বাঁকা চাঁদের মুচকি হাসি নীল আকাশের গায় | Baka Chader Mucki Hasi Neel Aka...

" মিতু বললো , আপনার দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি গিয়ে সিটে বসুন আর নিজের যত্ন নিবেন । মামলার সবকিছু সঠিক ভাবে ভেবে ভেবে কাজ করবেন প্লিজ প্লিজ । "
" সজীব বললো ঠিক আছে । "
" আর সবসময় যদি একা ভ্রমণ করেন তাহলে টিকিট সংগ্রহ করার সময় বলবেন পাশের সিটে যেন মেয়ে না থাকে । "
" কেন ? "
" আমি চাইনা দ্বিতীয় কোন মিতুর সৃষ্টি হোক কারণ আপনি এমন একটা মানুষ যার সংস্পর্শে আসলে ভালবাসতে বাধ্য হতে হবে । "
" হাহাহা হাহাহা হাহাহা , আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে আসি । "
সজীব বাসে উঠে গেল , কিছুক্ষণ পরে বাস ছেড়ে দিয়ে পিরোজপুরের দিকে রওনা দিল । মিতু সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর তার ছোট বোনকে খুঁজতে লাগলো । সজীব বাসের ভিতরে বসে বৃষ্টির নাম্বারে কল দিচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না । ৬ বার কল দিয়ে সে একটা মেসেজ লেখা শুরু করলো কারণ তাছাড়া উপায় নেই ।
বৃষ্টি ,
পাঁচ বছর আমি তোমার জন্য না দেখে না জেনে স্মৃতি নিয়ে অপেক্ষা করেছি । কখনো কোন মেয়ে সজীব এর মনের মধ্যে স্থান করতে পারে নাই আর হয়তো পারবেও না । আগামী পঞ্চাশ বছর পরও এই মনের মধ্যে তোমার যায়গা টা এখনকার মতোই থাকবে । আমাকে তুমি ভুল বুঝলে যেটা মারাত্মক কষ্ট দিয়েছে আমায় ।
বারবার ভুল বুঝে নিজে কষ্ট পাচ্ছো আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছ এটা কি ঠিক ? বিশ্বাস করতে পারো কারণ পৃথিবীতে আর যা কিছু করি না কেন ! তোমাকে রেখে দ্বিতীয় কাউকে ভালবেসে আপন করা কিংবা স্বপ্ন দেখা এ জীবনে আর সম্ভব না ।
কাব্যসজীব....
বৃষ্টি এতক্ষণ ইচ্ছে করে রিসিভ করে নাই , প্রথমত সে অফিসের মধ্যে তাই এখন কথা বলে শান্তি পাবে না । দ্বিতীয়ত সে আকাশ পরিমাণ অভিমান করে আছে সজীব এর সাথে । কিন্তু মেসেজ পড়ে হঠাৎ করে একটা হাসি এলো মুখে যেই হাসি সচারাচর বৃষ্টি নিজের মাঝে দেখতে পায় না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে লিখলো , " দুপুর একটা বিশ মিনিটে কল দিও তখন কথা হবে , সাবধানে যেও আর বাড়ি পৌঁছে একটা কল দিও । "
" সজীব শুধু লিখলো , আচ্ছা ঠিক আছে । "
|
|
পিরোজপুর এসে বাসা পরিবর্তন করে সজীব অন্য একটা লোকাল বাসে উঠলো । এ বাসে উঠে যেতে হবে জিয়ানগর তারপর সেখান থেকে মোটরবাইক নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি । গাড়ি ছাড়তে এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে ছোট্ট একটা ছেলে দৈনিক পত্রিকা বিক্রি করছে । সজীব ১০ টাকা দিয়ে একটা "প্রথম আলো" পত্রিকা কিনল এরপর জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো । হঠাৎ করে মোবাইল বেজে উঠলো , মোবাইল হাতেই ছিল তাই স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার । প্রথম বার কল বেজে কেটে গেল দ্বিতীয় বার আবার কল এলো ।
" সজীব রিসিভ করে বললো , হ্যালো আসসালামু আলাইকুম । "
" ওপাশ থেকে বললো , ওয়া আলাইকুম আসসালাম আমি মিত বলছিলাম । "
" মানে কি ? "
" রাগ করবেন না প্লিজ , আসলে আমি ছোট বেলা থেকে ভাগ্য খারাপ নিয়ে বড় হয়েছি । আপনার সাথে দেখা এ জীবনে নিয়ে না ও হতে পারে তাই খুব ভয়ে থেকে আপনার নাম্বারটা নিলাম । "
" ভাগ্যে যদি থাকে তাহলে নাম্বার থাকলেও দেখা হবে আর না থাকলেও দেখা হবে । "
" আমি সেটাই পরীক্ষা করতে চাই । "
" কোনটা ? "
" নাম্বার রেখে দিলাম ঠিকই কিন্তু নাম্বারের সাহায্য নিয়ে আমি চট্টগ্রামে দেখা করবো না । মাঝে মাঝে কথা বলবো তবে আকস্মিক যদি দেখা হয়ে যায় সেই অপেক্ষায় থাকবো আমি । "
" দেখো মিতু , আমাদের জীবনে কত বিচিত্র দৃশ্যের ঘটনা ঘটে চারিদিকে । তুমি তোমার স্মৃতির পাতা উল্টে দেখো , অনেক প্রিয় মানুষ তোমার জীবন থেকে অনেক দুরে চলে গেছে । একসময় যারা খুব আপনজন ছিল তারা আজকে যোগাযোগ না হবার জন্য কেমন অচেনা অপরিচিত হয়ে গেছে । "
" তবুও কিছু কিছু মানুষের সাথে কথা বলে আনন্দ বেড়ে যায় , কথা বলা শেষ করে একা একা হাসি পায় এ এক অদ্ভুত অনুভূতি । "
" পরে কথা হবে আমি বাসের ভিতরে । "
"আচ্ছা ঠিক আছে বাসায় পৌঁছে একটা কল দিও ।"
" আচ্ছা । "
|
|
সজীব যখন বাড়িতে পৌঁছেছে তখন সাড়ে বারোটার সামান্য বেশি বেজে গেছে । সজীব এর বাবা একটু আগে বাজার থেকে ফিরেছেন কারণ তিনি বড় বাজারে গেছিলেন ছেলে আসবে তাই ভালো কিছু বাজার করতে । নিজের বাড়িকে আজকে সজীব এর কাছে অপরিচিত মনে হয় কারণ এগারো মাস পরে বাড়িতে এসেছে সজীব । এর আগে একটানা এতদিন বাড়ি ছেড়ে থাকে নাই কিন্তু এবার তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে থাকতে হয়েছে । সজীবদের বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই তাই মাহি একটা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে আর সজীব তার মায়ের সঙ্গে কথা বলছে । সজীব এর মা কথা বলার মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে আবার একটু পরে চোখের পানি মুছে ফেলে । সজীব এর বাবা কিছু পাকা পেয়ারা কিনে এনেছে সেগুলো কাটছে ।
" সজীব এর মা বললো , তুই বসে বসে পেয়ারা খা আমি রান্না করতে যাচ্ছি এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে । কি করবো বল ? তোর বাবা বাজার থেকে মাত্র এসেছে তাই তো দেরি হয়ে গেল । ও মাহি তোর ভাইয়াকে বাতাস কর ভালো করে । "
সজীব এর বাবা কাটা পেয়ারা ওদের দুই ভাইবোনের সামনে দিয়ে বড় একটা সিলভারের বালতি নিয়ে মাঠের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল । সজীবদের তিনটা গরু আছে এখন সেই গরু গুলোকে রোদের মধ্যে থেকে ছায়ায় আনতে হবে । পানি খাইয়ে তারপর ছায়ায় বেঁধে রেখে আসবেন তিনি পরে বিকেলে রোদ কমলে আবার মাঠে নিয়ে যাবেন ।
" তারপর তোর পড়াশোনা কেমন চলে মাহি ? "
" জ্বি ভাইয়া ভালো , অনেক ভালো চলে । "
" গ্রামের বাড়িতে অনেক দিন পরে এসে পরিবেশ টা কেমন যেন অচেনা অপরিচিত মনে হয় । "
" গ্রামের মানুষ গুলো আরো বেশি অচেনা হয়ে গেছে ভাই , সবাই এখন আমাদের খারাপ চোখে দেখে । "
" কেন ? "

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url