'Saradiya' kobi Subho Dasgupta || শারদীয়া ... শুভ দাসগুপ্ত
'Saradiya' kobi Subho Dasgupta || শারদীয়া ... শুভ দাসগুপ্ত
পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে আমাকে। কিন্তু আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না। বাসায় বলেও কোনো লাভ হবে না। তাই ফেসবুকের একটা গ্রুপে এসে পোস্ট দিলাম, "বিয়ে করতে চাচ্ছি না। পাত্রের খাবারে কী মেশানো যায়? এমন কোনো আইডিয়া দিন যাতে সম্বোন্ধটা ক্যান্সেল হয়ে যায়।"
একজন বলল, তেলাপোকার চচ্চরি করেন। আরেকজন বলল, ডিমের সেমাই রাঁধেন। আমি একবার ট্রাই করেছিলাম। এতো বাজে হয়েছিলো যে শেষে পাত্রপক্ষ বিয়েই ক্যান্সেল করে দিলো। আরেকজন বলল, ও মা! তুমি বিয়ে করতে চাও না? আমার বাসায় পাঠিয়ে দাও প্লিজ পাত্রপক্ষকে। আমি বিয়ে করতে চাই।"
ওই মেয়ের কমেন্টে আবার একজন রিপ্লাই দিলো, বিয়ে পাগলা মেয়ে ইনবক্সে আসো। তোমার ঘটকালি আমি করবো।
পোস্টে কমেন্টের ঝড়ে আমার নোটিফিকেশন উড়ে যাচ্ছিলো। শেষে আমার একজনের আইডিয়া পছন্দ হলো। পাত্রপক্ষ এলো। আমি শরবতে নুন মিশিয়ে দিলাম। শুধু একটা গ্লাসেই নুন মিশিয়েছিলাম। যেটা পাত্রকেই খাওয়াবো। বিয়ে করার শখ ঘুচিয়ে দিবো একদম। এই ছেলেকে যেভাবেই হোক কাটাতে হবে।
ভাবি শরবতের ট্রে নিয়ে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছিলো। আমি ভাবিকে আটকে বললাম, আমাকে দাও। আমি নিয়ে যাব।
ভাবি আমার কথা শুনে হা হয়ে আছে। যেই মেয়ে বিয়ে করতে চাইছে না সেই মেয়ে এখন নিজে থেকে শরবতের ট্রে নিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে যেতে চাইছে!
আমি শরবত নিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে সালাম দিলাম। একজন একজন করে সবাইকে শরবত দিচ্ছিলাম। একদম শেষে পাত্রকে শরবত দিলাম। কিন্তু আমার প্ল্যানে জল ঢেলে দিয়ে সে আমার নুনে ভরা শরবত মুখেও তুললো না। যেমন শরবত তেমনই রয়ে গেল গ্লাসে।
পাত্রের বাবা বললেন, আমার ছেলে ইফতি, ওর মতো ছেলে হাজারে একটা পাওয়া যায়। নিজের ছেলে বলে বলছিনা। আমার ছেলে লাখে একটা। হা হা হা হা....
এরপর আমাকে আর ইফতিকে আলাদা করে কথা বলতে দেয়া হলো। আমি আঙ্গুলে শাড়ির আঁচল মুচড়ে বললাম, আপনি শরবত খেলেন না কেন? পছন্দ করেন না?
ইফতি হেসে বলল, সেধে সেধে কী আর কেউ নিজের পেট খারাপ করতে চায় বলুন!
আমি অবাক হয়ে বললাম, মা মা মা মানে! কী বলছেন! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
ইফতি হাসতে হাসতে বলল, আপনি যেই গ্রুপ থেকে আইডিয়া নিয়ে আমার জন্য স্পেশাল শরবত বানিয়েছেন ওই গ্রুপে আমিও ছিলাম। আপনার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই না এসেছি।
আপনাকে তো আমি অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতাম। আপনার সব লেখা গুলো পড়তাম আমি। কাল রাতেই তো গ্রুপে আপনার পোস্ট দেখলাম। সবাই আপনাকে কত কত আইডিয়া দিলো। প্রত্যেকটা কমেন্ট পড়েছি আমি। ভাগ্যিস তেলাপোকার চচ্চরিটা বানান নি। তাহলে তো একদম......
রাগে আমার সারা শরীর জ্বলছিলো। আমি মুখ বেকিয়ে বললাম, ধূর! আপনি ভীষণ বদ।
এরপর বাবা আমাকে এই বদ ছেলের সাথে বিয়েটা দিয়েই দিল।
তিরিশ বছর পর.....
বিয়ের তিরিশ বছর পার করে ফেললাম একসাথে। এক সময় যাকে কাটিয়ে দিবো ভেবেছিলাম। তার সাথেই তিরিশটা বছর একসাথে কাটিয়ে দিলাম।
এখন আমাদের ছেলে বড় হয়েছে। আজ আমাদের ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি৷ মেয়ে নিজের হাতে শরবত নিয়ে এসেছে৷ ইফতি পান চিবোতে চিবোতে বলল, হ্যাঁ গো মেয়ে তোমার কিন্তু পছন্দ টছন্দ থাকলে আগে থেকেই বলতে পারো। এই যে আমার পাশে দেখছো এনাকে। ইনি আমার শরবতে নুন মিশিয়ে দিয়েছিলো। দাঁড়াও আগে আমি খেয়ে দেখছি। আমাকে দাও ওর শরবতখানা।
মেয়েটা থতমত খেয়ে বলল, ইয়েএএ মানেএএ ওটা আপনি খাবেন না প্লিজ।
ইফতি বলল, কেন বাছা! খাবো না কেন?
মেয়েটা বলল, ওটাতে মরিচের গুঁড়ো আছে। ওটা আপনার জন্য না, আপনার ছেলের জন্য।
একথা বলেই মেয়েটা দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।
ইফতি হাসতে হাসতে বলল, ভাগ্যিস তিরিশ বছর আগে তুমি এই টেকনিকটা এপ্লাই করেছিলে। নয়তো আজকে ঝালে আমার ছেলের মুখ জ্বলে যেতো।