আপনি কেমন মানুষ দেখেনিন | পর্ব ৮ | মগজ ধোলাই | ধাঁধা | Riddles in bengal...

 
ইরা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলো এমন সময় পথিমধ্যে ঝুমঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।ইরা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দৌড়ে ওর থেকে একটু দুরে রাস্তার পাশে থাকা যাত্রী ছাউনির নিচে এসে দাড়ালো।কিন্তু এতদুর আসতে গিয়ে গা পুরো ভিজে একাকার।জামাকাপড় একদম শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে।ইরা মনে মনে বলছে,কেন যে আজ গাড়ি নিয়ে এলাম না যার কারনে আজ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।
 
ইরা ওর চুল বাধার ক্লিপ খুলে মুখে ধরে চুল ভালোভাবে বাধতে লাগলো।এমন সময় ইরার চোখ পড়লো ওর পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটির ওপর।সে ড্যাব ড্যাব করে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে।ইরা এতক্ষণ খেয়াল করেনি যে এখানে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে।ইরা লোকটিকে দেখা মাত্র তাড়াতাড়ি চুল বাধা শেষ করে নিজের শরীর ওড়না দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে নিলো।ইরা লোকটির দিকে তাকিয়েছে এটা বুঝতে পেরে লোকটি অন্য দিকে তাকালো।লোকটির বয়স ৩০-৩২ তো হবেই।
ইরা কিছুদিন হলো ডাক্তারি শেষ করে একটা হাসপাতালে যোগ দিয়েছে।মা-বাবার একমাত্র মেয়ে সে।আপাতত এটায় ওর পরিচয়।
 
সন্ধ্যা পেরিয়ে চারদিকে অন্ধকার হতে শুরু করেছে।সেই সাথে বৃষ্টির বেগ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।ইরার পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটি মাঝে মধ্যে ইরার দিকে তাকাচ্ছে,সেটা ইরা আড়চোখে লক্ষ্য করছে।এতে ইরার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।এদিকে বৃষ্টিও কমছে না।রাস্তায় গাড়িও নেই তেমন।বাধ্য হয়ে ইরা সেখানেই দাড়িয়ে আছে।এমন সময় লোকটির ইরার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।এতে ইরার মনের মধ্যে ভয় কাজ করতে শুরু করলো।কেননা যা দিনকাল পড়েছে,কোথাও কোনো মেয়ে নিরাপদ নয়।ইরা লোকটিকে এগিয়ে আসতে দেখে দেয়ালের সাথে চেপে দাড়ালো।মনে মনে ভাবছে,উনি এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছে কেন?কিছু করবে নাকি?ইরা কিছু বলার আগেই লোকটি বলল
''দেখুন আপনি আমাকে ভয় পাবেন না আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না,আপনি নিশ্চিন্তে এখানে থাকতে পারেন"।
 
লোকটির এমন কথায় ইরা অবাক হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবতে লাগলো,লোকটি যদি ওর কোনো ক্ষতি না করে তাহলে ওর দিকে এভাবে এগিয়ে আসছে কেন?
"আমি আপনার কাছাকাছি এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি কারন যাতে কোনো বাজে টাইপের লোক আমাদের এখানে দেখে যেন মনে না করে যে আমি আপনাকে চিনি না।যদি এটা বুঝতে পারে যে আমি আপনাকে চিনি না তাহলে ওরা আপনার এই একাকিত্বের সুযোগ নিতে পারে।আর তার মধ্যে এই এলাকা এখন একদম সুনসান।আপনাকে বাজে ইঙ্গিত করতে পারে যেটা আপনার মোটেও ভালো লাগবে না।তাই আমি আপনার কাছাকাছি আছি কারন এতে ভাববে আমরা একে অপরের পরিচিত।তাই এখানে আসার সাহস পাবেনা।"
 
ইরা বেশ অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে,লোকটি ওর মনের কথা জানলো কি করে?
ইরা লোকটিকে বলল,
->তা নয় বুঝলাম কিন্তু,,,,
লোকটি বাধা দিয়ে বলল
->ভাবছেন আমি আপনার মনের কথা বুঝলাম কি করে তাই তো?
ইরা একদম হা করে লোকটির দিকে তাকালো।তখন লোকটি হেসে উঠে বলল
->এভাবে হা করে থাকলে মুখের মধ্যে মশা ঢুকবে।
ইরা মুখ বন্ধ করলো।তারপর বলল
->আচ্ছা বললেন না যে,আপনি আমার মনের কথা বুঝতে পারলেন কি করে?
লোকটি হালকা হেসে উঠে জবাব দিলো
->কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এরকমটা হয়।যদিও তার সাথে কোনো সম্পর্ক থাকে না তবুও তার মনের ভাষা পড়ে নেওয়া যায়।
 
->হুমম হয়তো তাই।
->আপনার ঠোঁটের ওপরে থাকা তিল,আর গালের টোলের কারনে কিন্তু আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।
ইরার অবাক হওয়ার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
->ওই আপনি কে বলুন তো?এই অন্ধকারের মধ্যে আপনি আমায় ভালোভাবে না দেখে বুঝলেন কি করে আমার এটা আছে ওটা আছে?
->অজানাতেই থাক।
->কেন কেন?আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না।এখন বলুন আপনার নাম কি?
->আমার নাম তৌসিব।আপনার নাম কি?
->সবই যখন জানেন আমার ব্যাপারে তো এটাও বলুন দেখি কি আমার নাম?
->ইরা।
 
ইরা এবার আরো অবাক হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছে এই তো দেখি আমার ব্যাপারে সব জানে।ইরা কিছু বলতে যাবে এমন সময় জোরে বাজ পড়লো।ইরা হালকা চিৎকার করে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করলো।বাজ পড়ার শব্দকে ইরা অনেক বেশি ভয় পায়।তারপর যখন সে চোখ খুললো তখন দেখলো ওই লোকটি আর সেখানে নেই।ইরা বেশ অবাক হয়ে গেলো এটা দেখে।এত তাড়াতাড়ি লোকটি কোথায় হাওয়া গেলো?
 
ইরা এদিক ওদিক তাকালো,কোথাও আর লোকটিকে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে।এমন সময় ইরার বাবা গাড়ি নিয়ে এসে ইরার সামনে এসে দাড়ালো।ইরা সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার তৌসিবের দাড়ানো জায়গার দিকে তাকালো।ইরা বাবা লিয়াকত আলি গাড়ির থেকে নেমে ইরার কাছে এসে ওকে বলল
->ইরা চল মা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড় তোর পুরো গা তো দেখছি ভিজে গেছে।
ইরা ওর বাবার কথায় চমকে উঠলো।তারপর ইরা ওর বাবাকে এখানে দেখে আরো অবাক হলো।ইরা ওর বাবাকে বলল
->বাবা তুমি এখানে?আমি তো একাই যেতে পারবো।তুমি আবার কষ্ট করে এই বৃষ্টির মধ্যে আসতে গেলে কেন?
 
লিয়াকত ইরার কথায় ভ্রু কুচকে বলল
->তুই তো আমায় ফোন করে আসতে বললি।এখানে নাকি তোর দাড়িয়ে থাকতে ভয় করছে।তাই আমি চলে এলাম।আর তুই ফোন না করলেও আমি আসতাম।
ইরা অবাক হয়ে ওর বাবাকে বলল
->আশ্চর্য আমি কখন ফোন করলাম?
->এই তো মিনিট পনেরো আগেই তো ফোন করলি।
ইরার মাথায় কিছুই আসছে না।সে তো এখনো ওর বাবাকে ফোন করেনি তাহলে ওর বাবা কেন বলছে যে,সে ফোন করে আসতে বলেছে?
 
->বাবা আমি তোমায় কোনো ফোন করিনি।
লিয়াকত আলি হেসে উঠে উনার ফোন বের করে ডায়াল প্যাডে থাকা ইরার নাম্বার দেখালো।এতে ইরা আরো অবাক হয়ে গেলো।এটা কি করে সম্ভব?
লিয়াকত আলি বলল
 
->আচ্ছা মা আমার মনে হচ্ছে তোর শরীর খারাপ।এখন বাসায় চল।আর এটা নিয়ে ভাবতে হবেনা।
ইরা আর কথা না বাড়িয়ে ওর বাবার সাথে গাড়িতে উঠে পড়লো।
ইরার মাথায় দুটো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রথমত,সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে একটা লোক হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে গেলো?আর দ্বিতীয়ত,সে ওর বাবাকে ফোন করেনি তারপরও ওর বাবা কেন বললো সে ফোন করে আসতে বলেছে?আবার ডায়াল প্যাডে ইরার নাম্বার দেখাচ্ছে।
ইরা কি যেন ভেবে একবার পিছনে তাকালো আর তখনই দেখতে পেলো তৌসিব যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানে কেউ একজন দাড়িয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা আসলে কে দাড়িয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছিলো না।
 
ইরা বাসায় এসে গোসল করলো।গোসল সেরে রুমে এসে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে চুল শুকাচ্ছে এমন সময় ওর মা আছমা বেগম ইরার রুমে আসলো।
->ইরা তুই ঠিক আছিস তো?
ইরা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
->হ্যাঁ ঠিকই তো আছি।হঠাৎ এ কথা বললে কেন?
->না এমনি।তোর বাবা বললো যে তোর নাকি শরীর ঠিক নেই।
ইরা হেসে উঠে বলল
->না আমি একদম ঠিক আছি।তবে আজ একটা ঘটনা ঘটেছে জানো?
->কি?
 
ইরা তখন তৌসিব আর ওর বাবাকে ফোন করার কথাটা বললো।সব শুনে ইরার মা আছমা নিজেও বেশ অবাক।আছমা বেগম বলল
->আমার মনে হয় সে হঠাৎ করে তোকে না জানিয়ে কোথাও চলে গেছে।
->কি যে বলো মা,মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে কেউ কোথায় হারিয়ে যাবে।বড় জোর সে গেলে কয়েক মিটার যেতে পারবে এর বেশি তো না?
->তাহলে কি জানি।
 
->আর সত্যি আমি বাবাকে ফোন করিনি।
এমন সময় লিয়াকত আলি রুমে এসে বললেন
->এখন এসব কথা বাদ দাও আর আমার মেয়েটাকে খেতে দাও।
কেউ আর কোনো কথা না বলে খেতে গেলো।খাওয়া শেষ করে ইরা রুমে এসে শুয়ে থেকে ফেসবুকিং করতে থাকলো।
 
ইরা যাদের সাথে মেডিকেলে একসাথে পড়াশোনা করেছে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে ইরার বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো।তাদের মধ্যে,আসিফ,মাহমুদ,শারমিন আর মিষ্টি এরা চার জন হলো ইরার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।ব্যস্ততার কারনে সবার সাথে ইরার খুব একটা যোগাযোগ করা হয়ে উঠে না।তাই সবাই মিলে ঠিক করলো কয়েকদিনের জন্য ওরা দুরে কোথাও পিকনিকে যাবে।
আসিফঃ-তো আমি ভাবছি সামনের সপ্তাহে আমরা পিকনিকে যাবো কি বলিস সবাই?
মিষ্টিঃ-হ্যাঁ তাই হবে।কারো কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারিস।
ইরাঃ-আমরা সিঙ্গেল মানুষ আমাদের আবার কি সমস্যা?
মাহমুদঃ-হুমম সেটায়।
 
ইরাঃ-শারমিন কোনো কথা বলছিস না কেন?
শারমিনঃ-আমি আর কি বলবো।তোরা যেটা বলবি সেটায় হবে।
ইরাঃ-ঠিক আছে তাহলে কথা এটায় রইলো।কোথায় যাবি আর কই থাকবি সেটা ঠিক করেছিস কেউ?
আসিফঃ-পাহাড়ি এলাকায় গেলে কেমন হয়?
ইরা সহ সবাই বললো,ভালোই হয়।
আসিফঃ-তাহলে সেখানেই যাওয়া হবে।
ইরাঃ-আচ্ছা।
ইরা কথা বার্তা বলে ফোন রেখে শুয়ে পড়লো।মনে খুব আনন্দ লাগছে এটা ভেবে যে খুব তাড়াতাড়ি আবার সব বন্ধুরা মিলে এক হবে।
গভীর রাত।চারদিকে সুনসান নিরবতা।ইরা ঘুম রাজ্য পাড়ি জমিয়েছে।এমন সময় এক পুরুষাকৃতির অবয়ব ইরার রুমের কোণে দৃশ্যমান হলো।সে ইরার সামনে এসে ওরে দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
 
ইরার ফর্সা চেহারা,গালে টোল,ঠোটের ওপরে তিল।ঘুমন্ত চেহারাখানা দেখতে অত্যন্ত মায়াবী লাগছে।মাঝেমধ্যে গোলাপ রাঙ্গা ঠোঁট দুটো সামান্য কেঁপে উঠছে।অবয়ব ধীরে ধীরে ইরার কাছে বসলো।
চলবে,,,,,,,।
#অচেনা_আপনজন।(পিশাচ গল্প)
পর্বঃ-এক।
লেখাঃMd Tarajul Islam (Shihab)
(গল্প পুরোটায় কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে কোনো মিল নেই)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url