Bhalobasi Bhalobasi bengali recitation by Munmun Mukherjee
গল্পঃ- রুম নাম্বার ১০১
লেখা:- Rafsan Sydul
পর্বঃ- ০৮
মাথায় ব্যাথা পেলেও নিজেকে থামাতে পারছিল না, অন্তু ঘুমিয়ে আছে, সে ঘুম ভাঙবার নয়। মহিমা হাঁটু ভর করে বাথরুম থেকে বের হবে এমন সময় টুপ টুপ করে মহিমার উপর দু’ফোটা রক্ত পড়ে। জিহ্বা শুকিয়ে গেছে ওর। শরীরের দূর্বলতায় উপরের দিকে তাকাতেও হৃদয় কাঁপছে ওর। ঝুলন্ত মাথাকাটা দেহটা দেখতে পেয়েই জ্ঞান হারা মহিমা।
তখনও তার শ্রবণ শক্তি কাজ করছিলো, মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সচল, কেউ একজন বলছিলো। "মহিমা ওঠ বইন, তুই তো আমাদের মুক্তির পথ। ওঠ বইন ওঠ"
যখন মহিমার চোখ খুলে তখন দিনের আলো অর্ধেকটা পেরিয়ে গেছে। অন্তু ঘুমোচ্ছে এখনো। বাথরুম থেকে বেরিয়ে বেডরুম থেকে গেঞ্জি আর জিন্স নিয়ে আবারও বাথরুমে ঢুকে। শাওয়ার ছেড়ে ভাবতে থাকে সে মুখটার কথা। স্পষ্ট মনে আছে মহিমার সে মুখ। গতরাতে বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়, কিছুটা রক্তক্ষরণ হলেও সে ক্ষতটা এখন নেই। দেয়ালে ঠিকি রক্তের সে দাগ এখনো রয়ে গেছে। পা দিয়ে মুছে ফেলতে চাইছে সে রক্ত।
"আচ্ছা অন্তুকে কি এসব জানাবো? এ মহলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো? অন্ধকারের সে ছায়ার কথা? কিন্তু ও তো একটু দূর্বল প্যারানরমাল জিনিসে। যদি অধিক ভয়ে নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় এ শহরে। নাহ্ থাক বলার দরকার নেই এসব ঘটনা, শাওয়ার থেকে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটায় পরিষ্কার দেহের সাথে মনের ভয়কে শান্ত করে দিচ্ছে ওর। প্রায় আধাঘন্টা শাওয়ারের পানিতে নিজের দেহ ভিজিয়ে শান্ত মনে তোয়ালে খুঁজছে, পাবে কোথায়? ও তো তোয়ালে নিয়ে ঢুকেনি। ভেজা শরীরে কাপড় পড়াও যাচ্ছে না রুমের ভিতরে অন্তু। সে ভালোবাসার মানুষ নগ্ন দেহ আগেই দেখেছে, তবে ও তো এখনো ঘুমে, কিছু হবে না।
বাথরুমের দরজা খুলে ভেজা শরীর নিয়ে বাহিরে আসে, ফর্সা দেহে পানির বিন্দু ফোঁটা ছোপ কেটেছে। বাঁধা চুলের পাশ বেয়ে মোহ মাখা পানির বিন্দু ঠোঁটের পাশ বেয়ে চুপসে পড়ছে নিথর বুকে। তাকিয়ে আছে অন্তু খাটের একপাশে বসে। তোয়ালেটা অন্তুর পাশেই। অন্তুর চোখে চোখ পড়তেই নিজেকে ঢাকার ব্যার্থ প্রচেষ্টায় হাত দিয়ে বুকের অর্ধাংশ ঢেকে মাথা নিচু করে তোয়ালেটা চাচ্ছে ওর কাছে। রক্তচক্ষু নামিয়ে অন্তু তোয়ালে দেয়ার ছুতোর ভেজা ঘাড়ে ঠোঁটের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়। উষ্ণ শরীরে পুরুষের ছোয়া যেন মাতাল করা এক নেশা মহিমার। এ নেশা বরাবর ই প্রিয়। তবে কি মহিমা জানে সে এক মৃত মানুষের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হচ্ছে? মানুষের খোলসে এক অন্য মায়ার?
মধ্য দুপুর দু'জনে শুয়ে আছে একে অপরকে জড়িয়ে। কালো সেই অন্ধকার ছায়ার নতুন জীবন অন্তু। তার আজ বড্ড পিপাসা পেয়েছে। রক্তের নেশা মাথায় চড়েছে। বারবার মহিমার রক্ত চুষে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেও অনিহা জন্মে তার। কেনো এ অনিহা বুঝতে পারেনা ক্ষমতাশালী সে ছায়া। ক্রমশই তার নেশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিমার কোল ছেড়ে উঠে পড়ে অন্তু। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
"আসছি প্রিয় কোন এক অজানা কাজে যেতে হবে বাহিরে।"
অভিমানী কণ্ঠে মহিমা বলে "যাও"
অন্তুর চোখে পিপাসা মহিমার ঠোঁটের মধু আর সে পিপাসা মিটাতে পারছে না। দিনের শেষবার সে স্পর্শ অনুভব করে মহিমা। বের হয়ে যায় অন্তু। শহরের শেষ প্রান্তে। রাস্তায় এত পুরুষ থাকতেও অন্তুকে শহরের শেষ প্রান্তে কেনো টানছে ওর ভিতরের আত্মা? বুঝে উঠতে পারছে না সে। সে কল্পনা করে ওখানেই তার তৃপ্তি মিটানোর পর্যাপ্ত রক্তের খোঁজ সে পাবে।
মহিমা অর্ধনগ্ন হয়ে রুমের মধ্যে নিজের কাজ করছিল। এমন সময় সেখানে উপস্থিত, রেষ্টুরেন্টের সেই বিদেশি ছেলেটা। যার গায়ের রং দেখে আকৃষ্ট হলেও বলতে পারেনি কিছুই। মহিমা তাকে দেখে একটু বিব্রত হয়ে বলে।
"কে আপনি, এখানে কি চাই?"
"আমি 'মানুষ' এখানে মুক্তি চাই"
"আজব! আমিতো দেখতে পাচ্ছি আপনি মানুষ, আপনার পরিচয় কি? আর এখানে মুক্তি মানে?"
"আমিতো জানি আপনি মানুষ চিনেন না। তাই আমি মানুষ বলছি।"
"আমি মানুষ চিনিনা মানে? কি বোঝাতে চাচ্ছেন?"
"মানুষ চিনলে কি আর এক মৃত.." থমকে গেলো ছেলেটি। হঠাৎ নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায় তার চেহারায়। আজ তো সেই সময় যে সময় শহরের শেষ প্রান্তে থাকা নিজ বোনের শেষ দিন হতে চলছে এক মৃত ব্যাক্তির মিলনে। এটা লেখা আছে তার ভাগ্যে, চাইলেও সে আটকাতে পারবে না।
"এইযে কি হলো আপনার?"
মহিমার কথায় কল্পনা ভেঙে বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে। বললো ছেলেটি
"আপনি তো মহিমা? তাই না?"
"হ্যাঁ! আমার ডাকনাম মহিমা। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে? আপনার সাথে তো এর আগে কখনো আমাদের আলাপ হয়নি"
"আলাপ হওয়ার জন্য আপনি কিংবা আমি জন্মায়নি, আপনার আমার এক হওয়া আমাদের জন্মসূত্রে। "
"মানে?"
কিছুই বুঝতে পারছে না মহিমা। ছেলেটা বুঝতে পারে মহিমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কথাগুলো, ভাঙিয়ে বলতে গেলেও অনেক কথা বলতে হবে তাই সংক্ষিপ্ত করে বলে..
"আপনার সম্পূর্ণ নামটা কি মহিমা খান শায়লা?"
মহিমা আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে ছেলেটির চেহারার দিকে। মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল "হ্যাঁ"
ছেলেটা মুচকি হাসি হেসে বললো "আমি সোহেল। ১০১ নাম্বার রুমের রহস্যে কেন্দ্রিক ১০১ তম ধর্ষিতা শায়লার ছেলে।.."
"চলবে"