গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-05) | Unknown Love (Part-05)

 

#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ৫]
লেখক -- আবির চৌধুরী
এখন একটু ভালোই লাগছে। আল্লাহ একটা মেয়ে কি ভাবে পারে এতো কথা বলতে! আমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি হঠাৎ করে নুপুর আবার বলে উঠল।
নুপুর -- এই যে মিষ্টির আপনি এমন কেন?
-- কেমন আমি?
-- আমার টাকা হারিয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছেন আমি মন খারাপ করে বসে আছি, কোথায় আমাকে সান্ত্বনা দিবেন তা না করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন অদ্ভুত!
আমি অন্য দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। আর বললাম -- আচ্ছা ঠিক আছে সান্ত্বনা দিচ্ছি।
নুপুর -- লাগিবে না আপনার সান্ত্বনা।
 
এই বলে নুপুর অন্য দিকে মুখ করর বসে রইল। মনে হয় রাগ করছে। তাতে আমার কি রাগ করলে। আমি আমার মতই চুপচাপ বসে আছি।
-- এই যে মিস্টার আপনার আসলে সমস্যা কি বলেন তো?
-- আমার আবার কিসের সমস্যা? 
 
-- দেখছেন না আমি রাগ করছি আমার রা না ভেঙে আপনি অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
(কি পাগলের কাছে আসলাম রে বাবা)মনে মনে বললাম।
-- আমি এসব পারিনা। আর এবার আপনি একটু চুপ থাকেন প্লিজ।
এবার মেয়েটা আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ হয়ে গেলো। পরিবেশ টা ঠান্ডা হয়ে গেলো। কিন্তু এই মেয়ে যে বাচাল পরিবেশ ঠান্ডা থাকতে দিলনা।
-- শুনেন একটা কথা বলি।
-- জ্বী বলুন! 
 
-- আপনি কি আমার জন্য বিরক্ত হচ্ছেন?
বিরক্ত করে আবার প্রশ্ন করে বিরক্ত হচ্ছি কিনা! কি অদ্ভুত মেয়ে এটা!
আমি -- না ঠিক আছে সমস্যা নাই।
-- আচ্ছা আপনি গান পারেন?
-- না,
-- ওহ, 
 
তারপর দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। তারপর মেয়েটা অনেক্ষন বক বক করল। আমি শুধু হুম হুম করছিলাম। দেখতে দেখতে ট্রেন চট্রগ্রাম এসে পৌছে গেছে। তারপর আমি আর নুপুর নেমে গেলাম।
নুপুর -- এখন তাহলে আমি আসি। 
 
আমি -- ঠিক আছে যান।
তারপর নুপুর চলে গেলো। আমিও ট্রেন স্টেশন থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করে দিলাম। আর ভাবছি আমি এখন কই যাবো! কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কিছু একটা তো করতে হবে আমাকে না হলে কি ভাবে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে অনেক ধুর হেটে চলে গেলাম। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা বাচ্চা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে একটা গাড়ি বাচ্চা ছেলেটার দিকে এগিয়ে আসছে। বাচ্চা হলেও বেশ বড় ছেলেটা। 
 
৫/৬ বছর বয়েস হবে। গাড়িটা অনেক জোরে ছেলেটার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে ছেলেটার কেছে চলে গেলাম। ছেলেটাকে সরিয়ে দিতে গিয়ে আমি গাড়িটার সাথে অনেক জোরে ধাক্কা খেলাম। ধাক্কা খেয়ে আমি রাস্তার এক পাসে পড়ে গেলাম। চোখ খুলে তাকানোর শক্তি পাচ্ছিনা। চোখে সব ঝাপসা দেখতে পাচ্ছি। অনেক লোক আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। কিন্তু কেউ আমার কাছে আসছেনা। ধিরে ধিরে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। 
 
একটু পরে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপর আর কিছু মনে নাই আমার। চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডের উপরে আবিষ্কার করলাম। চোখ খুলে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নুপুর।
নুপুর -- এখন কেমন লাগছে আপনার? অনেক চিন্তা হচ্ছিলো আপনার জন্য।
-- আমি এখানে কি করে আসলাম?
-- আপনাকে আমার আম্মু নিয়ে আসছে এখানে। আপনি যাকে বাচাতে গিয়েছিলেন সেটা আমার এক মাত্র ছোট ভাই।
-- ওহ। 
 
-- জ্বী আপনাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছিলো যানেন।
-- আমার জন্য এতো চিন্তা করার কি আছে? মরে গেলেই হয়তো অনেক ভালো হতো।
-- কি বলছেন এসব? আপনি এখন রেস্ট নেন। ডাক্তার বলছে আপনাকে কিছু দিন রেস্ট করতে।
তারপর আমি আর কিছুনা বলে চোখ বন্ধ করে নিলাম। চোখ বন্ধ করতেই ঘুম চলে আসলো। শরীর অনেক দুরবল লাগছে। 
 
নুপুরের আম্মু -- নুপুর ছেলেটার জ্ঞান ফিরছে?
নুপুর -- জ্বী আম্মু। একটু আগেই জ্ঞান ফিরছে এখন ঘুমাচ্ছে।
-- আলহামদুলিল্লাহ। ছেলেটা যদি ঠিক সময় না আসতো কিজে হয়ে যেতো।
-- হুম, ঠিক বলছ আর আম্মু আমি এই ছেলেটাকে চিনি।
-- কি ভাবে? 
 
-- আমরা এক সাথে ট্রেনে করে আসছি।
তারপর নুপুর তার আম্মুকে সব বলল। টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার কথা টাও বলল। নুপুরের আম্মু সব কথা শুনে খুশি হয়ে গেলো।
অনেক্ষন পরে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে দেখি আমার পাশে বসে আছে একটা ভদ্রমহিলা। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নুপুর।
-- বাবা তুমি এখন কেমন আছো? 
 
-- জ্বী এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
এই কথা বলে হালকা উঠতে যাবো তখন আন্টি আমাকে উঠতে দিলনা।
-- উঠছ কেন তুমি? শুয়ে থাকো তোমার রেস্ট এর দরকার আছে। আচ্ছা তোমার বাড়ির লোকেদের নাম্বার টা দাও তাদের কল দিয়ে বলে দি।
-- আন্টি আমার কেউ নেই আমি এতিম। (মিথ্যে কথা বললাম) কারণ আমি তাদের থেকে ধুরে থাকতে চাই। যারা আমাকে অবিশ্বাস করছে আমাকে এতো অবহেলা করছে তাদের সাথে আমি কোনো যোগাযোগ রাখতে চাইনা। 
 
আন্টি -- সরি বাবা।
আমি -- ঠিক আছে আন্টি সমস্যা নাই।
-- আচ্ছা বাবা তুমি রেস্ট নাও আমি বাসাত যাবো আমার অনেক কাজ আছে। কোনো দরকার হলে নুপুর কে বলবে ঠিক আছে বাবা? ও এখানেই থাকবে।
-- আন্টি আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি আমি।
-- আরে বাবা কি বলছ তুমি এসব? আমাদের জন্যই তো তোমার এই অবস্থা। তুমি যদি ঠিক টাইমে না আসতে কি যে হয়ে যেতো। তোমার কাছে তো আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো সারাজীবন।
-- আন্টি এসব বলে আমাকে ছোট করবেন না। 
 
-- আচ্ছা বাবা ডাক্তার বলছে তোমাকে কয়েক দিন রেস্ট করতে তুমি রেস্ট নাও আমি আসি।
-- ঠিক আছে আন্টি।
তারপর আন্টি চলে গেলো, নুপুর আমার পাসে বসে আছে।
নুপুর -- আপনি এমন ঝুঁকি নিতে গেলেন কেন? যদি অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো তখন কি করতেন?
আমি -- কি আর হতো মরে যেতাম তাইত! সেটাই আমার জন্য ভালো হতো।
-- এসব কি কথা বলেন আপনি? আপনি আসলেই একটা অদ্ভুত মানুষ কিছু বুঝিনা কখন কি বলেন।
-- আমি এমনি। আচ্ছা আপনার ভাই কোথাই তাকে তো দেখলাম না আর আপনার বাবা!
-- আমার বাবা নাই। আর ছোট ভাই স্কুলে।
-- ওহ , বাবা মাই মানে?
 
-- আসলে আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মা আমাদের দেখাশোনা করে। বাবার অভাব কখনই বুঝতে দেয় নি তুবুও মাঝে মাঝে বাবার জন্য মন খারাপ হতো।
-- ওহ, সরি আমি। আমার জন্য আপনার মন খারাপ হলো। 
 
-- না না ঠিক আছে, আমার তো মা আছে আপনার তো তাও নেই। আপনি তো আমার থেকেও দুঃখী।
আমি আর কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলাম। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে আসলো। তারপর নুপুর নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিল। ওষুধ খাইয়ে দিল। আমি খাওয়া দাওয়া শেষ ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আর পাশে তাকিয়ে দেখি নুপুর ও ঘুমিয়ে আছে। মনে হয় মেয়েটা আমার জন্য ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারে নাই। মানুষ খুব অদ্ভুত হয় তাই না? যেখানে আমার আপন মানুষ গুলো আমাকে পর করে দিল। আর যারা ঠিক ভাবে আমাকে চিনেও না তারা আমার জন্য কষ্ট করছে। দুনিয়ায় টা সত্যি অনেক অদ্ভুত কখন কি হয়ে যায় কিছুই বলা যায় না।
চলবে ---------------------- 
 
বড় করে লিখতে ছেয়েছিলাম কিন্তু আর বড় করতে পারলাম না। আগামী পর্ব বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আসলে শরীর এখনও ঠিক হয় নাই তাও গল্প লিখছি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে হ্যাপি রিডিং।
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url