আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামী সংগীত | Tumi Asmane Thako Provu | Kamrul Hasan Abir

আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামী সংগীত | Tumi Asmane Thako Provu | Kamrul Hasan Abir

সকাল আটটায় আমার ঘুম ভাঙল। আমার পাশের বালিশটা তখনও খালি পড়ে আছে। উঠে বারান্দার দিকে এগিয়ে গিয়ে গ্লাসটা ঠেলে দেখলাম ডাক্তার অর্নব সেখানে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। চোখের চশমাটা তখনও চোখেই আছে। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে আসলাম৷ ফ্রেশ হয়ে ভাবলাম বাবাকে দেখে আসি। বাবার রুমে এসে দেখলাম তিনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন। তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। এ কয়দিনে বাবার চেহারা অনেকখানি ভেঙে গেছে। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে কতটা ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার বাবাকে এভাবে দেখতে পারছি না। জীবনে এ একজন মানুষ ছাড়া আর কে আছে আমার। মুহূর্তের জন্য নিজেকে খুব দূর্ভাগা মনে হলো। বাবার যদি কিছু হয়ে যায় এত বড় পৃথিবীতে আমি মরে গেলে আমার জন্য কাঁদার কেউ থাকবে না। কেউ না!
এমন সময় মনে হলো বাবা আমার হাত স্পর্শ করেছেন। হেসে বললেন, "কীরে কখন এলি?"
"এই তো বাবা একটু আগে। তোমার শরীর এখন কেমন?"
"আগে থেকে ভালো লাগছে। তুই চিন্তা করিস না।"
"তুমি লুকাচ্ছো নাতো বাবা?"
"একদম না মা।"
বাবার হাত আমার মুঠোয় বন্দী করে বললাম, "বাবা তুমি তো জানো তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। তুমি আমার কাছে কিছুই লুকোবে না।"
"কথা দিচ্ছি লুকাব না পাগলি মেয়ে আমার। এখন বল তো আমার উপর রাগ কমেছে?"
"স্যরি বাবা। সেদিন রাগের মাথায় তোমার সাথে উচ্চ শব্দে কথা বলে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও?"
বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, "তোর কোনো দোষ নেই মা। তুই আজকে হয়তো বুঝতে পারছিস না। কিন্তু একদিন ঠিক বুঝতে পারবি আমি তোর ভালোর জন্যই এটা করেছি। অর্নবকে আমি চিনি সে খুব ভালো মানুষ। তোকে কখনো খারাপ রাখবে না।"
বাবার কথা শুনে হাসার চেষ্টা করলাম। ডাক্তার অর্নবকে সাথে আমার কী কথা হয়েছে সেসব কিছুই বললাম না। শুধু শুধু বাবাকে চিন্তায় ফেলে কী লাভ। নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কাল সারারাত ডাক্তার অর্নবের কথা মেনে নেয়া ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। আমাদের বাবা-মেয়ের কথার মাঝখানে হঠাৎ ওহি তাড়াহুড়ো করে এসে বলল, "ভাবী সাহেবা বাবা ডাকছেন তোমায়। চলো তাড়াতাড়ি।"
ওহির সাথে চলে এসে দেখলাম আমার শ্বশুর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে বললেন, "এদিকে এসো মা। তোমার শাশুড়ি এ মুহূর্তে এটম বোম হয়ে আছে। যে কোনো সময় ফাটতে পারে। তুমি তাড়াতাড়ি করে তার সাথে রান্নাঘরে যাও। প্রথমে তোমাকে বকাবকি করবে কিংবা কথা বলবে না৷ তাও তুমি তার পিছুপিছু থাকবে। দেখবে এভাবে সে মোমের মতো গলে যাবে।"
আমি ইতস্ততভাবে বললাম, "কিন্তু বাবা আমার ভয় করছে।"
"শোনো মা ভয়ের কিছু নেই। সাহসী হয়ে যাও বীর হয়ে ফিরে এসো।"
ওহি বলল, "বাবা তোমার ফিল্মি ডায়লগ বাদ দিবে?"
বাবা বললেন, "তুই চুপ থাক পাকা মেয়ে।"
ওহি রাগ করে চলে গেল। বাবা আমার মাথায় হাতে রেখে বললেন, "শোকর আল্লাহর কাছে তোমাকে আমার ঘরের লক্ষী করে পাঠিয়েছেন। যাও মা।"
★★★
ভয়ে ভয়ে মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালাম। তিনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাজে মন দিলেন। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর আমি বললাম, "আমি আপনাকে সাহায্য করি আন্টি?"
তিনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি উনার মাথার উপর আইফেল টাওয়ার ভেঙে ফেলেছি।
তিনি রাগী স্বরে বললেন, "এমন ভান করে আছো যেন কিছুই জানো না। এদিকে তো ঠিক আমার ছেলেকে টোপে আটকে ফেলেছো। শোনো মেয়ে আমি যখন রান্নাঘরে থাকব তখন তুমি আসবে না। তোমাকে দেখলে আমার কষ্ট হয়। অনেক কিছু মনে পড়ে যায়।"
আরও কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে রুমে চলে আসলাম। আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমার দোষটা কোথায়! কেন তিনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছেন!
উপরে উঠে আসতেই দিদানের রুম হয়ে ডাক্তার অর্নবের রুমে যাচ্ছি এমন সময় দিদানের কান্নাভেজা গলা আমাকে থামতে বাধ্য করল। উনার রুমে ঢুকতে যাব এমন সময় দরজার ফাঁকে দিয়ে দেখল তিনি দেয়ালে আটকানো বড় একটা ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বলছেন, "আমি অনেক চেষ্টা করব তাকে ভালো রাখার। জানি না কতটুকু পারব। তুমি দেখছো তো সব?"
অবাক হলাম আমি। এভাবে একটা ছবির সামনে কথা বলছেন কেন তিনি। আর কার কথাই বা বলছেন? ভেতরে যেতে চেয়েও গেলাম না। চুপচাপ রুমে চলে আসলাম এমনিতেও মনটা খুব খারাপ আমার। এই ডাক্তারের মা অকারণে কতগুলো কথা শুনিয়ে দিলেন আমায়। রুমে এসে দেখলাম তিনি তৈরি হচ্ছেন বোধহয় হাসপাতালে যাবেন। আমি তাকে পাশ কাটিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। চুপচাপ বসে রইলাম। হঠাৎ তিনি এসে বললেন, "আমি হসপিটালের যাচ্ছি। তোমার প্রয়োজনীয় কিছু লাগলে বলো আসার সময় নিয়ে আসব।"
তখন আমার রাগে ক্ষোভে বিরক্ত লাগছিল। তার উপর উনার কথা শুনতে মোটেও ভালো লাগছিল না। বললাম, "এই শুনুন আমি কী আপনাকে ভুলিয়ে বিয়ে করেছি নাকি? আপনার মা এসব কেন বলছেন বলুন তো?"
সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "কিছু মনে করো না। আমি মাকে বুঝিয়ে বলব, তুমি আমাকে ভোলাবার মতো মেয়েই নও।"
উনার কথাটা কেমন অদ্ভুত শোনালো। মনে হলো আমি অমন মেয়ে নই বলে তার দুঃখ হচ্ছে। সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি চুপচাপ অনেকটা সময় ধরে বসে রইলাম। এখানে কার সাথে কীভাবে চলব কিছু বুঝতে পারছি না আমি। ফোনটা হাতে নিয়ে বসলাম খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। যখন আমার কষ্ট হয় তখন আমি ভালো গল্প লিখতে পারি। একটা গল্প লিখে আমার পেজে ঢুকে পোস্ট করে দিলাম। পোস্ট না করতেই সাথে সাথে অনেক রিয়াক্ট আর কমেন্ট আসতে লাগল। লেখালেখিতে আমার বেশ সুনাম আছে। ভালো লেখি বলেই সবাই বলে। আজ পর্যন্ত আমার চারটা বই বের হলেও কেউ আমার পরিচয় জানে না। এ বিষয়টা আমার কাছে দারুণ লাগে। কতজন ইনবক্সে পরিচয় জানতে চায়। তাদের ম্যানেজ করা একটু কঠিন হয়ে যায় তবে ভালো লাগে।
★★★
সারাদিন ধরে ওহির সাথে দিদানের সাথে কাটানোর পর সন্ধ্যা হতেই নিজের রুমে আসলাম। অন্তত ছয়মাসের জন্য হলেও অর্নবের ঘরটা আমার বলে নাকি দাবি করা যায়। রুমে এসে ফোনে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের ' কৃষ্ণপক্ষ' উপন্যাসের বাকিটুকু পড়তে লাগলাম। আমার সবগুলো বই বাড়িতে। এখানে নিয়ে আসলে ভালো হত। অন্তত পড়ে সময় কাটানো যেত। উপন্যাসটা পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারলাম না। ঘুম ভাঙল ওহির ডাকে। খেতে ডাকছে আমায়। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম ওই মোটা ফ্রেমের চাশমিশ ডাক্তার এসেছে কিনা
কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না। ফ্রেশ হয়ে নিচে
আসতেই দেখলাম তিনি দিব্বি বসে বসে খাচ্ছেন। আর আমি খামোখা সারাদিন তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি বলে নিজেকে অপরাধী ভেবেছি।
খাবার শেষে বাবাকে শুইয়ে দিতে গেলাম। আমাদের যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলেন আমার চোখে চোখ পড়তেই বাবাকে বললেন, "আপনার শরীর এখন কেমন? নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে নাতো?"
বাবা মৃদু হেসে বললেন, "না বাবা এখন ঠিক আছি।"
বাবার প্রেশার মেপে দেখলেন। বললেন, "এখন নরমাল আছে। রাত করবেন না ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনার জন্য ঘুম খুব প্রয়োজন।"
আমাকে উদ্দেশ্য করে খুব স্বাভাবিকভাবে বললেন, "নিরা বাবাকে ঘুমাতে দাও।"
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। বাবাকে শুইয়ে দিয়ে তার সাথে বেরিয়ে এলাম। আমি আগে উপরে উঠছি উনি আমার এক সিঁড়ি নিচে আসছেন। রুমে এসে চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলেন। ভেবেছি আমার সাথে হয়তো কথা বলবেন তার কিছুই হলো না।
আমিও চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। ফোন হাতে নিয়ে পেজে ঢুকলাম। হঠাৎ একটা মন্তব্যে চোখ আটকে গেল। লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি। মন্তব্যটা এরকম যে, "আপনার লেখাগুলো বরাবরই আমায় টানে। আজকের গল্পটা যেন আমার নিজের জীবনের টুকরো কিছু অংশ গুছিয়ে লিখেছেন আপনি। এতটা বাস্তব করে কীভাবে লিখেন?"
মন্তব্যকারির নাম আয়াজ আহম্মেদ অর্নব। তার আইডিতে ঢুকে দেখলাম। প্রোফাইলে একটা ফর্সা নিখুঁত সুন্দর একটা মুখ। মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালেও যেন চোখদুটো কথা বলছে। ঠোঁটের কোণে হাসি চিকচিক করছে। আবারও অবাক হলাম আমি। ডাক্তার অর্নব হাসতেও জানে! তার চেয়ে বড় কথা সে এতদিন এত দারুণ সব মন্তব্য করত আমার গল্পে! আমার লেখার ফ্যান সে! অথচ আমি চিনতাম না তাকে। নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল! সব যেন গোলকধাঁধা লাগছে।
চলবে
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url