Meyetar Cheleta | Apurbo | Safa Kabir | Mabrur Rashid Bannah | Bangla natok
তিনটি খুনের আসামি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে রাতের অন্ধকারে ছেড়ে দেওয়া হলো!
এই ঘটনার পেছনে যে বিশেষ কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে তা আমি আন্দাজ করতে পারছি। কারণ আমাকে বের করে দেওয়ার সময় জেলার আসলাম বলেছেন, "পেছনে কোনো শব্দ পেলে ফিরে তাকাবি না। সোজা হেঁটে চলে যাবি।"
এটা যেমন আশ্চর্যজনক ব্যাপার তেমনি আরো একটি আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাহলে মাত্র এক বছর জেল খাটার পর হঠাৎ আজ রাতে ছেড়ে দেওয়া হলো কেন? কী রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে? কেনই বা রাতের আঁধারে ছেড়ে দিলো ওরা?
এসব প্রশ্ন যেমন আমাকে ভাবিয়ে তুলছিল তেমনি আরো একটি বিষয় কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছিলাম না। সেটা হচ্ছে, জেলার আসলাম কেন আমাকে পেছনে শব্দ পেলে ফিরে তাকাতে নিষেধ করেছেন? এর দ্বারা কী ইঙ্গিত করেছেন তিনি? কীসের শব্দই বা সেটা?
ভাবতে ভাবতে পাঁচ মিনিট ধরে হাঁটছি আমি। এটা শহরের মূল সড়ক। এখন সময় হবে বেশি হলে রাত বারোটা। অবাক করার মতো বিষয় হলো, রাত ঘনিয়ে আসার আগেই পুরো রাস্তা ফাঁকা। রাস্তায় মানুষ আর যানবাহন তো দূর, একটা কাকপক্ষীরও দেখা নেই। অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখি, যতগুলো ঘরবাড়ি দেখা যাচ্ছে কোথাও কোনো বাড়িতে আলো জ্বলছে না। তাই দেখে আমার একটু সন্দেহ হলো। আজ থেকে এক বছর আগে আমি যখন বাইরে ছিলাম তখন রাত তিনটার সময়ও এ-রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করত। কেউ জেগে থাকুক বা না থাকুক আশপাশের প্রায় সব বাড়িতে সারা রাত আলো জ্বলত। কিন্তু এই এক বছরে কী এমন হয়ে গেল যার জন্য সবাই রাত বারোটার মধ্যেই বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়েছে?
কৌতূহলে আরো একটু সতর্ক হলাম আমি। হঠাৎ আমার মনে হলো যেন চারপাশের বাড়িঘরগুলো ফাঁকা! কোথাও কেউ নেই। সবাই পালিয়ে গেছে। কৌতূহল মেটাতে একটা বাড়িতে হানা দিলাম। প্রথমে ভদ্রলোকের মতো দরজায় টুকা দিয়েছি। কেউ সাড়া দেয়নি। খানিক পর অন্য একটা বাড়িতে, অন্য একটা ঘরের দরজায় গিয়ে ডেকেছি। কিন্তু সাড়াশব্দ পাইনি। আস্তে আস্তে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। আমি খুব জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। তখন একটা বাড়ির গেট ধাক্কাতে গিয়ে দেখলাম, বাড়ির গেটে তালা ঝুলছে। তার মানে সত্যি সত্যি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে লোকজন!
আমি দৌড়ে গেলাম অন্য বাড়িতে, অন্য ঘরে, অন্য দরজায়। সবগুলো বন্ধ, সব দরজায় তালা। কোথাও কোনো মানুষ নেই। অন্ধকার চারপাশটা জনশূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে।
এজন্যই দিনদিন জেলখানায় আসামির সংখ্যা কমে যাচ্ছিল! এজন্যই প্রতিদিন সাজা শেষ হওয়ার আগেই আসামিদেরকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল! এজন্যই কোনো আসামিকে বাইরের লোকজনের সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছিল না! যাতে তারা বাইরে খবর জানতে না পারে! কিন্তু এর পেছনের রহস্য কী? কেনই বা পুরো শহরটা এমন ফাঁকা হয়ে গেল? কী কারণে শহরের চিত্র এতটা বদলে গেল? আর কেনই বা জেলার আসলাম আমাকে বললেন, "পেছনে কোনো শব্দ পেলে ফিরে তাকাবি না। সোজা হেঁটে চলে যাবি।"
প্রশ্নে প্রশ্নে আমার মাথা ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ একটা মচমচ আওয়াজ পাই। অনেকটা শুকনো পাতায় পা ফেলার মতো শব্দ। সেই মচমচ আওয়াজটা যেন পেছন থেকেই এল! ব্যাপারটা পরিষ্কার হতেই আমার বুক হিম হয়ে গেল। সারা গা কাঁপুনি দিয়ে উঠল দু'বার। তারপর আরো একবার ওই একই শব্দ। আশপাশ এতটাই নিঃস্তব্ধ যে সেই মচমচ শব্দটা আমি স্পষ্ট শুনলাম। তার ঠিক পরেই জেলারের বলা কথামতো এগোতে লাগলাম। কিন্তু শব্দটা ততক্ষণে আমার পিছু নিতে শুরু করেছে। আমার কান বলছে, একটা চতুষ্পদ প্রাণী আমার পিছু নিয়েছে। আমি যত দ্রুত হাঁটছি সেটাও ঠিক ততটাই দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমি থেমে গেলে সেটাও থেমে যাচ্ছে!
হাঁটতে হাঁটতে একটা উঁচু দেয়ালের সামনে চলে এসেছি। এরপর আর রাস্তা নেই। সামনের দেয়ালটা প্রায় ছয় ফুট উঁচু। সেটা পেরোতে গেলে দেয়াল বাইতে হবে। এদিকে আমি থেমে যেতেই পেছনের চতুষ্পদ প্রাণীটাও থেমে গেছে। মনে হচ্ছে এখনি আমার বিপদ হতে চলেছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেয়াল টপকাব। কিন্তু লাফ দিতে গেলেই যদি পেছনের প্রাণীটা হামলা করে বসে তখন?
চলবে
গল্প : দি অ্যানিমেল |
পর্ব : এক
মো. ইয়াছিন