গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-03)

 

#অচেনা ভালোবাসা
[৩য় পর্ব ]
লেখক - আবির চৌধুরী 
 
তিশা চলে যাওয়ার পরে আমি আরো কিছুক্ষণ ছাদের উপরে বসে ছিলাম। তারপর নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে একটা তোয়ালে পড়ে বের হয়ে আসলাম। বাহির হয়ে দেখি তিশা বসে আছে আমার রুমে। আমি তিশা কে দেখে তাড়াতাড়ি করে একটা জামা আর পেন্ট পড়ে নিলাম।
আমি -- তুই এই সময় আমার রুমে কেন? 
 
তিশা -- তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসলাম। এই খাবার খেয়ে নে।
তারপর আমি নাস্তা খাওয়া শেষ করলাম তিশা চলে গেলো। তারপর বাহিরে চলে গেলাম। দেখতে দেখতে আজকের দিন পার হয়ে গেলো। রাতে নিজের খাটের উপরে শুয়ে আছি। হঠাৎ করে আমার গায়ের উপরে ভারী কিছু অনুভব করতে পারলাম। অন্ধকার কিছুই দেখতে পারছিনা। 
 
গায়ের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আমি লাইট অন করে পুরাই হতবাক হয়ে গেলাম। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিশা। তা হলে তিশা আমার উপরে ছিল!
আমি -- তুই এতো রাতে আমার রুমে কেন? আর এসব কি?
তিশা -- এসব কি বুঝতে পারছিস না? তুই না আমাকে ভালোবাসিস তা হলে?
আমি -- তা হলে কি? 
 
তিশা -- তুই চাইলে আজকে রাতের জন্য আমি তোর হয়ে যেতে পারি। আর আমি তোকে আমার সব দিয়ে দেবো আজে রাতের জন্য। এতে তোর ও ভালো হবে আমারও হবে।
তিশার কথা শুনে আমার রাগ বেড়ে গেলো। নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে তিশার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলাম। 
 
আমি -- আমি তোকে ভালোবাসি এটা সত্যি। এর মানে এটা নয়যে আমার কোনো খারাপ মতলব আছে। আমি তোকে ভালোবাসি আর আমার ভালোবাসা পবিত্র আমি সেটা অপবিত্র করতে চাইনা।
তিশা -- জাহিদ দেখো আমার আর ভালো লাগছে না। আজকে রাতের জন্য তুমি আমার হয়ে যাও প্লিজ।
তিশা এই কথা বলে আমার দিকে এগিয়ে আসলো আর আমার জামা টান দিয়ে তার কাছে আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। তিশার ঠোঁট এর কাছে আমার ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন সময় আমি তিশা কে ধাক্কা দিয়ে আমার দূরে সরিয়ে দিলাম। 
 
আমি -- তিশা, তুমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছ? এসব কি করছো তুমি? সবাই জানলে কি হবে বুঝতে পারছো?
তিশা -- কে কি জানল সেটা আমার ভেবে লাভ নাই আমি আজকে রাতের জন্য তোকে চাই আর কিছুই না। 
 
আমি -- আমাকে ক্ষমা কোর আমি পারবোনা।
তিশা -- আমার কি কোম আছে বল? তুই কেন পারবি না!
আমি -- তুই আমার রুম থেকে বের হবি নাকি ধাক্কা দিয়ে বের করতে হবে তোকে?
তারপর তিশা রাগ দেখিয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আমি আমার রুমের দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে চিৎকার চেচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। আর কারো কান্নার শব্দ আমার কানে ভেসে আসছে। আমি উঠে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে গেলাম। বাহিরে গিয়ে দেখি আব্বু আর আম্মু চলে আসছে। আর তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিশা আর তার আম্মু। তিশার চোখে পানি। আমি এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে। 
 
আমি -- আব্বু আম্মু তোমরা কখন আসলে?
আমি আব্বুর সামনে গিয়ে এই কথা বলতেই আব্বু আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। আমি গালে হাত দিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আজকে প্রথম আব্বু আমার গায়ে হাত তুলল। কিন্তু কেন তা এখনো আমার অজানা। 
 
আমি -- আব্বু আমি কি করলাম আমাকে মারলে কেন?
তিশা -- দেখুন আংকেল ও এখনো কি ভাবে কথা বলছে। মনে হয় কিছুই জানেনা।
আমি তিশার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম -- কি জানব আমি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
আব্বু -- তিশা মা বল তুই সব ও তোর সাথে কি করতে চাইছে!
তারপর তিশা আব্বু কে যা বলল আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো মিথ্যা কথা কি ভাবে বলতে পারে মানুষ! 
 
তিশা -- আংকেল কাল রাতে আমি জাহিদের জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ও দরজা বন্ধ করে দিল। আমি ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম দরজা বন্ধ করিস কেন কিন্তু ও আমার কোনো কথার উত্তর দিল না। তারপর ও আমাকে প্রপোজ করল। আমি রিজেক্ট করে দেই। তারপর আমরা গালে একটা চড় মেরে দেয়। আমি চলে রুম থেকে বের হয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু জাহিদ আমার সাথে যা করল। এই কথা বলেই তিশা মিথ্যা কান্নার নাটক শুরু করে দিল। আমার ভাবতেও অনেক খারাপ লাগছে একটা মেয়ে কি ভাবে নিজে কে নিয়ে এমন বাজে কথা বলতে পারে৷ তিশার কথা শুনে আমার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হচ্ছেনা। আমার চোখের পাতা ভিজে যাচ্ছে। 
 
আব্বু -- ছি জাহিদ তোকে এই ভাবে মানুষ করবো কখনো ভাই নাই তোকে নিয়ে আমি অনেক গর্ব করতাম আর তুই আমাদের এই প্রতিদান দিলি! 
 
আমি -- আব্বু বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনাই তিশা সব কিছুই মিথ্যা বলছে। আমাকে বিশ্বাস করো।
আব্বু -- তুই চুপ থাক তুই কেমন সত্য বাদি আমাত জানা হয়ে গেছে।
আমি -- আম্মু তুমি তো আমাকে অন্তত বিশ্বাস করো আমি কিছুই করি নাই।
আম্মু -- তুই আর আমাকে কখনো আম্মু ডাকবিনা। আমি কোনো ধর্ষক এর মা হতে চাইনা। আজ থেকে মনে করবো আমার কোনো ছেলে নাই। যে ছিলো সে মারা গেছে। 
 
আমি আম্মুর মুখে এমন কথা আসা করি নাই। বুক ফেটে কান্না আসছে। জানি আমার কথা এখানে কেউ বিশ্বাস করবে না। খুব অসহায় মনে হচ্ছে। তিশার দিকে অশ্রু মাখা চোখে করুনার দৃষ্টি তে তাকালাম। তিশা আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল। ভাবতেও খারাপ লাগছে এই মেয়েকে আমি ভালো বাসছিলাম! আব্বু আম্মু আমার সামনে থেকে চলে গেলো। আমি আব্বু আর আম্মুর রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। রুমের সামনে গিয়ে দেখি আম্মু কান্না করছে। আমি গিয়ে আম্মুর পায়ের উপরে পড়ে গেলাম।
আমি -- আম্মু আমার উপরে তোমাদের কোনো বিশ্বাস নেই! তোমারা কি করে বিশ্বাস করলে তোমাদের ছেলে এমন একটা খারাপ কাজ করতে পারে? 
 
আব্বুর -- তোর জন্য আমাদের মাথা কাটা গেলো। আমরা বাসা থেকে বের হলেই মানুষ আমাদের অপমান করবে। তুই তো এগাই চাইলি তাই না? 
 
এবার আমি আম্মু কে ছেড়ে আব্বুর পা ধরে বললাম-- আব্বু তোমরা আমার কথা কেন বিশ্বাস করছো না? আমি কোনো কিছুই করি নাই আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে তিশা।
আব্বু -- কাল রাতে কি হইছে সেটা বল তুই। কাল রাতে কি তিশা তোর জন্য খাবার নিয়ে আসে নাই? তুই ওর গায়ে হাত তুলিস নাই?
আমি -- হুম কিন্তু,, 
 
এই কথা বলেই আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমি আর কিছুই বললাম না আমি চাইনা ও অপমানিত হোক। আর একদিন সে তার নিজের কথা নিজেই বলবে। এই সব ভেবে সত্যি কথাটা আমি আর বলতে পারলামনা। 
 
আব্বু -- কিরে কিন্তু কি বল? আর কোনো মিথ্যা কথা খুঁজে পাচ্ছিস না তাই না? আর মিথ্যা কথা বলতে হবে না তোকে এখন তুই আমাদের সামনে থেকে চলে যা। আমাদের একটু একা থাকতে দে।
তারপর আমি আমার রুমে চলে গেলাম। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। কিছু না করে আজকে আমি অপরাধী!
 
চলবে ----------------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url