সূরা আর রহমান (الرحمن) - মন জুড়ানো তেলাওয়াত | Zain Abu Kautsar

 
বিয়ের রাতেই আমার বর আমাকে বলেছে, তুমি তোমার মতো থাকবা,আমি আমার মতো। আমি মনে মনে বলেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
 
আসলে বিয়েতে আমার মত ছিল না। বাসা থেকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। পড়ালেখা, লেখালেখি এসবের প্রতিই আমার আগ্রহ বেশী। প্রিয় লেখকের ব‌ই পড়ে আমি এক জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। আমি শুধু চাই নিরিবিলি একটা জীবন। যেটা আমার বর আমাকে দিল।
 
পুরো বাড়িতে আমরা তিনজন। সারাদিন সে অফিসে থাকে। বাসায় আমাকে কোনো কাজ করতে হয় না। কাজের মহিলা বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি। সুতরাং আমি সারাদিন ব‌ই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমার বর ব্যস্ত থাকে অফিস আর তার প্রেমিকা নিয়ে।
 
হ্যাঁ,বাসররাতে রোমান্টিক কথার বদলে উপরোক্ত যে কঠিন কথাটি সে আমাকে বলেছিল তার কারণ এটাই। 'হিয়া' নামে তার একজন সিরিয়াস প্রেমিকা আছে। যার ফ্যামিলি ভালো না বিধায় তার পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু আমার বর হিয়া ছাড়া কিছু বোঝে না।
 
বরের সাথে আমার সম্পর্ক পাশের বাড়ির পাতানো ভাইয়ের মতো। সে বাথরুমে থাকা অবস্থায় তার গফের ফোন আসলে আমি রিসিভ করে বলি,ও বাথরুমে। রাতে ব্যালকনিতে বসে সে গফের সাথে গল্প করে আমি আমার মতো ব‌ই পড়ি। আমরা দুইজন পাশাপাশি দুইটা ঘরে ঘুমাই। 
 
এভাবে আট মাস কাটার পর একদিন বার্গার অর্ডার দিয়ে খেয়ে আমার ফুড পয়জনিং হলো। কয়েকবার বমি করার পর মাথা ঘুরে আমি পড়ে গেলাম। কাজের মহিলা গিয়ে উপরের তালার আন্টিকে ডেকে নিয়ে আসলেন। আন্টি আমার বরকে ফোন দিয়ে আসতে বললেন।
 
আমার ততক্ষণে জ্ঞান ফিরেছে‌। আন্টি ওর দিকে তাকিয়ে চোখটিপ মেরে বললো,ঘটনা কি?
আমার বর আর আমি অবাক হয়ে একসাথেই প্রশ্ন করলাম,কিসের কি ঘটনা?
আন্টি হাসতে হাসতে চলে গেলেন। কি একটা অবস্থা! 
 
রাতে আমার বর তার গফের সাথে কথা বলতে বলতে গল্পচ্ছলে একথা তুলতেই সেই মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মূর্ছা গেল। তারপরের কয়েক ঘন্টা আর সেই মেয়ের ফোনে রিং গেল না। আমার বর অস্থির হয়ে গেল। মেয়ে অর্ধেক কথা শুনে ফোন রেখে দিবে কেন? আমার যে ফুড পয়জনিং হয়েছে এটা বলার সুযোগ‌ই দিল না!
 
অনেক বছর কেটে গেল। হিয়ার বয়স হয়ে যাচ্ছে। বাসা থেকে ছেলে দেখছে। আর কিছুই করার নেই। সমাজ সংসারের তোয়াক্কা না করে আমার বর ঘরে দ্বিতীয় ব‌উ তুলল। আমি কিছুই বললাম না। শুধু একটু চিন্তিত হলাম। এখন এরা কি আমাকে শান্তিতে ব‌ই পড়তে দেবে? নাকি দুজন সারাদিন আহ্লাদী, ঝগড়াঝাঁটি করে আমার সুনসান রাজ্যে যন্ত্রণার সৃষ্টি করবে?
 
সেরকম কিছুই হলো না। বিয়ের কয়েকবছর আমার বর তার দুই নাম্বার ব‌উ নিয়ে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আমাকে নিয়ে কোনদিন বাসার পাশের রেস্টুরেন্টেও যায়নি। সেটা ব্যাপার না। খালি বাড়িতে আমি শান্তিতে ব‌ই পড়ি,টিভি দেখি খুব‌ই আনন্দে থাকি। তবে প্রথম কিছুদিন আমার পরিবার খুব ঝামেলা করছিল। এই ছেলেকে পুলিশে দেব, ডিভোর্স দেয়াবো ইত্যাদি। 
 
আমি অনেক কষ্টে সামলেছি। এমনকি আমার বরের পরিবারের লোকজন‌ও তার প্রতি রাগান্বিত। দুই ঈদ আমি যথাক্রমে আমার বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়িতে কাটিয়ে আসি। আমার বর তার দুই নাম্বার ব‌উ নিয়ে বাড়িতেই থাকে নাহয় দেশের বাইরে থাকে। 
 
কয়েকবছর যাওয়ার পর একটা ভয়াবহ কাহিনী হলো। হিয়া আরেকটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেল। আমার বর গলা/য় দ/ড়ি দিতে গেল। পুরো ব্যাপারটায় আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতি যা হলো তা হচ্ছে আমি ব‌ই পড়তে পারছি না। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটা ব‌ইয়ের মাঝামাঝিতে ছিলাম। সেটা শেষ করতে পারিনি। আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা ঐ ব‌ইয়ের শেষে কি হয়েছে। 
 
আমার বরের বাড়ির লোকজন এতদিনে তার প্রতি একটু নরম হয়েছে। তারা ওকে দেখতে এসে আমাকে বললো, এখন তোমাকেই ওর সাপোর্ট হতে হবে।
 
কি যন্ত্রণা! এখন আমি বসে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেব নাকি! আমার কি কামকাজ নেই!
আমার বর একটু সুস্থ হ‌ওয়ার পর আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। ঐ চরিত্র/হীনা মেয়েটার জন্য আমি তোমাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দেইনি। আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
-দিলাম।
 
:আজ থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকব ওকে!
আমি আঁতকে উঠলাম। এ ব্যাটা বলে কি? এর সাথে আমাকে এখন সংসার করতে হবে? কয়বছরের ভেতরে দুইটা বাচ্চা হবে,আমার ভেতর একটা মহিলা মহিলা ভাব চলে আসবে, ফেসবুকে ছবি দিলে সবাই আমাকে আন্টি ডাকবে, তারপর আমার বাচ্চাজোড়া বড় হবে তাদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে ক্লাসে ঢুকিয়ে আমি অন্যান্য গার্ডিয়ানদের সাথে বসে গীবত করব কার ঘরে কি হলো!!
 
চোখের সামনে এরকম ভয়াবহ ভবিষ্যত দেখে আমি আঁতকে উঠলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম এই ছেলেকে ডি/ভোর্স দিব। 
 
ল‌ইয়ারের কাছে গিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে নিয়ে এসে বরের টেবিলে রেখে ব্যাগ গুছিয়ে আমি যশোরের উদ্দেশ্যে বাসে উঠলাম। 
 
এরপর আমার বর অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে আমি কথা বলিনি। আমার বাড়ির লোক বলেছে, যে অন্যায় তুমি ওর সাথে করেছ তারপর ও আর তোমার কাছে ফিরে যাবে না। যদিও আসল ঘটনা তা না।
 
আমি এখন বাপের বাড়িতেই থাকি। বাসার থেকে আবার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি বলেছি পর/কীয়া আছে এমন ছেলে ছাড়া বিবাহ করব না। বাকিটা কপাল! 
 
-জান্নাতুন_ফেরদৌস
রম্য
 
#ফ্যানপোষ্ট_লিখালিখি

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url