালেহা বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলল,
-'ওই মহিলা এসেছিলো কেন আজ? উনাকে আসতে না করি নি।'
-'উনি তোমার মা রুপা। মা কে কেউ মহিলা বলে?'
-'আমার মা তুমি ।'
-'তোমার দুই টা মা।ওইটা তোমার বড় আম্মু আর তোমার ছোট আম্মু।'
-'না ,না আমার একটাই আম্মু। সেটা হলো তুমি।'
রুপার কথায় যতক্ষন সায় না দিবে ততক্ষন রুপার পাগলামী থামবে না। সাহেলা বেগম মুচকি হেসে বলল,
-'আচ্ছা, আচ্ছা! আমিই তোর আম্মু।'
বিশ্বজয়ের হাসি দিলো রুপা। কে বলবে এই মেয়েটা একটু আগে কেঁদেছে? পাগলের মত আচরন করছিলো,রুমের সব কিছু ভাঙছিলো।
সাহেলা বেগম এবার ধমকের সুরে বলল,
-'রুপা তোমায় কত দিন বলেছি বিছানা এভাবে এলোমেলো করবে না। পুরো রুম টা অগোছালো করলে কেন?'
সাহেলা বেগমের পাশে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রুপা বললো,
-'ওই মহিলা কে দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়েছিলো।'
-'আবার ওই মহিলা.....'
বলতে গিয়েও থেমে গেলেন সাহেলা বেগম।
রুপা এবার চুপটি করে শান্ত ভাব নিয়ে চেয়ারে বসলো। একুশ বছর বয়সের মেয়ে রুপা। কোমল,মায়ামাখা চেহেরা, চোখ গুলো ডাগর ডাগর,গায়ের রং শ্যামলা। গায়ের এই শ্যামলা রংটা যেন রুপার চেহেরা মাধুর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হাঁটু অবধি ঘন,কালো চুপ। দেখে মনে হবে শ্যাম প্রতিমা!
ঠোঁটের নিচে কুচ কালো ছোট্ট একটা তিল। সব মিলিয়ে শ্যামলা পরী। রুপা কখনো স্বাভাবিক, কখনো অস্বাভাবিক। কখনো শান্ত,কখনো তুফানের মত উত্তাল।
সাহেলা বেগম ড্রেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতল টা হাতে নিয়ে রুপায় চুলে যত্ন সহকারে তেল মাখিয়ে দিতে দিতে বলল,
-'বাসায় আর কখনো ভাংচুর করিস না মা। তোর বাবায় বিরক্ত হয়। আমায় কথা শোনায়।'
রুপা নিরব ভঙ্গিতে বলল,
-'আচ্ছা।'
লম্বা ,ঘন চুল আঁচড়িয়ে বেনী গেঁথে দিলো সাহেলা বেগম । মাঝে মাঝে রুপার চুল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । মেয়ে টার চুল গুলো এত সুন্দর কেন?
বিছানার চাদর ,বালিশ ফ্লোর থেকে উঠিয়ে একে একে গুছাতে লাগলো সাহেলা বেগম। ফুলদানি ভাঙা টুকরো গুলো পরিষ্কার করলো।
সাহেলা বেগম কাজে ব্যস্ত। সুযোগ বুঝে আচারের ডিব্বা নিয়ে এক দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলো রুপা।
ছাদের এক কোনায় চেয়ারে বসে এক দৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তুরান। চোখে ইয়া বড় ,বড় চশমা দেওয়া। চুল গুলো কোঁকড়ানো,চেহেরায় গম্ভীরতার ছাপ।ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তুরান। লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগ! প্রয়োজনের বেশী একটা কথা বলে না। চাপা স্বভাবের। রুপা পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে গিয়ে তুরানের পিছনে দাঁড়ালো। ডিব্বায় অবশিষ্ট আচার টুকু তুরানের মাথায় ঢেলে দিলো। হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো তুরান। আচারের তেল নাক-মুখ বেয়ে পরছে। শার্টে অলরেডী দাগ গেলে গিয়েছে।
পাশে দাঁড়িয়ে খিলখিয়ে হাসছে রুপা। চরম বিরক্তি নিয়ে মেজাজ খারাপ করে তুরান চেঁচিয়ে বলল,
-'এই মেয়ে তোর সমস্যা'টা কি বল তো? তুই কি করছিস এটা? নতুন শার্ট'টা দিলি নষ্ট করে? চুল গুলো মাত্র শ্যাম্পু করলাম। গোসলটাও নষ্ট করলি।'
রাগে নাক-মুখ লাল হয়ে গেছে তুরান। রুপা মোটেও ভয় পাচ্ছে না। বরংচ বিষয়টা উপভোগ করছে ।রাগ সংযত করতে না পেরে তুরান আবার চেঁচিয়ে বলল,
-'এক্ষুনি যাচ্ছি বাড়িওয়ালা আংকেলের কাছে। মাস শেষে এত গুলো টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি এই প্যারা সহ্য করার জন্য ।'
পথ আটকিয়ে দাঁড়ালো রুপা। অনুনয়ের সুরে বলল,
-'পায়ে ধরি আপনার বাবার কাছে বলবেন না প্লীজ। আমি শ্যাম্পু,সাবান সব দিচ্ছি আবার গোসল দিন।'
চোয়াল শক্ত করে তুরান বলল,
-'আমার শার্ট যে নষ্ট হলো তা কে দিবে?'
-' আমি আম্মুর কাছ থেকে একশ টাকা এনে দিবো আপনি শার্ট কিনে নিয়েন।'
হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না তুরান। একশ টাকায় শার্ট! এই মেয়ের মাথায় সত্যি কি গন্ডোগোল আছে? নয়ত কি কেউ এমন করে ?
রুপা কান ধরে বলল,
-'এই যেন কান ধরলাম আর হবে না । বাবার কাছে বলেন না প্লীজ। ভয় পাই তো আমি।'
রুপার আচরনে মাঝে মাঝে তুরানের মন হয় রুপা পাঁচ-সাত বছরের বাচ্চা। এমন কেন মেয়েটা ? কেমন যেন রহস্যময়ী।
আর রুপা এমন ভাবে অনুনয় করে মাফ চায় কারো কাছে নালিশও দিতে পারে না। এমন কি কান ধরে উঠ-বসও করে।
তুরান বলল,
-'সেদিন আমি ছাদে লুঙ্গি রোদ দিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি সেই লুঙ্গি ছিঁড়ে চোখ বেধে কানা মাছি ভোঁ ভোঁ খেললে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। আজ আমার শার্ট'টা নষ্ট করে দিলে । পেয়েছোটা কি?'
রুপা গাল ফুলিয়ে বলল,
-'সেই পুরোন লুঙ্গির শোক এখনও ভুলতে পারেন নি ভ্যাবলাকান্ত মশাই। আরে মানুষ মরলে তিন দিন পর আর শোক থাকে না। আর আপনি আপনার লুঙ্গির শোক পনেরো দিনেও গেলো না ।'
বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো রুপা। তুরান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। তুরানের চোখ চোখ পড়তেই রুপা বলে,
-'এই ভাবে তাকান কেন? ভয় পাই আমি।'
রাগ চাপিয়ে তুরান বলল,
-'নেক্সট টাইম যদি এমন করো তাহলে সত্যি আমি বিচার দিবো। যতই অনুনয় করো কাজ হবে না। একটা ম্যাচুরেট মেয়ে তুমি। অথচ বাচ্চাদের মত কান্ড করো।'

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url