হঠাৎ প্রেম অনেক ভালবাসা | HOTAT PREM ONEK VALOBASHA | Purnima Eid Natok ...

হঠাৎ প্রেম অনেক ভালবাসা | HOTAT PREM ONEK VALOBASHA | Purnima Eid Natok ...

শেফালী এক হাতে আজিজুলের কলার ধরে আরেক হাতে একটা চকচকে দা তুলে চোখ বড় বড় করে বললো, ৩/৪ মাস ধইরা লক্ষ্য করতেছি তুই কারনে অকারণে আমার দোকানে আসতেছস, চুরি করে আমার পিছা করস কি মনে করস আমি কিছু বুঝি না। বল তোর উদ্দেশ্য কি? কুনো খারাপ নিয়ত থাকলে আইজই(আজই) তর কল্লা নামাইয়া দিমু। রমিজ ভাই এর বন্ধু বইলা এতদিন ভদ্রতা করছি। আর না। বল...
আজিজুল ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছে সে কোন রকমে বললো না না কসম আমার কুনো খারাপ উদ্দেশ্য নাই।
শেফালী বললো, তাইলে আমার পিছে ঘুরস ক্যা?
আজিজুল মনেমনে ভেবে নিলো এই সুযোগ সে একটু সাহস সঞ্চয় করে বললো, দেখো শেফালী আমি কুনো ভনিতার মইধ্যে যামু না কল্লা নামাইতে চাইলে নামাও তারপর ও কমু এতদিন কইবো কইবো কইরাও সাহস কইরা কইবার পারি নাই। আজ ধরা যহন(যখন) পইড়াই গেছি না কইয়া যামু না যা আছে কপালে। আমি তুমারে পরথম(প্রথম) যেইদিন দেখছি সেই দিনই তুমার দিওয়ানা হইছি। ভালোবাইসা ফালাইছি। তুমার তেজ, তুমার রুপে পাগল হইছি।
শেফালী দা তুলে হুংকার দিয়ে বললো, কি বললি তুই... বুইড়া বেডা... ভালোবাসা...দেওয়ানা... ইয়ার্কি মারার আর জায়গা পাস না.. আজ তরে কাইটাই ফালামু.. ফাজলামো করস আমার লগে... তোর উদ্দেশ্য খারাপ আমি আগেই বুঝছি।
আজিজুল তোতলাতে লাগলো, না.. সত্য কইতেছি আমার কুনো বদ মতলব নাই আমি তুমার লগে দুইদিনের পিরিত না আমি তুমারে বিয়া করবার চাই। সারাজীবন তুমার লগে থাকবার চাই।
শেফালী বললো, ওরে শয়তান ঘরে বৌ থুইয়া তুই আইছোস আমারে বিয়া করবার খাড়া আজ তরে মাইরাই ফালামু।
আজিজুল কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, হ ফালাও মাইরা ফালাও আমার জীবনে তো আর কিছু নাই। মায়ে বাপে জোর কইরা এক বিয়া দিছিলো। দেখা গেলো সেই বেডি বাজা। বেডিরে বিয়া কইরা আজ আমার জীবন ছারখার। আমার কি কুনো পছন্দ হইতে পারে না। আমার কি সখ আহ্লাদ নাই।
শেফালী এত সময় রাগে তুই তোকারি করছিলো সে দা নামিয়ে একটু নরম স্বরে বললো, কি বলেন, আপনের বৌ বাজা?
আজিজুল আরও বেচারা মুখ করে বললো তয় কি কইতাছি। আমার কত সখ আছিলো আমার একটা পুলা হইবো। আব্বা আব্বা কইরা ডাকবো। আমি ঘাড়ে কইরা তারে সারা গ্রাম বেড়ামু। বৌ বাচ্চা লইয়া সুখের ঘর বানামু। কিন্তু আমার নসিবে তো তা নাই আছে দাও এর কোপ মারো মারো মাইরা ফালাও। এমুন জীবন থাকার চাইতে না থাকন ভালা। ভালোবাসার মানুষের হাতে মরন হইলেও শান্তি আছে। ইমোশনাল কথা গুলো বলে আজিজুল নাকি কান্নার অভিনয় করছে আর মনে মনে ভাবছে একবার বস করি এরপর তরে ঠান্ডা কইরা দিমু। আমার কথায় উঠবি বইবি।
শেফালী বললো আহারে আপনের জীবন ডা তো সত্যই খুব দুঃখের মনে হইতেছে, তা আপনি যে আমারে বিয়া করবার চান আপনের বৌ বা বাড়ির লোক কিছু কইবো না? আমারে মাইনা লইবো?
আজিজুল উত্তেজিত হয়ে বললো, নিবো মানে তুমারে মাথায় তুইলা রাখবো। আর আমার আগের বৌ এর লগে আমার আর কুনো সম্পর্ক নাই। তারে তো আমার ঘরেও জায়গা দেয় নাই। আলাদা থাহে।
শেফালী আঁতকে উঠে বললো, তালাক দিছেন?
আজিজুল বললো, সে এক ইতিহাস তুমারে কুনো এক সময় সব বিস্তারিত কমুনে তয় এইটুকুন জাইনা রাখো তার লগে আমার কুনো সম্পর্ক নাই। ৩/৪ মাস তার মুখ ও দেখি নাই। আমার দুঃখের কাহিনী শুনলে তুমার চক্ষু ভইরা আইবো।
শেফালী বললো, আচ্ছা আচ্ছা যান অহন। আমার ম্যালা কাজ পইড়া আছে।
আজিজুল উৎসুক হয়ে বললো এই ভাবে একা ফালাইয়া চইলা যাইবা? কুনো উত্তর দিলা না?
শেফালী মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, উউউহ্ আইছে আমার উত্তর নিতে। নরম কইরা কথা বলছি দেইখা মাথায় চইড়া বইছে এক্কেরে। যান ভাগেন বলে শেফালী হাটা দিলো।
মইনুল ও সোনিয়ার একটা ছেলে হয়েছে। তারা বাড়িতে ফিরেছে। বংশের প্রথম ছেলে দেবার জন্য গর্ব আর অহংকারে তাদের মাটিতে পা পড়ে না। সোনিয়া অহংকার করে বলে তার নিয়ত ভালো ছিলো মনে মনে অনেক মানত ছিলো তাই আল্লাহ তাকে ছেলে দিয়েছেন।
জাহানারা একদিন মনোয়ারাকে বললেন, পুড়ালি তো নিজের কপাল নিজে। তোকে হাজার বার কইছিলাম আল্লাহর কাছে খাস দিলে একটা পোলা চা। আমার কথা তো শুনবি না। আজ একটা পোলা হইলে তোর কপাল এ্যামনে পুড়তো না তার উপর হাসপাতালে যাইয়া দুনিয়ার টেকা খরচা কইরা সর্বনাশ কইরা আইলি। ডাক্তোরেরা এক একজন জল্লাদ। হেরা মাইনসের ভালো করবার নামে সর্বনাশ কইরা দেয়। টেকার জন্য কি না করে মানুষ! আরেক জনার কপাল পুড়াই। হেরা কি আল্লা খোদার ভয় করে না!
মনোয়ারা ভেবে পাই না তাকে কেন দোষ দেওয়া হয়। সে নিজ থেকে তো যেতে চাইনি হাসপাতালে। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। অপারেশন হবে সেটাও তাকে জানানো হয়নি। কিন্তু সবাই তাকেই সবকিছুর জন্য দোষারোপ করে। টাকার খোটার কথা সে এতবার শুনেছে তার কোন হিসাব নেই। ক্ষমতা থাকলে টাকা গুলো ফিরিয়ে দিত। মনোয়ারা শারীরিক ভাবে এখনো বেশ দূর্বল। আগের মত কাজ করতে পারে না। সবসময় অসুস্থ লাগে, মাথা ঘোরে। পেটের মধ্যে থেকে থেকে ব্যাথা করে। কেমন যেন একটা খারাপ লাগে। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। সে কাউকে কিছু বলে না। এমনিতেই খোঁটা শুনতে শুনতে জান শেষ আবার অসুস্থতার কথা বলতে তার খুব সংকোচ হয়। সবাই ভাবে স্বামী থেকে আলাদা হবার কারনে তার এই দশা।
মাজেদুল আর জাহানারাও খুব খুশি পোতা ছেলে পেয়ে। সোনিয়া ছেলের যত্ন নিয়ে বাড়াবাড়ির চুড়ান্ত করে। যেন একমাত্র সেই বাচ্চা পয়দা করেছে। ছেলে বলে জাহানারা ও কিছু বলেন না। ছোট বাচ্চাটির কাছে মায়া যদি কাছে আসে কখনো সোনিয়া তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। আজিজুল আর মনোয়ারা আলাদা হবার পর মনোয়ারার প্রতি অবহেলা আরও অনেক গুন বেড়ে গেছে সবার। মনোয়ারাকে এখন আর বৌ হিসেবে নয় কাজের লোক হিসেবে ট্রিট করে সবাই। রকিব অনেক বার প্রতিবাদ করেছে কিন্তু তার কথার মূল্য কে দেবে। উল্টো তাকে অপদস্ত করা হয়।
আজিজুলের থেকে আলাদা হবার পর মনোয়ারা একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। সে আগেও কম কথা বলত এখন একে বারে চুপচাপ হয়ে গেছে। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেওয়া গেলে সে তাই করে। মনোয়ারা খুব ভালো করে জানে আজিজুলের দৈনন্দিন রুটিন। সে কখন ঘুম থেকে ওঠে কখন ঘুমায় কখন বাড়িতে থাকে কখন বাহিরে যায় এত বছরে সব তার জানা। সে নিজেকে সেই হিসেবে তৈরী করে নিয়েছে। সে সবসময় চেষ্টা করে যেন তার সামনে না পড়তে হয় কখনো। ভোর বেলা আজিজুল ঘুম থেকে ওঠার আগে সে বাহিরের কাজ সেরে নেয় এরপর রান্না ঘরে ঢোকে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হলে নিজ ঘরে ফিরে যায় আর না হলে যতক্ষণ আজিজুল বাড়িতে থাকে সে বের হয় না। খাবারদাবার কুলসুম খালাকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। আজিজুল বাড়িতে থাকা অবস্থায় সে বের হয় না আর খুব প্রয়োজনে হলে একহাত ঘোমটা টেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ সেরে সরে পড়ে। আজিজুল ও মনোয়ারার একেবারেই দেখা সাক্ষাৎ হয় না।
জাহানারা নিজে বয়স ও শারীরিক নানান সমস্যা দেখিয়ে কোন কাজে হাত দেয় না। সোনিয়া সারাক্ষণ তার ছেলেকে নিয়ে আছে আর মনোয়ারা ও কুলসুম কে এটা করে দাও ওটা করে দাও অর্ডার করে করে অতিষ্ঠ করে দেয়। একটু খানি লেট হলে বাড়ি শুদ্ধ মাথায় তোলে। নানান কথা শোনায় তার বাপের বাড়িতে নাকি সবসময় দুইজন মানুষ তার জন্য থাকত। অর্ডার করা মাত্র কাজ হয়ে যেত সাথে সাথে। কত আরাম কত যত্নে ছিলো সেখানে সে। এখানে এসে অবহেলিত হচ্ছে। তার ছেলে হয়েছে বলে সবাই নাকি তাকে হিংসা করছে ইচ্ছে করে সবকিছু দেরি করে দেয়। তার ছেলের কিছু হলে সবাই কে দেখে নেবে ইত্যাদি।
একদিন রকিব বিরক্ত হয়ে বলেছিলো, ওখানে অতই যখন ভালো ছিলেন তাহলে এখানে অবহেলিত হতে এলেন কেন? ওখানেই নিশ্চিন্তে আরামে আয়েশে থাকতেন।
এ কথা শোনা মাত্র তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এত বড় সাহস। সম্পর্কে বড় ভাবিকে অপমান করে। সে কেন বাপের বাড়িতে পড়ে থাকবে তার নিজ বাড়ি ফেলে। এত বড় অপমান! সোনিয়া বড়লোকের মেয়ে বলে তাকে কেউ সহ্য করতে পারে না। রকিব বড় ভাবির গোলাম তার জন্য দরদ উথলে ওঠে। তার সাথে কিসের এত খাতির সব সে বোঝে। সোনিয়া কে অপমান করা মানে মইনুলকেও অপমান করা৷ তাকে ঘর জামাই হয়ে থাকার কথা বলছে ওর এতবড় সাহস। মইনুল দূরে থাকলে তার ভাগের জিনিস লুটেপুটে খেতে সহজ হবে। মইনুল তেড়ে তেড়ে মারতে গেলো রকিবকে কয়েকবার। সোনিয়া নাকিকান্না শুরু করলো সে বড়ঘরের মেয়ে এটা কি তার দোষ? তার ভুল হয়েছে ছোট ঘরে বিয়ে করা। এখানকার গন্ড মূর্খ লোকজন ভদ্রতা জানেনা। এরা বয়স মানছে না, সম্পর্ক মানছে না যে যেমন পারছে তাকে অপমান করছে। সে তো কারো কোন ক্ষতি করেনি। ইত্যাদি ইত্যাদি.....
আজিজুল বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাড়িতে ফিরলো। ডাকু রানীর সাথে মনের কথা বলতে পেরে সে খুব আনন্দিত। কয়েকমাস সে তার পিছে পিছে ঘুরেছে। মাইয়াডা একা থাকে। গ্রামে গঞ্জে একা থাকা চাট্টিখানি কথা না। তারে এলাকার সবাই জমের মত ভয় পাই। কেউ তারে নাড়ে না। একা চা এর দোকান চালাই কত শত লোক আসে। শেফালী চা এর দোকান দেওয়ায় পাশের দোকান লুৎফরের চা এর ব্যাবসায় ভাটা পড়েছে। সে একমাত্র শেফালীর শত্রু তবে সেও শেফালীকে খুব ভয় পাই। তার সাথে মাঝে মধ্যেই ক্যাচাল বাঁধে শেফালীর তবে লুৎফর পেরে ওঠে না। শেফালীর চা এর স্বাদ অনেক ভালো। শেফালীর দোকানে সবসময় ভীড় থাকে সবাই সম্মান দিয়ে চলে। চারিত্রিক দিক দিয়ে ও বেশ ভালো। একদিক দিয়ে সুবিধা হইছে তার পরিবারের কেউ তার লগে থাকে না। তারে একা পটাইয়া বিয়া ডা সাইরা ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। পরিবার থাকলে নানান বাঁধা আইতো। তাছাড়া আজিজুলের ব্যাপারে খোঁজ খবর ও নিত। ২ মাইয়ার বাপের লগে কেউ বিয়া দিবার রাজি হইতো না। তার উপ্রে ডাকাত পরিবার। তারে কাইটাই ফালাইতো। কুনো রকমে শেফালীরে পটাইয়া একবার নিকা সাইরা ফালাইতে পারলেই হইছে। কেউ আর কিছু কইবার পারবো না। মাইয়াডার যা তেজ সাথে ভরা যৌবন আজিজুলের খুব ভালো লাগে। এইরকম একটা মাইয়া পাইলে জীবন স্বার্থক।
মনোয়ারা মায়া আর পরীকে উঠানে পাটি বিছিয়ে বসিয়ে দুজনকে খাওয়াচ্ছিলো। আজিজুলের সাড়া পেয়ে সে তড়িঘড়ি করে দৌড়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেল। এমন সময় সাধারণত আজিজুল বাড়ির বাহিরে থাকে।
আজিজুল বাড়িতে ঢুকে দুই মেয়েকে দেখতে পেল। মন মেজাজ ভালো থাকায় সে তাদের কাছে বসলো। পরীকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো। পরী খিলখিল করে হাসছে। মায়া বললো, আব্বা আজকে আপনারে খুশি খুশি লাগতেছে। আজিজুল মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো বাহ্ বা তুই তো দেখি ম্যালা কিছু বুঝতে শিখা গেছোস।
মায়া বাবার থেকে ভালো ব্যবহার খুব কম পেয়েছে। সে বাবার নরম ব্যবহারে খুশি হয়ে বললো, আব্বা আমি অহন সবার নাম লিখবার পারি। ছোটাব্বা শিখাইছে। আমি আপনের নাম ও লিখবার পারি। আজিজুল বললো, ও মা তাই নাকি!
এমন সময় জাহানারা এসে বড় ছেলেকে দেখে বললো, বাজান এই সময় তুই বাড়িত?
আজিজুল বললো, ক্যান আমার কি এইসময় বাড়িত আসা মানা আছে।
জাহানারা বললো, না না বাজান এমনি জিগাই শইল ভালা আছে কিনা তারজন্য। জাহানারা একটু দুঃখ দুঃখ ভাব নিয়ে বললেন, বাপ তুই মুখ শুকনা কইরা ঘুরস আমার দেখতে ভাল্লাগে না। আমি ২/৩ ডা মাইয়া দেখছি। তর আবার বিয়া দিমু আমি। করিমের মাইয়াডা বেশ তরতাজা.... আজিজুল মা কে বাঁধা দিয়ে বললো, আমি বলছি না আমার বিয়া নিয়া চিন্তা না করবার। মন মেজাজ ভালো আছে খারাপ কইরো না বলে আজিজুল তার ঘরে গেল। জাহানারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, পোলাডা আমার কি থিকা কি হইয়া গেছে! বিয়ার নামেও অহন রাগ করে। কোন কুক্ষণে যে বেডিরে নিয়া আসছিলাম। স্বামী ধইরা রাখবার ক্ষেমতা নাই অলুক্ষণে বেডির। পোলাডার মনে বিতৃষ্ণা উইঠা গেছে। আস্তে ধীরে পোলার রাগ ঠান্ডা হইলে একটা ব্যাবস্থা নেওন লাগবো।
জাহানারা পরীকে কোলে নিয়ে আদর করলেন। মায়াকে বললেন, অই তর মা কই মরছে?
মায়া বললো, মা পাক ঘরে গেছে। আমাগো খাওয়াইতেছিলো আব্বা আসছে দেইখা গেছেগা।
জাহানারা বললো, যা তর মারে গিয়া বল আজিজুলরে কিছু নাস্তা দিবার কুলসুমের হাতে।
মায়া খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখে মনোয়ারা নাস্তা সাজিয়ে কুলসুম খালাকে বলছে ওনার ঘরে দিয়া আসতে।
মায়া বললো, মা তুমি ক্যামনে বুইঝা যাও সব।
মনোয়ারা বললো, কি বুঝছি?
মায়া বললো, দাদী কইলো তুমারে কইতে আব্বারে কিছু নাস্তা দিবার তুমি কওয়ার আগেই দিয়া পাঠাইছো।
মনোয়ারা একটু হেসে মায়াকে বললো, মা এটা খুব সাধারণ বিষয়।
মায়া বললো, মা তুমি আব্বার সামনে যাও না কেন মা? আব্বারে দেখলেই পালাইয়া যাও।
মনোয়ারা বললো, পরী কুথায় মা ওরে একা রাইখা আসছো?
মায়া বললো, দাদীর কাছে আছে।
মনোয়ারা বললো মা তুমি পানি খাও নাই। সে গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়ে বললো পানি খাও আর পরীকেও একটু খাওয়াইয়া দিয়া আসো।
মায়া পরীর জন্য পানি নিয়ে বেরিয়ে যেতেই মনোয়ারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। মেয়ের কথার কোন জবাব তার কাছে নেই। মায়া প্রায় জিজ্ঞেস করে মা আমরা এই ঘরে থাকি কেন? আব্বার সামনে যাও না কেন? আরও কত কিছু। মনোয়ারার এসব প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাই সে প্রতিবার কোন না কোন বাহানায় কথা ঘুরিয়ে দেয়।
শেফালীর সাথে কথা বলে আজিজুলে মন বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে কয়েকদিন ধরে। সে নাপিতের দোকানে যেয়ে চুল কাটালো, সেভ করলো। নাপিতকে দিয়ে মাথা বানিয়ে নিলো। সুগন্ধি সাবান মেখে গোসল করলো। পরিস্কার প্যান্ট সার্ট পরে বাবুয়ানা সেজে আতর মেখে সে রেডি হচ্ছে। বাজার থেকে সে শেফালীর জন্য একটা লাল টুকটুকে সুন্দর শাড়ি কিনেছে সাথে লাল রেশমি চুড়ি কিনেছে, স্নো, পাউডার কিনেছে। এগুলো দেখলে শেফালী ক্যান শেফালীর মায়েও পইটা যাইবো। পৃথিবীতে এমন কুনো মাইয়া নাই যে শাড়ি চুড়ি পছন্দ করে না। আজিজুল চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে গুন গুন করে গান গাইছে।
মায়া দরজায় দাড়িয়ে বাবার সাজগোজ দেখছে। আজিজুল মায়ার দিকে তাকাতেই মায়া বললো, আব্বা আজ আপনেরে খুব সোন্দর(সুন্দর) লাগে।
আজিজুল খুশি হলো। দাঁত বের করে হেঁসে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে বললো, সত্য কইতাছস?
মায়া বললো, হ আব্বা একদম টেলিভিশনের হিরো গো লাহান।
আজিজুল খুশি হলো এই প্রথম সে পকেট থেকে চকচকে দশ টাকার একটা নোট বের করে মায়াকে দিয়ে বললো, যা কিছু কিন্না খা।
মায়া তার বাবার কাছে থেকে এমন ভালো ব্যবহার আর টাকা এর আগে কোনদিন পাইনি সে অসম্ভব খুশি হলো। আব্বা আমায় টেকা দিছে, আব্বা আমায় টেকা দিছে বলতে বলতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছুটে গেল। তাকে এ বাড়িতে শুধু রকিবই যা একটু ভালোবাসে। সেই এটা ওটা কিনে দেয়। মায়া তার সব কথা রকিবের কাছে বলে সব আবদার রকিবের থেকে মেটায়। যদিও তার তেমন কোন চাহিদা নেই।
সে টাকা নিয়ে তার মায়ের কাছে ছুটে গেল। মা মা দেখো আব্বায় আমারে টেকা দিছে।
মনোয়ারা মনে করেছে ছোটব্বা মানে রকিব দিয়েছে। সে একটু বিরক্ত হয়ে বললো, মা আমি তুমারে কইছি না টেকা নিবানা। তুমার যা মুন চাইবে আমারে বা ছোটব্বারে কইবা। ছোট মানুষ টেকা নেওয়া উচিৎ না। যাও ছোটব্বারে তার টেকা ফিরায়া দিয়া আসো।
মায়া হাঁপাতে হাঁপাতে বললো ছোটাব্বা না মা আমার আব্বায় দিছে। মনোয়ারা কাপড় ভাজ করছিলো সে চমকে উঠলো হাত থেকে কাপড় পড়ে গেল। কি বলিস!
মায়া মাথা ঝাকিয়ে বললো হ মা আব্বায় দিছে। আব্বা সাইজা গুইজা বাবু হইয়া কই যেন যাইতেছে। মেজাজ খুব ভালো, খুব খুশি লাগতেছে আব্বায় হাসতেছে।
মনোয়ারা ভুরু কুঁচকালো, ব্যাপার কি? আজ হঠাৎ তার মনে নানান প্রশ্ন উঠে আসছে সে মায়া কে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই মায়া খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রওনা দিয়েছে বলছে ছোটাব্বারে দেখাইয়া নিয়া আসি। মনোয়ারা ডাকলো মায়া... মায়া তার আগেই বের হয়ে গেছে।
মনোয়ারা ভেবেছিলো কিছুদিন সম্পূর্ণ চোখের আড়ালে থাকলে মনে হয় স্বামীর মন নরম হবে সে তার ভুল বুঝতে পারবে কিন্তু মায়ার কথা শুনে তার ভালো লাগছে না। মনের মধ্যে কু ডাক ডাকছে। তাহলে কি উনি অন্য কোন.... মনোয়ারার চোখ ভরে পানি টলমল করছে। সে সারাজীবন সবার সাথে ভালো থেকেছে। কখনো কারো মনে আঘাত দিয়ে কথা বলেছে বলে তার মনে পড়ে না। সে দেখতে শুনতেও খুব সুন্দর। সে মনে মনে ভেবে দেখছে কোন দিন স্বামীর অবাধ্য হয়েছে কিনা। তার মনে পড়ে না সে কখনো স্বামীর মুখের ওপর কোন কথা বলেছে। কি কারণে সে কারো মন পাই না সে কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারে না। সে গরীব বলে? তার দেখার কেউ নেই বলে? গ্রামে তো কতই গরীব মেয়ে আছে সবাই মোটামুটি ভালোই আছে। তার জীবন কেন এমন হলো সে তো কখনো বেশি কিছু আশা করেনি। শশুর শাশুড়ী স্বামী কারো অবাধ্য হয়নি। কেন তার সাথে এত অন্যায় কেন তাকে এত অবজ্ঞা এত অপমান সহ্য করে বেঁচে থাকা লাগে কেন.. কেন...কেন.... মনোয়ারা কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আজিজুল সেজেগুজে উপহার নিয়ে শেফালীর দোকানে যেয়ে দেখলো দোকান বন্ধ। পাশের লুৎফরের দোকান খোলা। সে মনে মনে খুশিই হলো দোকানে ১০ জন থাকে তাদের সামনে কথা বলতে তার লজ্জা লাগতো। সে শেফালীর বাড়ির পথ ধরলো। শেফালীর পিছা করতে করতে সে তার সব কিছু চিনে গেছে।
আজিজুল শেফালীর বাড়িতে ঢোকার আগে গলা খাঁকারি দিলো। কচা গাছের ডাল আর পাটকাঠি দিয়ে বেড়া দেওয়া। আজিজুল ডাক দিলো শেফালী আছো নাকি? আজিজুল শেফালীর বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখলো উঠানের এক মাথায় শেফালী চুলা ধরাচ্ছে। আজিজুল কে হঠাৎ দেখে সে চমকে উঠলো। ততক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, আপনি এখানে কি করেন?
আজিজুল হাতের প্যাকেট দেখিয়ে বললো, তোমার জন্য ছোট্ট উপহার আনছিলাম।
শেফালী ভুরু কুঁচকে বললো, কি আছে এর মইধ্যে?
আজিজুল উৎসাহিত হয়ে বললো, হাট থিকা তুমার লাইগা লাল টকটকা শাড়ি আনছি, লাল রেশমি চুড়ি আনছি, স্নো, পাউডার আনছি। দেখো তুমার খুবই পছন্দ হইবো।
শেফালী একটু লাজুক হাসি দিয়ে বললো, আপনে আমার লাইগা এত কিছু আনছেন! ওমা আবার দেহি বাবু সাইজা আসছেন। একটু খাড়ান আমি আইতাছি বলে সে ঘরের ভেতর চলে গেলো।
আজিজুল মনে মনে হাসলো। শাড়ি চুড়ি পাইলে আবার মাইয়া মানুষ পটবো না। মাইয়ার মায়েও পটবো। সে একটু একটু ভয় পাচ্ছিলো যে তেজি মেয়ে বেকে না বসে কিন্তু ব্যাপারটা বেশ সহজেই হয়েছে।
শেফালী ঘরের মধ্যে থেকে চকচকে ধারালো দা টি হাতে নিয়ে তেড়ে বেরিয়ে এলো, বুইড়া খাটাশ খাড়া আজ তর কল্লা নামাইয়া দিমু আমারে আইছোস ঘুষ দিবার আমারে... আমারে সস্তা বাজারের বেডি পাইছোস!
আজিজুল এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে ঘুরে দৌড় দিতে যেয়ে বেঁধে পড়ে গেলো। পড়া অবস্থায় শেফালীর এমন ভয়ংকর রুপ দেখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে হাঁচড়েপাঁচড়ে এগুতে লাগলো।
শেফালী চিৎকার করতে করতে আসলো কি ভাবছিলি আমি তর শাড়ি চুড়ি দেইখা পইটা যামু। তর পেরেমে (প্রেম) হাবুডুবু খামু! আজ তর একদিন কি আমার একদিন। তুই কি ভাবছিলি আমি তর সম্পর্কে কিছু জানবার পারুম না? হারামজাদা বেডা দুই মাইয়ার বাপ আর কয় বৌ বাজা। আজ তর বিয়া করনের শখ চিরতরে মিটাইয়া দিমু। তর কল্লা আলাদা কইরা দিমু বলে শেফালী দা উঁচু করলো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url