গল্পঃ বিচ্ছেদের পুনর্বাসন | Story: Biccheder Punorbason Full & Final

 - সকালে খেয়েছো??
- হুম খেয়েছি। আমি তোমার সাথে পরে কথা বলি। আমার ক্লাস আছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
- আচ্ছা ঠিকাছে। নিজের খেয়াল রেখো আর শোনো..
 
কামাল সাহেবের কথা শেষ হওয়ার আগেই সোমা ফোনটা কেটে দিয়েছে। সোমা কামাল সাহেবের স্ত্রী। কামাল সাহেবের বয়স ৩২, তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। তার স্ত্রী সোমার বয়স ২৪। পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ সোমার। ছাত্রী হিসেবেও বেশ মেধাবী।বিয়ের রাতেই কামাল সাহেবকে সোমা বলেছিল, সে ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। কামাল সাহেব শিক্ষক মানুষ, স্ত্রীর পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তিনি রাজি হয়ে যান। কামাল সাহেব সোমাকে খুব ভালোবাসেন। মেয়েটা মেধাবী হওয়ার সাথে সাথে খুব সুন্দরীও বটে। কামাল সাহেবকে সোমার সাথে বেমানান লাগে, একথা কামাল সাহেব জানেন বলেই নিজের সামর্থের বাইরে গিয়েও সোমার সব ইচ্ছে পূরণ করেন। 
 
তাই তো পরিবারের সবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ের একমাস পরেই তিনি সোমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেন। স্বামী হিসেবে সোমার যাবতীয় খরচ কামাল সাহেবই বহন করেন। সে থেকে দুবছর সোমা ঢাকায় আছে। কামাল সাহেব স্কুলে ছুটি পেলে মাঝে মাঝে দিন সাতেকের জন্য যান সোমার কাছে থাকতে। সোমার বাবার বাড়িও সিরাজগঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও সোমা ঈদ ছাড়া শশুড় বাড়িতে আসে না। এটা নিয়ে পরিবারের সবাই কথা তুললেও কামাল সাহেব স্ত্রীর ভালোবাসায় বিলীন হয়ে কোনোই উচ্চবাচ্য করেন না।
সোমার সাথে ফোনেও কথা খুব একটা হয়না কামাল সাহেবের। দু-একটা কথা বলেই সোমা ফোন কেটে দেয়। এতে কামাল সাহেবের কিঞ্চিৎ মন খারাপ হয় তবে রাগ হয়না কখনো। কামাল সাহেব তো বোঝেন, পড়াশোনা নিয়ে কত ব্যস্ত থাকে মেয়েটা।
 
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় কামাল সাহেব বেলকনিতে বসে ছিলেন। তখন তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে সোমার নাম দেখেই কামাল সাহেবের ঠোঁট ইঞ্চি দুয়েক প্রসারিত হয়ে হেসে উঠলো। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সোমা বললঃ কি করছো??
- এই তো বসে আছি। তুমি কি করছো??
- ক্লাস শেষ করে আসলাম একটু আগে শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। তাই শুয়ে আছি।
- আরাম করো।
- তুমি কি কাল আসতে পারবে??
 
- কাল??
- কাল এলেই ভালো হয়। তোমার সাথে কিছু কথা আছে। পারবে আসতে??
- আচ্ছা ঠিকাছে। আমি স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে কালই আসছি।
- আচ্ছা। তাহলে এখন রাখি। একটু ঘুমাবো এখন। কাল তো আসছো, সামনাসামনি কথা হবে।
কামাল সাহেবের মন এখন বেশ প্রফুল্ল। গত দুবছরে এই প্রথমবার সোমা তাকে ফোন দিয়ে ডেকেছে। কামাল সাহেব সকালেই বেরিয়ে পড়লেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। সোমার জন্য অনেক কেনাকাটাও করলেন।
কামাল সাহেব দরজার কলিং বেল বাজাতেই সোমা দরজা খুলল। 
 
সোমার রূপ আগের থেকে আরও কয়েকগুন বেড়ে গেছে। লাল রঙের সুতি শাড়িতে সোমাকে একদম দেবীমূর্তির মতো লাগছে। কামাল সাহেব আঁখি ভরে দেবী দর্শন করলেন। সোমা মুচকি হেসে বললঃ বাইরেই থেকে যাবে নাকি?? ভেতরে এসো। তোমার জন্যই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।
কামাল সাহেব ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে বললেনঃ সোমা তোমার যে কি একটা জরুরি কথা ছিল, সেটা বলো।
 
- ওসব পরে হবে। আমি নিজ হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি। খেয়ে বলো কেমন হয়েছে??
- রান্না অনেক ভালো হয়েছে সোমা, খাবারের ঘ্রাণ থেকেই বুঝতে পারছি।
কামাল সাহেব খুশিমনে খাবার শেষ করলেন। এতোদিন পর সোমা তার জন্য রান্না করেছে খুশি তো হবেই। খাওয়া শেষে কামাল সাহেব বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবলেন একটু জিরিয়ে নেবেন। ক্লান্ত শরীরে কামাল সাহেব শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়লেন। যখন ঘুম ভাঙলো তখন বেলা আর বেশি নেই। একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। কামাল সাহেব বিছানায় উঠে বসলেন। সোমাকে দেখা যাচ্ছে না, বোধ হয় বাড়িতে নেই। বিছানা থেকে নামার সময় কামাল সাহেবের চোখ পড়লো বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটার ওপর। টেবিলে একটা ছোট চিরকুট রাখা। কামাল সাহেব চিরকুট টা নিয়ে পড়লেন।
 
 
চিরকুটে লেখাঃ আমি একটু বাইরে গেলাম। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকি নি। সন্ধ্যা নাগাদ চলে আসবো।
কামাল সাহেব মুচকি হেসে চিরকুট টা আবার যথাস্থানে রেখে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। সোমার ফ্ল্যাটটা সাত তলায়। রাস্তায় মানুষ গিজগিজ করছে। বেলকনি থেকে মানুষগুলোকে পিঁপড়ের মতো দেখাচ্ছে। কামাল সাহেব কংক্রিটের বিল্ডিংয়ের মাঝে গোধূলি দেখছেন। গোধূলি শেষ হতেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নামলো। অন্ধকার নামতেই শহর আরও আলোকিত হয়ে উঠলো। গাড়ির পেছনের লাইটগুলোকে দেখে লাল জোনাকি পোকা মনে হচ্ছে। এমন সময় সোমা ফিরে এলো। 
 
কামাল সাহেব সোমাকে বললেনঃ তুমি ফ্রেস হয়ে নাও, আমি চা বানিয়ে আনছি। চা খেতে খেতে কথা হবে।
সোমা ফ্রেস হয়ে এসে বেলকনির ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসলো। কামাল সাহেব চায়ের কাপটা সোমার হাতে দিয়ে নিজে আরেকটা ইজিচেয়ারে বসে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেনঃ সোমা কথাটা তো বললে না?
- হুম বলবো এখন। কামাল, আমি মা হতে চলেছি।
কামাল সাহেব উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললেনঃ সত্যি? আমি বাবা হতে চলেছি। এটা তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন? আমার খুব খুশি লাগছে সোমা।
- কামাল, তুমি বুঝতে পারোনি আমার কথা। আমি বলেছি, আমি মা হতে চলেছি। আমি তো বলিনি,তুমি বাবা হতে চলেছো।
- মানে?
- মানে হলো এটাই যে, বাচ্চার বাবা তুমি নও। এটা আমার আর মারুফের বাচ্চা। 
মারুফ আমার বয়ফ্রেন্ড। 
 
কামাল সাহেব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। এসব কি বলছে সোমা?
চায়ের কাপটা কামাল সাহেবের হাত থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে কামাল সাহেব ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে বললেনঃ তুমি এতোবড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলে সোমা? আমি যে তোমাকে বড় ভালোবাসি।
 
- কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না কামাল। গরীর ঘরের মেয়ে ছিলাম বলে, ঢাকায় পড়াশোনা করার স্বপ্ন পূরণের জন্য তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম। নাহলে তোমার মতো একটা মধ্যবয়স্ক লোককে কে বিয়ে করবে? তুমি দেখেছো নিজেকে? তোমার আমার সাথে মানায়? 
 
আমি মারুফকে ভালোবাসি।স্মার্ট, হ্যানসাম, সুদর্শন ২৭ বছরের যুবক। কানাডায় ওর চাকরিও কনফার্ম হয়ে গেছে। মোটা মাইনেও পাবে। মূল কথা হচ্ছে, আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না। তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। সোজাভাবে দিয়ে দিলে তো ভালো আর না দিলে আমি বাঁকা পথে যাবো। তোমার নামে "ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স" এর কেস ঠুকে দেবো। ব্যাপারটা কি খুব ভালো হবে কামাল? 
 
তোমার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে আমি আর মারুফ বিয়ে করে কানাডায় সেটেল হয়ে যাবো।আমি এখন বাইরে যাবো। ফিরতে দেরি হবে।খাবার রাখা আছে খেয়ে নিও। রাতে আমি কাগজপত্র নিয়ে আসবো সইটা করে দিও। ঠিকাছে? আসি।
 
সোমা বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে গেল। কামাল সাহেব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। যাকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসলেন সে কি না তার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করলো! মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা কাপের টুকরো গুলো কামাল সাহেবের মনের অবস্থার জানান দিচ্ছে। তার বোধবুদ্ধি সব লোপ পাচ্ছে। ঘৃণায়, নিজের জীবনটাই শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। পুরুষ মানুষের নাকি কাঁদতে মানা।
 
ঘৃণা, দুঃখ-কষ্টে কামাল সাহেব সেই শত শতাব্দী থেকে চলে আসা প্রবাদকে মিথ্যে করে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন। কান্নাকাটির পর আস্তে আস্তে নিজেকে সামলে নিলেন কামাল সাহেব। বেলকনির মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা কাপের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে সোমার ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকলেন। সোমা ফিরলো রাত সাড়ে দশটায়। কামাল সাহেবকে শান্তভাবে সোফায় বসে থাকতে দেখে অবাক হলো কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে হাতে থাকা ফাইল থেকে কাগজ আর কলম বের করে কামাল সাহেবের দিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে বললঃ সই করে দাও।
 
কামাল সাহেব কোনো কথা বলে চুপচাপ সই করে দিলেন। সোমা অবাক হয়ে বললঃ তোমার কিছু বলার নেই??
- জোর করে ভালেবাসা হয়না তাই তোমাকে আমি আটকে রাখতে পারি না। তবে একটা কথায় বলবো, তুমি ভালোবাসা চিনলে না সোমা।
কথাটা বলেই কামাল সাহেব ঘর থেকে ব্যাগ নিয়ে সদর দরজার দিকে রওনা হলেন।
সোমা জিজ্ঞেস করলোঃ এতো রাতে তুমি কোথায় যাচ্ছো?
- তুমি এখন আর আমার স্ত্রী নও। তুমি এখন অন্যকারো বাগদত্তা। তাই তোমার সাথে এক ছাদের তলে থাকার অধিকার আর আমার নেই। তোমার ফেরার অপেক্ষাতেই ছিলাম। আমি রাতের ট্রেনেই ফিরে যাবো। আসি। ভালো থেকো।
 
কামাল সাহেব ফিরে আসার পর পরিবার/পরিচিত / অপরিচিত /অল্প পরিচিত সবার কটুক্তিই মুখ বুজে সহ্য করেছেন। সহ্য করা ছাড়া আর কি বা করতে পারেন তিনি। বাড়ি, স্কুল আর বিষন্নতা এই নিয়েই কাটলো দেড় বছর। দেড় বছর পর গ্রীষ্মের ছুটিতে বদলালো কামাল সাহেবের জীবন। 
 
অনেকদিন ধরেই কামাল সাহেব তার ছোট মামার বাসায় যাননি তাই এবারের গ্রীষ্মের ছুটিতে তিনি আর তার মা মিলে বেড়াতে যাচ্ছেন ছোট মামার বাড়ি। মামার বাড়িতে পৌছানের পর মামা কামাল সাহেব আর তার মাকে বিকালে বেড়াতে নিয়ে গেলেন তার পুরনো বন্ধুর বাড়ি। কামাল সাহেব ওখানে যাওয়ার পর জানতে পারলেন, আজ তার বিয়ে। তিনি খুব অপ্রস্তুত হয়ে, উঠে চলেই যাচ্ছিলেন কিন্তু মামাকে অনেক শ্রদ্ধা করেন বলে যেতে পারলেন না। এমন সময় ঘরে নিতুকে ( কামাল সাহেবের হবু স্ত্রী) নিয়ে আসা হলো। কামাল সাহেব শুধু এক পলক তাকালেন। মেয়েটিকে ঠিক খুব সুন্দরী বলা যায় না আবার কুৎসিতও বলা যায় না। তবে হরীণের মতো চোখ দুটোই অঢেল মায়া আছে। 
 
সেই মায়া কাটিয়ে কামাল সাহেবের আবার ভয় হলো, এই মেয়েরও তো বয়স কম সবে ২১। এই মেয়েও তাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো? ওমনি চোখের সামনে ভেসে উঠলো সোমার মুখ আর কানে বেজে উঠলো সোমার শেষ কথাগুলো। কামাল সাহেব তার মামাকে বললেন বিয়ের আগে তিনি নিতুর সাথে কথা বলতে চান। মামা একথা জানাতেই, নিতু কামাল সাহেবকে ছাদে নিয়ে গেল।
কামাল সাহেব নিতুকে বললেনঃ এ বিয়েতে তোমার মত আছে? আমার কিন্তু এর আগে বিয়ে হয়েছিল তুমি এটা জানো??
 
- সব জানি, আপনাকে কিছু বলতে হবে না। সব জেনেই আমি উপলব্ধি করেছি, আপনি মানুষটা অনেক ভালো। তাই বিয়েতে রাজি হয়েছি। আর কিছু জানতে চান?
কামাল সাহেব আর নিতুর বিয়েটা হয়ে গেল। তারা ছোটমামার বাড়িতে আরও দিন তিনেক থেকে বাড়ি ফিরে এলেন। বাড়ি ফিরে এসে একদিন মধ্যরাতে কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙলো কামাল সাহেবের। উঠে দেখলেন নিতু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
কামাল সাহেব ব্যস্ত হয়ে বললেনঃ কি হয়েছে নিতু?? কাঁদছো কেন??
- মায়ের কথা মনে পড়ছে। আমি বাড়ি যাবো।
 
কামাল সাহেব আবার ক্রন্দনরত এই তরুণীর প্রেমে পড়লেন। মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেনঃ তোমার বাড়ি তো এখান থেকে অনেক দূর। এতো রাতে কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে না। আমি তোমাকে কাল সকালে নিয়ে যাবো। ঠিকাছে? কাঁদে না লক্ষীটি। ঘুমিয়ে পড়ো, কাল নিয়ে যাবো।
বছর ঘুরতেই নিতুর কোল আলো করে এলো এক ছোট্ট রাজকুমারী। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কামাল সাহেবের দিন সুখেই কাটছে। স্কুলের অফিসিয়াল কাজে কামাল সাহেব দিন দশেকের জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ট্রেনের কামরায় বসে কামাল সাহেব কাগজপত্র দেখছিলেন। এমন সময় তার কানে এলো এক বহু পরিচিত নারী কন্ঠঃ কেমন আছো কামাল??
 
কন্ঠ অনুসরণ করে সামনের সিটে তাকাতেই দৃশ্যমান হলো তার প্রাক্তন স্ত্রী সোমা। সোমার সৌন্দর্য,স্বাস্থ্য দুটোই অনেক খারাপ হয়ে গেছে। কামাল সাহেব বিচলিত স্বরে বললেনঃ আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি কিন্তু তোমার এ অবস্থা কেন??
 
সোমা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে কাঁদতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বললঃ আমি ভালো নেই কামাল। তুমি চলে আসার পর কয়েক মাস আমার আর মারুফের মধ্যে সবকিছু ঠিক ছিল। আমরা বিয়ের তোড়জোড়ও করছিলাম কিন্তু একদিন মারুফ আমাকে কিছু না বলেই কানাডা চলে গেল, আর ফিরলো না। শুধু যাওয়ার আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল। মেসেজে লিখা ছিলঃ ও আমার সাথে থাকতে চাই না। তারপর আর ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে মারুফের এক বন্ধুর কাছ থেকে জানলাম, যে কোম্পানিতে ওর চাকরি হয়েছে ওই কোম্পানির মালিকের মেয়ের সাথে নাকি মারুফের অনেকদিনের সম্পর্ক ছিল। কানাডায় পড়াশোনা করার সময় ওর সাথে পরিচয় হয়েছিল মারুফের। ওই মেয়েটাকেই মারুফ এখান থেকে যাওয়ার পর বিয়ে করেছে।
- আর বাচ্চাটা??
 
সোমা চোখ মুছে বললঃ আমি বাচ্চাটা রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু মারুফ রাখতে দিল না। আমি তখন ওর ভন্ড মায়ায় অন্ধ ছিলাম তাই ফাঁদটা চোখে পড়েনি। আমাকে ক্ষমা করে দাও কামাল। আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। সেই অন্যায়ের শাস্তি আজ আমি পাচ্ছি।
- কেঁদে আর লাভ কি সোমা? যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার খুব কষ্ট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তোমার উপর রাগ হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাকে উত্তমটাই দিয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছি। 
 
আচ্ছা থাকো, আমার স্টেশন চলে এসেছে। আমি যাই।
ট্রেন থেকে নামার আগে কামাল সাহেব সোমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আমি তোমাকে বলেছিলাম সোমা, তুমি ভালোবাসা চিনলে না। তুমি সত্যিই ভালেবাসা চেনো নি, তুমি মিথ্যা মোহে মুগ্ধ হয়েছিলে। মোহ তো একদিন না একদিন ভাঙবেই।
 
সোমা ভেজা চোখে শুধু চেয়ে রইলো কামাল সাহেবের দিকে। কামাল সাহেব ট্রেন থেকে নেমে বাড়ির পথে রওনা হলেন।
....[ সমাপ্ত ]....
গল্পঃ বিচ্ছেদের পুনর্বাসন
লেখিকাঃ নাবিহা নুপুর

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url