Bangla Kobita Abritti | ব্রিলিয়ান্ট ছেলে - শুভ দাশগুপ্ত | Bengali Recit...

Bangla Kobita Abritti | ব্রিলিয়ান্ট ছেলে - শুভ দাশগুপ্ত | Bengali Recit...

সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলার ৬টা মানুষকে গলা কেটে হত্যা করে ফেলেছে। কিলারের কথা অনুযায়ী আরও ১ জন "ফয়সাল" খুন হবে।
সি আই ডি অফিসার ফাহিম শুধু ভাবছিল কিভাবে এই কিলারকে আটকানো যায়।
...
মুন্না; স্যার এই সিরিয়াল কিলার তো একটার পর একটা খুন করেই চলেছে।
ফাহিম; দেখো কিলার যে ই হোক। তার সাথে তানসিকার কোন না কোন কানেকশন আছে।
মুন্না; হ্যা স্যার এটা ঠিক।
ফাহিম; মুন্না একটা কাজ করো। দেশের সব চ্যানেলের একজন করে সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানাও।
মুন্না; কেন স্যার?
ফাহিম; খেলা হবে।
....
দেশের প্রতিটি চ্যানেলের সাংবাদিকদের নিয়ে ফাহিম এবং তার টিম একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যেটা লাইভ প্রতিটি চ্যানেলে প্রচার করা হচ্ছিল।
..
লাইভ সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম বলে " আসল খুনী আমরা পেয়ে গেছি। খুনী যেই করাত দিয়ে খুন গুলো করতো সেটা আমরা পেয়ে গেছি। সেই করাতের ফিংগার প্রিন্ট এর সাথে তানসিকার ফিংগার প্রিন্ট মিলে গেছে। তাই তানসিকাই কিলার "
একজন সাংবাদিক বলে " স্যার দেশের প্রতিটি জনগণ চায় এই সিরিয়াল কিলারের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি হোক কিন্তু তানসিকা একজন মেন্টাল ডিসওর্ডার পেশেন্ট তার বেশি হলে যাবতজিবন কারাদণ্ড হবে। এটাতে দেশের মানুষ সন্তুষ্ট নয়। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন? "
ফাহিম বলে " আমি কথা দিচ্ছি দেশের মানুষ এমন একটা নিউজ পাবে যেটা তারা চাচ্ছিল"
...
সংবাদ সম্মেলন শেষ হলো।
...
মুন্না; স্যার এটা কি হলো?
ফাহিম; তোমাকে ২য় যেই কাজটা করতে বলেছি করেছ?
মুন্না; হ্যা স্যার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে " তানসিকাকে এনকাউন্টারে মারা হবে "...
ফাহিম; এটা একটা বাজের মতো ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকে।
মুন্না; কিন্তু স্যার এগুলো কেন?
....
ফাহিম; (মুচকি হেসে) মুন্না তুমি খেয়াল করেছ যখনি আমরা তানসিকাকে সিরিয়াল কিলার ভেবে চার্জশীট বানাচ্ছিলাম তখনি কিলার আমাকে কল দেয়।
মুন্না; হ্যা স্যার।
ফাহিম; আমি শুধু এটাই ভাবছিলাম " ও আমাকে কল দিল কেন? " আসলে ও তানসিকার কোন ক্ষতি চায় না তাই সেদিন বাধ্য হয়েই কল দিয়েছিল।
মুন্না; What a planning Sir...
ফাহিম; আজ সংবাদ সম্মেলন দেখবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখবে কিলার। এখন সন্ধ্যা ৭টা। ১০টার মধ্যেই কল আসবে।
....
ফাহিম এবং তার টিম অপেক্ষা করছিল। রাত ১০;৩৩....
হঠাৎ ফাহিমের ফোনটা বেজে উঠে।
...
ফাহিম; কে?
--; মত্ত।
ফাহিম; চিনি না।
মত্ত; তানসিকাকে ফাসিয়ে কেইস ক্লোজ করছেন।
ফাহিম; তানসিকাই সিরিয়াল কিলার।
মত্ত; আমি সেলেন্ডার করবো কিন্তু আমার মিশন শেষে।
ফাহিম; তানসিকার এনকাউন্টার হয়ে যাবে।
মত্ত; তানসিকার কিছু হলে এই শহর মৃত্যুপুরীতে পরিনত হবে।
(কলটা কেটে যায়)
...
সাইবার সেলের ট্রেকিং টিম এতক্ষণ কলটি ট্রেক করার ট্রাই করছিল এবং সেটা অলরেডি ডান।
ফাহিম তার সহকর্মী মুন্না এবং টিম নিয়ে চলে যায় ধানমন্ডির সেই লোকেশন অনুযায়ী বাড়িতে।
পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে।
দরজায় টোকা দেয় মুন্না কিন্তু কেউ দরজা না খোলাতে মুন্না দরজা ভেঙে ফেলে এবং ভিতরে প্রবেশ করে।
রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই কেউ মুন্নাকে পিছন দিক থেকে ধরে গলায় ব্লেড ধরে আর ফাহিম পিস্তল তাক করে।
.
একটা ছেলে যার চুল ছোট ছোট। মাথায় টুপি। টিশার্ট পড়া এবং হাফ প্যান্ট পড়া। লম্বা ৫ফুটের একটু বেশি। বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। ফরসা স্মার্ট একটা ছেলে। মুখে কোন দাড়ি নেই।
.
ফাহিম পিস্তল তাক করে " ওকে ছেড়ে দাও "
ছেলেটি বলে " আমার মিশন শেষে আমি এমনিতেই সেলেন্ডার করবো..আমাকে পালাতে দিন "
মুন্না বলে " স্যার ওকে পালাতে দিবেন না "
...
হঠাৎ করে রুমের ছাদ থেকে জানালা দিয়ে কিলারের পিছন দিয়ে রুমে প্রবেশ করে সি আই ডি অফিসার নিশান। নিশান পিছন থেকে কিলারের মাথায় আঘাত করে এবং কিলার মুন্নাকে ছেড়ে অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।
কিলারকে এরেস্ট করা হয়।
.
কিলারের জ্ঞান ফিরলে...
কিলারকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ফাহিম....
.
ফাহিম; Who r u?
কিলার; (চুপ)
ফাহিম; তানসিকার সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
কিলার; (চুপ)
ফাহিম; তুমিই কি আতিফ?
কিলার; (মাথা তুলে কাদতে কাদতে) আমার নাম নাদিয়া।
ফাহিম; ছেলের নাম নাদিয়া হয়।
কিলার; আমি ছেলে ছিলাম না।
(ফাহিমের মাথাটা চক্কর দেয়। ফাহিম ভালো করে বসে)
ফাহিম; কি বলতেছ তুমি এগুলো....
কিলার; আমার বাসা মুন্সিগঞ্জ। আমি আমার বাবা মায়ের ৩য় মেয়ে ছিলাম। তবুও আমার বাবা অসন্তুষ্ট ছিল না। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। আমার অন্তরঅাত্মা আমাকে জানান দিতে থাকে আমি ছেলে। বাহির থেকে আমি মেয়ে হলেও আমার ছেলেদের সবকিছু ভালো লাগতো। আস্তে আস্তে আমি প্রাইমারি স্কুল শেষ করে হাই স্কুলে উঠি। আমি তখন পুরো পুরি বুঝে ফেলি আমি একজন ছেলে শুধু ওপরে ওপরে মেয়ে। তখন ফ্যামিলিকে এটা জানালে তারা আমাকে প্রচুর মারে এবং বুঝায় কিন্তু আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না।
ফাহিম; (জাস্ট অবাক হয়ে শুনছে) তারপর।
কিলার; আমাকে একদিন ঢাকা ঘুরার কথা বলে বাবা ঢাকা নিয়ে আসে। আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।ঘুরতে ঘুরতে একটা রাস্তায় এসে বাবা আমাকে বলে "একটু দাড়াও..আমি প্রসাব করে আসি" বাবা সেই যে গিয়েছিল আর আসে নি। আমি ঢাকায় কাউকে চিনি না। ঘন্টার পর ঘন্টা বাবার জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু বাবা আসে না। এদিকে রাত হয়ে যায় আমি রাস্তার পাশে বসে কাদছিলাম প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল। হঠাৎ একজন ব্যাক্তি আমার কাছে আসে। কাচাপাকা দাড়ি চুল একটা সাদা পাঞ্জাবি পড়া। আমার থেকে জানতে চায় কি হয়েছে। আমি সব খুলে বলি। তারপর সে আমাকে কিছু খাবার দেয় এবং সেদিন রাতে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং থাকতে দেয়।
ফাহিম; তারপর।
কিলার; লোকটির নাম আব্দুল তালিবুল ইসলাম। তিনি পরেরদিন সকালে আমাকে নিয়ে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ যান এবং আমার কথামত খুজে খুজে আমার বাড়ি বের করেন। কিন্তু সেদিন আমার বাবা-মা আমাকে অস্বীকার করে। তারা আমাকে চিনে না বলে দেয়। সেদিন প্রচুর কান্না করেছিলাম। পরে তালিব আংকেল আমাকে নিয়ে একটা যায়গায় বসে এবং তার মনে সন্দেহ ঢুকে যায় যে আমার বাবা মা আমাকে অস্বীকার করে তার মানে ঘটনা আছে। তখন আমি তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলি।
সে শুনে ৫ মিনিট চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল তারপর আমাকে কোলে নিয়ে ঢাকা চলে আসে। তার একটা এতিমখানা ছিল সেখানে সে আমাকে রাখে। আমি বড় হতে থাকি আর আমার সমস্যাটাও আরো এক্সপ্লোর হতে থাকে।
আমি যখন কলেজে মাত্র ভর্তি হই তখন তালিব আংকেল আমাকে একজন সায়েক্রেটিস্ট এর কাছে নিয়ে যায়। সায়েক্রেটিস্টকে আগেই বলাই ছিল সবকিছু। সে আমার সাথে প্রচুর সময় কাটায় কথা বলে এবং শেষে ছাড়পত্র দেয় যে হ্যা আমি লিঙ্গান্তর হতে পারবো।
শুরু হয় আমার hormone Replacement therapy (HRP)... আমার শরীরে প্রয়োগ করা হয় Androgen... তারপর একটা অপারেশন এর মাধ্যমে আমি মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে উঠি পুরোপুরি। অপারেশন এর পুরো ব্যয় বহন করে তালিব আংকেল। তালিব আংকেল আমার নাম দেয় " তাফসির "।
শুরু হয় আমার নতুন লাইফ। আমি খুব খুশি ছিলাম তাফসির হয়ে।
.
ফাহিম; তারপর।
তাফসির; তালিব আংকেল আমাকে পড়াশুনা করাতেন।আমাকে আলাদা একটা বাসায় রাখতেন। আমি ছিলাম তার লাইফের একটা গোপন অধ্যায়। তার পরিবারের সব কথাই আমাকে শেয়ার করতেন।
তালিব আংকেল ছিল তানসিকার বাবা। একদিন হঠাৎ এসে বললেন " তানসিকার বিয়ে ঠিক করেছেন " আংকেল খুব খুশি ছিল। তার চোখে মুখে কি আনন্দ। তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে।
কিন্তু বিয়ের দিন হঠাৎ তানসিকা পালিয়ে যায় আর তালিব আংকেল ভেঙে পড়ে। এদিকে প্রতিবেশীরা তাকে কথা শুনাতে থাকে। প্রচুর লজ্জা আর দুঃখে আংকেল সুইসাইড করে আসলে সে তার দুঃখের কথা কাউকে শেয়ার করতে পারে নি।
পরেরদিন আমি জানতে পারি আসলে তানসিকা পালিয়ে যায় নি। তানসিকাকে কিছু ছেলে কিডন্যাপ করেছিল। তানসিকা তার বাবার মৃত্যুতে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সুন্দর একটা ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দেয় আর ফেরেশতার মতো মানুষকে মেরে ফেলে ওরা। তাই আমিও ওদের শাস্তি দিচ্ছি।
ফাহিম; কিন্তু এটা ঠিক না।
তাফসির; এখনো একটা কুকুরের বাচ্চা এই দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
(ফাহিম উঠে চলে যায়)
.
ফাহিম সাংবাদিক এবং শহরবাসীকে জানায় " তাফসির ছিল তালিব সাহেবের পালিত সন্তান। তালিব সাহেবের মৃত্যুতে তাফসির প্রতিশোধে নামে "
..
নাদিয়া থেকে তাফসির হওয়ার গল্পটা ফাহিম গোপন রাখে।
তাফসিরের চার্জশীট জমা দেয় ফাহিম এবং তাফসিরের যাবতজীবন কারাদণ্ড হয়।
তানসিকা মানসিক হসপিটালেই চিকিৎসারত অবস্থায় থাকে।
...
৮ দিন পর হঠাৎ একদিন সকালে শহরের শাপলা চত্বরে একটি লাশ ঝুলে থাকতে দেখে শহরবাসী। লাশটির গলা কাটা,ডান হাত ডান পায়ের বুড়ো আঙুল মিসিং এবং বাম হাতের পেশিতে সেলাই করা চিরকুট।
...
মুন্না; স্যার লাশটা শেষ ফয়সালের কিন্তু তাফসির তো জেলে। একে কে মারলো?
ফাহিম মুচকি হেসে বলে " দুনিয়াতে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যেগুলো আসলে রহস্য হয়েই থাকে উদঘাটন হয় না। ধরে নাও এটাও সেরকম একটা ঘটনা"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url