Tomar Apon Hater Dole | তোমার আপন হাতের দোলে | Bangla Natok 2018 | Ft Zo...
#ইনসাইড_অব_ব্ল্যাকহোল

#পর্ব–৫
হাফসা ইরিন
–কতো কিউট এইগুলো সত্যিকারে দেখতে!!আমি ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছিলাম তবে নাম জানতাম না।
রিনিতার এতকিছু দেখে আনন্দে চোখে জল চলে এসেছে। আলিফকে কি মনে করে নিজে থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আলিফ অবাক হলো কিন্তু খুব খুশিও হলো যে রিনিতা ওকে জড়িয়ে ধরলো!
–এখন কি আমায় জড়িয়েই থাকবে নাকি আরো কিছু দেখতে চাও?
রিনিতা লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দিলো আলিফকে।
–আচ্ছা তুলি তো আমাদের খুঁজবে,তখন তো অনেক প্রশ্ন করবে।কি উত্তর দিবো?
–তুমি এখানে যতক্ষণ আছো শুধু উপভোগ করো।কোনো কিছু নিয়ে ভেবো না সব আমি সামলে নিবো।
এখন চলো তোমায় আরেকটা আশ্চর্য দেখাই।
–কি?
–গেলেই দেখতে পাবে।
চোখ বন্ধ করো।
আলিফ প্রত্যেকবার চোখ কেনো বন্ধ করতে বলে রিনিতা বুঝলো না।তাই এইবার চোখ একটু খুলে রাখলো দেখার জন্য।কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর কিছু ও আশা করেনি।ওদের সামনে সেই ব্ল্যাকহোলটা চলে এলো যা থেকে ওইদিন ওই অবয়বটিকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলো রিনিতা।আলিফ ওকে নিয়ে ওই ব্ল্যাকহোলের মধ্যে ঢুকে গেলো আর মুহূর্তের মধ্যে কালোকেও হার মানানো এক অন্ধকারে যেনো তলিয়ে যাচ্ছে এমন মনে হতে থাকলো।এত্তো কালো কোনো জগৎ থাকতে পারে এটা ভাবতেই পারে না রিনিতা।রিনিতা ভয়ে আলিফকে শক্ত করে চেপে ধরলো।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ব্যাপারটা ওদের সাথে যদিও মাত্র ২/৩ সেকেন্ড যাবৎ ঘটেছে কিন্তু রিনিতার মনে হয়েছে যেনো কয়েক মিনিট!!ভয় পেলো এমনি হয় হয়ত।মধুর মুহূর্তগুলোর সময় ঘড়ির কাটা যেনো হুরহুর করে চলে যায় আর ভয়ঙ্কর মুহূর্তের সময় কাটা যেনো নড়তেই চায় না কিন্তু প্রকৃত অর্থে সময় তার নিজস্ব নিয়মেই চলে আমরা নিজেদের মানসিক কারণে তাকে কম বা বেশি ভেবে থাকি।
–চোখ বন্ধ করো নি কেনো?
–আপনি কিভাবে বুঝলেন?(অবাক হয়ে)
–কারণ তুমি ব্ল্যাকহোলের ভেতরটা দেখে ভয় পেয়েছ বলেই ভয়ে আমায় আঁকডে ধরেছো??
–ব্ল্যাকহোল!!!আমি হিন্দি হরর মুভিতে দেখেছিলাম এমন জিনিসকে ব্ল্যাকহোল বলে কিন্তু সেখানে এতো ভয়ঙ্কর ছিল না ভেতরটা।
–হুম ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোল হলো আমাদের জ্বীনদের চলাচলের রাস্তা। মানুষরা অনেক কিছুই আবিষ্কার করে ফেলেছে ধারণা বশত কিন্তু প্রকৃত চিত্রটা তারা কখনোই কল্পনা করতে পারবে না যদি না স্বচক্ষে দেখে।
আমার কথা শুনলে না তো।এইবার দেখলে তো কি হলো?
রিনিতা আমি সত্যি তোমায় ভালোবাসি,তোমার ক্ষতি আমি করতে পারি না কখনোই না।আর তুমি কিনা এতটুকু বিশ্বাস করতে পারলে না???
রিনিতা মাথা নিচু করে আছে।কিন্তু ও জানে ও আলিফকে অবিশ্বাস করে এমনটা করে নি,কৌতূহল থেকে করেছে।আলিফ হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু খেলো।
–ধূর বোকা মন খারাপ করো কেনো?আমি মজা করছিলাম।চলো যা দেখতে এনেছিলাম সেটাই তো দেখানো হলো না।
রিনিতা ওর দিকে জিজ্ঞানসু চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আলিফ ওকে টেনে নিয়ে গেল একটা নদীর কাছে।রিনিতা অবাক হয়ে দেখলো এত্তো দ্রুত কিভাবে পানি প্রবাহ হচ্ছে!আমাদের দেশের সাধারণ নদীতে পানি যেভাবে প্রবাহিত হয় তার চেয়ে শত গুন বেশি দ্রুত হবে।পানিগুলো যেনো দৌড়াচ্ছে,ঝর্নার মতো,এমনকি ঝর্নার চেয়েও কয়েক গুন বেশি দ্রুত।
–এই পানিগুলো এত্তো দ্রুত কিভাবে যাচ্ছে?
–এটা হলো আমাজন নদী।এই নদীটা জঙ্গলের মাঝখানে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীটা যেই সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে ৪২ লক্ষ ঘন ফুট জল পতিত হয়,আর বর্ষাকালে এর পরিমাণ গিয়ে দাড়ায় প্রায় ৭০ লক্ষ ঘন ফুটে!!!!৭০ লক্ষ ঘন ফুট পানি যে কি পরিমান পানি তা কল্পনা করতে পারো?? এর জল অনেক অনেক সুস্বাদু,তুমি চাইলে খেঁয়েও দেখতে পারো।
রিনিতা হা করে তাকিয়ে আছে।এত্তো পানি এখন থেকে উৎপন্ন হয়??
রিনিতা নিজের ভ্রম কাটিয়ে পানি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।আলিফের হাত শক্ত করে ধরে নিলো যাতে এই বিশাল প্রবাহ ওকে ভাসিয়ে না নিয়ে যায়। হাত দিয়ে একটু পানি নিয়ে মুখে দিলো রিনিতা। সত্যি সত্যিই এত্তো সুস্বাদু পানি ও কোনোদিনও খায়নি।পানিটা খুব মিষ্টি স্বাদ যুক্ত।
–কেমন লাগলো?
–পানিটা অনেক অনেক অনেক সুস্বাদু আর মিষ্টি।
–হুম এই পানির মিষ্টতা সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা কয়েক গুম কমিয়ে দেয়।(হেসে)
আরেকটা জিনিস দেখবে চলো।
রিনিতা এইবার আলিফ বলার আগেই চোখ বন্ধ করে নিলো দেখে আলিফ মুচকি একটু হাসলো তারপর ওকে নিয়ে আবারো ব্ল্যাকহোলের রাস্তা হয়ে চলে গেলো আরেকজয়গায়।
–চোখ খুলুন এইবার ম্যাডাম।
রিনিতা চোখ খুলে দেখলো আরেকটা নদীর সামনে দাড়িয়ে আছে ওরা দুজনে।
–এটাও তো নদী।
–হুম নদী তো ও অবশ্যই কিন্তু এর একটা আশ্চর্য বিশেষত্ব আছে।
–কি সেটা?
–নদীর জলে হাত দিয়ে নিজেই দেখে নাও।(রহস্যজনকভাবে হেসে)
রিনিতা ভয়ে ভয়ে পানিতে হাত দিয়েই আবার ছেকা খেলো যেনো এমনভাবে উঠিয়ে নিয়ে এলো হাতটা।আলিফ ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বললো,
–কি হলো ছেকা খেলেন নাকি ম্যাডাম?
রিনিতা ওর দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে।
–পানি এতো গরম কেনো??
–এই নদীটা হলো ফুটন্ত নদী।এর পানি সবসময়ই এমন উষ্ণ থাকে।এর তাপমাত্রা ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।এখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রিতে আছে তাতেই তোমার হাতে ছেকা লাগলো যদি ৯৩ ডিগ্রি হতো তবে কেমন হতো ভাবো!!!
রিনিতা হা করে আছে।এত্তো কিছু সম্পর্কে কিনা সম্পূন্ন অচেনা অজানা ছিল এতদিন।মনে হচ্ছে এখানেই যদি থেকে যাওয়া যেতো!!
–আমার না খুব ক্ষুধা লাগছে।

–আজকে নাহয় আমরা ফলপাকোড দিয়েই লাঞ্চ সারি,কি বলো?
–হুম অনেক ভালো হয়।আদিম পৃথিবীকে অনুভব করা যাবে যেনো অনেকটা।দারুন একটা এক্সপেরিমেন্ট হবে।
আমাকে একটু ছাড়ুন আমি ঘুরে দেখতে চাই।
–ওকে।সাবধানে হাটিও এখানে অনেক বিষাক্ত সাপ বিচ্ছু আর ক্ষুদ্র পোকামাকড় আছে।
–ওকে।
রিনিতা হেঁটে হেঁটে দেখছে আর আলিফ ওর পিছনেই হাঁটছে।এতরকমের গাছ ও কোনোদিনও দেখেনি, হয়ত দেখবেও না আর তার সাথে পাখির কিচিরমিচির তো আছেই।যেনো কান বন্ধ করে দিতে চায় এরা,অদ্ভুদ সব পাখি।কতো রঙের ঢঙের পাখি যে এই পর্যন্ত রিনিতা দেখেছে তার কোনো ঠিক নেই।আলিফ বলেছে এখানে নাকি ৪০ হাজার জাতের গাছ,১ হাজার ৩শ জাতের পাখি,২ হাজার ২ শ জাতের মাছ,৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী,৩৭৮ জাতের সরীসৃপ,৪২৮ জাতের উভচর,২৫ লাখ জাতের পোকামাকড় রয়েছে!!!!!!!!
হঠাৎ রিনিতা একটা খুব সুন্দর দেখতে ফল দেখতে পেলো একটা গাছে।
–এই ফলটা খাবো আমি।
–রিনি,এটা তো খাওয়া যাবে না।
–কেনো?

–এই জঙ্গলে তুমি অনেক ফল পাবে কারণ এই আমাজনে ৩০০০ রকমের ফল আছে কিন্তু খাওয়ার উপযোগী ফল মাত্র ২০০ রকমের।এই যে তুমি সুন্দর ফলটা দেখতে পাচ্ছো এটা খাওয়ার উপযোগী না।আমি তোমায় খাওয়ার জন্য ফল এনে দিচ্ছি।
আলিফ একটা গাছের নিচে গিয়ে তুড়ি বাজলো।সাথে সাথে ওর হাতে অনেক গুলি নাশপাতি,স্ট্রবেরি,আপেল,কলা এসে পড়লো।রিনিতা অবাক হয়ে বললো,
–একটা গাছ থেকে এতরোকমের ফল কিভাবে পড়লো?
–তুমি ভালো করে গাছটা দেখো তো এটা কি গাছ।
রিনিতা গাছের দিকে তাকালো কিন্তু এই গাছে যেই ফলগুলি আছে সেগুলো ওর সম্পূন্ন অচেনা।তাহলে এই নাশপাতি, স্ট্রবেরি, আপেল কোথা থেকে এলো???
–এগুলো আমাদের জ্বীনরাজ্য থেকে আনা।তোমায় তো বলাই হয়নি আমি জ্বিনরাজ।
–তারমানে আপনি জ্বিনদের রাজা!!!!!
–হুম
–কিন্তু আপনি তো সারাদিন আমার সাথেই থাকেন তাহলে নিজের রাজ্য চালান কিভাবে?
–তোমার সাথে আমি দিনের ১২/১৩ ঘণ্টা থাকি।বাকি সময় তোমার আসে পাশে পাহারা দেবার জন্য আমার এক বিশ্বস্ত জ্বীন থাকে সে তোমার কোনো বিপদ হলে সাথে সাথেই আমার জানায়।
–আমায় কেনো এতো পাহারায় রাখেন???
–দায়িত্ত্ব।
–দায়িত্ত্ব দায়িত্ত্ব দায়িত্ত্ব কিসের এতো দায়িত্ত্ব আমায় কি বলা যায় না??
–তিনি প্লিজ শান্ত হও।তোমায় বলার সময় আসলে আমি নিজে থেকেই সব বলবো তোমায় আমার উপর এইটুকু বিশ্বাস রাখো প্লিজ।
আলিফ রিনিতার হাত ধরে অনুরোধ করলো,রিনিকে শান্ত করলো।রিনিতা আর কিছু বলল না এসব নিয়ে।আলিফ রিনিতাকে ফলগুলো দিয়ে খেতে বললো।রিনিতা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে আর আলিফ ওর পাশে বসে বসে খোসা ছাড়িয়ে ওর হাতে দিচ্ছে।রিনিতার কাছে ফলগুলোর স্বাদ কেমন যেনো অদ্ভুদ লাগলো তবে বেশ মজার।পৃথিবীর ফলের স্বাদ থেকে ভিন্ন।খাওয়া শেষে রিনিতা বসা থেকে দাড়িয়ে বললো,
–আমি আর খেতে পারবো না। আমার পেট ভরে গেছে।
–কেমন লাগলো আমাদের রাজ্যের ফল?
–অদ্ভুদ!কেমন যেনো একটা অদ্ভুদ স্বাদ লেগেছে।আমি ঠিক বলে বুঝাতে পারবো না।
–লাগবেই কারণ এটা পৃথিবীর ফল না।
হঠাৎ রিনিতার চোখ গেলো একটা সাপের দিকে। সাপটা গাছে ঝুলে আছে।গাছের পাতার রঙের সাথে এর রঙ মিলে যাওয়ায় প্রথমে বুঝাই যাচ্ছিলো না যে এটা একটা সাপ!রিনিতা ভয়ে চিৎকার করে আলিফের কোলে উঠে গেলো লাফ দিয়া।আলিফ দেখে রিনিতা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আলিফ ওর এই অবস্থা দেখে হাসি চাপতে পারছে না। বললো,
–সামান্য একটা সাপ দেখে ভয় পাও?হি হি হি
–সামান্য সাপ!!!আমি সাপকে অন্যান্য সব কিছু থেকে বেশি ভয় পাই,আপনি জানেন?
চলেন এখানে আর একমুহুর্ত ও থাকবো না আমি।
–"হ্যাঁ,জানি"
–কি বললেন?
–না কিছু না। চলো আমরা এখান থেকে যাই।
রিনিতা আলিফকে এখনো সেভাবেই ধরে আছে।সাপ দেখলে ওর শরীরে কাটা দিয়ে উঠে।ভূত, জ্বীন,কুকুর,তেলাপোকা,বিচ্ছু,আর যা যা আছে এসবকে ও একদম ভয় পায় না কিন্তু সাপ দেখলে যেনো জম দেখেছে এমন মনে হয়। সাপ দেখলে যে ও লাফিয়ে গাছেও উঠে যেতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এখন আলিফের উপর গাছের মতো করে উঠা।আলিফের উপর উঠে দুপা দিয়ে আলিফের শরীরটা পেচিয়ে ধরেছে যাতে না পড়ে যায়।
(কমেন্ট না করলে লেট করে দিবো।তাই যাদের ভালো লাগবে তারা অন্তত একটা ছোটো করে হলেও কমেন্ট করবেন)
(আপনাদের কাছে একটা জিনিস জানতে চাচ্ছি,আলিফ আর রিনিতার ভ্রমণটা কেমন লাগলো?কমেন্টে জানাবেন আর অবশ্যই অবশ্যই একটা রিয়াক্ট দিবেন।সবশেষে আবার সেই প্রশ্ন___
চলবে কি?
ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং
)
