Allah ke jara beshese valo bangla islamic song, bangla song, jihadi gan

 
আমার স্ত্রী যখন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে তখন আমি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় 
মাটিতে পড়ে ছিলাম। আমাকে বেঁধে আমার সামনে ওকে ধর্ষন করা হয়েছে তাই বারবার চিৎকার করে নিষেধ করা সত্বেও সে আমার সামনে আত্মহত্যা করে। যদিও আমি জোরে চিৎকার করতে পারি নাই কারণ আমার মুখও বাঁধা। 

যেদিনের কথা বলছি সেদিন ছিল শুক্রবার।
এই নদীতে শুক্রবার ছুটির দিনে মানুষের একটু চাপ বেশি থাকে, মাগরিবের অনেক পরে আমি বাড়িতে গেলাম। বউ আমার জন্য গরম ভাত নিয়ে বসে ছিল, চুলোর উপর নিবু নিবু আগুনে তরকারি ছিল। বৈঠা রেখে টিউবওয়েল থেকে হাতমুখ ধুয়ে ঘরের মধ্যে গেলাম। বউ গামছা এনে আমার হাতে দিয়ে নিজে ভাত বাড়তে চলে গেল। একসঙ্গে খাবার শেষ করে যখন ঘুমাতে গেলাম তখন রাত এগারোটা।
সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় শুয়ে একটু পরে ঘুমিয়ে গেলাম, কিন্তু মাঝরাতে বউয়ের ধাক্কায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। 
 
" বউ বললো, কে যেন তোমাকে ডাকে। "
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম, তারপর সত্যি সত্যি যখন শুনলাম আমাকেই ডাকছে তখন আমি বিছানায় শুয়েই জিজ্ঞেস করলাম:-
" কে আপনি? "
 
" নাবিল মাঝি দরজা খোল, তোমার সঙ্গে একটু জরুরি কথা আছে! "
" আমি বললাম, এতো রাতে কিসের কথা? কাল সকালে আসবেন তখন কথা হবে। "
" কালকে সকালে খুব ভোরবেলা তোমার নৌকা নিয়ে ঘুরতে চাই, বিদেশি কিছু মানুষ আছে তারা সূর্য ওঠার আগে নদীতে ঘুরতে চায়। আমরা তো তোমার কথা চিন্তা করে এসেছি, তোমার অনেক সুনাম আছে। "
 
এমন কথা শুনে আমি দরজা খুলতে গেলাম, যেহেতু তেরমুখ সেতুর এইখানে আমি নৌকায় করে মানুষকে ঘুরাই। তাই আমার কাছে মানুষ আসতেই পারে, তাছাড়া বিদেশিদের তো আবার সখের শেষ নেই। 
 
কিন্তু দরজা খুলে দেবার সঙ্গে সঙ্গে ৪/৫ জন মানুষ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলো। তাদের সবার মুখে কালো মুখোশ পরা, আমি কিছু বলার আগেই ওরা আমাকে ঘিরে ধরে। তারপর ওদের সঙ্গে আনা রশি দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে, মুখে শক্ত কাপড় দিয়ে বাঁধে যার জন্য কোন আওয়াজ করতে পারি নাই। এরপর আমার চোখের সামনে ওরা আমার স্ত্রীকে...
 
আমরা যেখানে থাকি এটা একটা বিলের মতো, অনেকটা আশেপাশে কোন বসতবাড়ি নেই। তাই টুকটাক সামান্য শব্দ কেউ শুনতে পেল না, আমি পাথর হয়ে পরে রইলাম।
সবাই যখন চলে গেল তখন আমার স্ত্রী আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। পরনের কাপড় ঠিক করে কোনমতে বিছানা ছেড়ে উঠে আমার সামনে এসে বললো:- 
 
" গতকালই জানতে পেরেছি আমি মা হতে যাচ্ছি, ভেবেছিলাম কালকে সকালে বলবো। কিন্তু ওরা সবকিছু শেষ করে দিয়ে চলে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দিও। " 
 
এ কথা বলেই আমার স্ত্রী নিজের ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিলো। আমি আমার চোখের ইশারায় আর গোঙানির শব্দে তাকে ফেরাতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। চোখের সামনে স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশের দিকে তাকিয়ে সেই ভয়ঙ্কর রাতটা পার করতে কতটা কষ্ট হয়েছে বোঝাতে পারবো না। 
 
সকাল হলো, আমার সঙ্গে আরেকটা ছেলে নৌকা চালায় তার নাম ফিরোজ। ফিরোজ প্রতিদিন সকালে আমাকে সঙ্গে করে তারপর নদীতে যেত। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে দরজা খোলা দেখে ভিতরে প্রবেশ করলো। আর সঙ্গে সঙ্গে ঝুলন্ত লাশ ও আমার অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠলো। 
 
আমার ইশারা দেখে তাড়াতাড়ি আমার বাঁধন খুলে দিল, তারপর আমি শক্তিহীন শরীর নিয়ে দৌড়ে গিয়ে স্ত্রীর লাশ নামালাম। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম কিন্তু সেই কান্নার কোন ফল ছিল না।
পুলিশ আসলো, 
 
রাতের সমস্যত ঘটনা আমি বললাম, অজ্ঞাত নামে মামলা হলো। আমার স্ত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেল, দুরের প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে নিরুপায় আমি বসে রইলাম মাটিতে।
স্ত্রীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সেদিন আর হাতে পেলাম না। পুলিশ বললো লাশ নাকি আগামীকাল সকালে পাবো, তাই রাতটা অপেক্ষা করতে হবে। 
 
মাগরিবের পরে নিস্তব্ধ বাড়ির মধ্যে আমার সঙ্গে ফিরোজ ও জামাল ছাড়া কেউ ছিল না। চোখের পানি ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে, একটু পর পর মনে হচ্ছে এখনই হয়তো কেউ একজন ভাতের জন্য ডাক দেবে।
হঠাৎ করে চোখের সামনে স্ত্রীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলাম। তার পরনে গতকাল রাতের সেই পোশাক, ঠিক যেন সেই লাশটা আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
- আমি বললাম, তুমি আসছো? 
 
- সে বললো, হ্যাঁ গো না এসে কি করবো? ওরা আমাকে একটা বন্ধ ঘরের মধ্যে একা একা ফেলে রেখেছে। আমার বড্ড ভয় লাগে, তোমাকে ছাড়া আমি তো থাকতে পারি না।
- তাহলে চলো, ঘরে চলো।
- না তার আগে কলপাড়ে গিয়ে গোসল করতে হবে, শয়তান গুলো আমাকে অপবিত্র করেছে। তুমি তো এখনো আমাকে গোসল করালে না, আমি কি কখনো এভাবে থেকেছি।
- না তো।
- তাহলে চলো। 
 
আমি ওর পিছনে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি, সামনে অন্ধকার তবুও তাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মনে হয়। কিন্তু আরেকটু সামনে গিয়ে আর খুঁজে পাচ্ছি না আমার স্ত্রী কে, চারিদিকে ঘন অন্ধকার। সামনে পিছনে চারিদিকে তাকিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি কিন্তু কোন কিছুর দেখা পেলাম না। হঠাৎ করে কিছু একটার সঙ্গে জোরে ধাক্কা লাগলো, আমি মাটিতে পরে গেলাম। 
 
তাকিয়ে দেখি আমি পরে আছি আমার থাকার স্থান থেকে অনেকটা দুরে বটগাছের কাছে। কিন্তু এতদূর কখন এলাম? আমি তো মাত্র কিছুটা পথ এসেই তাকে হারিয়ে ফেলেছি, তাহলে কি সেটা স্বপ্ন ছিল? আমি কি তাহলে স্বপ্ন দেখে তন্দ্রার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে এসেছি? 
 
কারো বিকট বিভৎস হাসির শব্দে চমকে গেলাম, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি চারজন দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে। অন্ধকারে তাদের কারো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না, আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে।
হঠাৎ করে ওদের মধ্যে একজন বললো " এটাকে তাহলে এখনই মেরে ফেলি, নাহলে আবার নতুন কিছু ঝামেলা হতে পারে। "
 
" আরেকজন বললো, স্ত্রী হারানোর বেদনায় খুব কষ্ট পাচ্ছে বেচারা, তারচেয়ে বরং তাকেও তার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দাও। তাহলে বেচারা নিজেও শান্তি পাবে, আর আমরাও নিশ্চিত থাকবো৷ "
" প্রথমজন বললো, গতকাল রাতেই ওকে মেরে আসা উচিত ছিল, তাহলে এখন আবার কষ্ট করে আসার দরকার ছিল না। "
 
" দ্বিতীয়জন বললো, তখন তো বুঝতে পারিনি যে এর স্ত্রী আত্মহত্যা করবে। ভেবেছিলাম গরীব তাই চুপচাপ সহ্য করতে পারবে, কিন্তু আত্মহত্যা করে জীবন দেবে ভাবিনি। "
" প্রথমজন বললো, আমাদের তিনজনের চেয়ে তুই একাই বেশি অত্যাচার করছো। মেয়েটা তো আত্মহত্যা না করে উপায় নেই। " 
 
চতুর্থ একজন হাত দিয়ে কিছু ইঙ্গিত দিল, আর প্রথমজন তার মুখের কাছে কান নিয়ে কি যেন শুনে চুপ হয়ে গেল।
আমি মনে মনে ভাবলাম, বাকি দুজন কোনকিছু বলছে না। তারা কি আমার পরিচিত?
চলবে...
.
গল্প:- কিছু কথা কাঁদে আড়ালে।
পর্ব:- ০১
লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url