Bangla New Song 2015 Bazi By Belal Khan
Bangla New Song 2015 Bazi By Belal Khan
যাদের প্রথম ভালবাসা হারিয়েছে শুধু তাদের জন্য এইগানটা 100% Favorite Song..আজকের রাতটা নিরার কোনো এক অজানা কারণে নির্ঘুম কাটল। পুরো পেজে ঘুরে নিজের সবগুলো উপন্যাসের কমেন্ট বক্সে গিয়ে অর্নবের কমেন্ট খুঁজতে লাগল। পেজে ঘুরে সে বুঝতে পারল তার লেখালেখির শুরু থেকেই অর্নব তার নিয়মিত পাঠক। এবং প্রতিটি পর্বে তার সুন্দর গঠন মূলক মন্তব্য রয়েছে। যা তাকে লেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে পাঠকের মন্তব্য। এতে লেখকের লেখার আগ্রহ বাড়ে। সে ভাবছে পৃথিবীটা আসলে গোল। নয়তো এর সাথে কেন আমার দেখা হলো। নিরা বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল৷ পা টিপে টিপে এমন ভাবে সেদিকে গেল যেন কোনো শব্দ না হয়। গ্লাসের ফাঁকে তাকিয়ে দেখল অর্নব কী করছে। অর্নব তখন ফোনে কিছু একটা পড়ছে। হয়তো নিরার লেখা গল্পই পড়ছে। নিরা ধীরে ধীরে সেখান থেকে বিছানায় আসল। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। তারসাথে মিশে গেছে ভয়। এ লোকটা যদি জানতে পারে সেই লেখক ইপ্সিতা রাহমান তবে তো সর্বনাশ। নিরা তাড়াতাড়ি প্লে স্টোর থেকে একটা এপ লক নামাল নিজের ফেসবুক এবং নোট এপ দুটো লক করে দিল। যদি কোনোদিন তার ফোন অর্নবের হাতে পড়ে যায় তবে সর্বনাশ হবে। অর্নবের কাছে সে খুবই তুচ্ছ মেয়ে। তাই নিরা কিছুতেই চাইছে না সে জানুক সে বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় লেখক। মানুষের জীবন কী অদ্ভুত তাই না! কীভাবে কীভাবে যেন সবকিছুর সমীকরণ কত সহজে হয়ে যায়। যা হবার নয় তাই হয়। ★★★ জানালা দিয়ে গলে আসা রোদের ঝিলিক চোখে পড়ায় নিরার ঘুম ভাঙে। কেন সে জানে না অবচেতন মনে তার পাশের বালিশটার দিকে তাকিয়ে দেখল। না আজকেও মানুষটা ঘুমাতে আসেনি। তার নিজের খুব অপরাধ বোধ হলো। তার জন্য কেন কেউ নিজের ঘর বিছানা ছেড়ে কষ্ট করে ঘুমাবে। তাই সে তৎক্ষনাৎ ঠিক করে নিল আজ থেকে সে নিচে ঘুমাবে। সে চায় না অন্তত তাকে কেউ করুণা করুক। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দরজার সামনে অর্নবের সাথে সামনাসামনি হয়ে গেল। দুজনেই অপ্রস্তুত হাসল। অর্নব একপাশে সরে গিয়ে দাঁড়াল। নিরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মুখ মুছে নিল৷ অর্নব কী ভেবে যেন একবার সেদিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। হাতে সময় নেই আজ একটা ইমারজেন্সি অপারেশন আছে তাই অর্নব তাড়াহুড়ো করছে। নিরা চুল আঁচড়ে নিচে চলে গেল। অর্নব ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে সবাই নাস্তা করতে বসেছে। সে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "মা আজ একটা ইমারজেন্সি অপারেশন আছে তাই নাস্তা করতে পারব না। আসছি আমি।"নিরা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে নাস্তা করছে একবার ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পেত এক মুহূর্তের জন্য অর্নব তার দিকে তাকিয়েছিল। ★★★ রাত কারো জন্য সুখের হয়ে নামে, আর কারো জন্য দুঃখের হয়ে। কেউ বা দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর কেউ সুখের নিশ্বাস নেয়। মানুষের জীবনটা এমনই বৈচত্রময়। আজ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার জন্য এ রাত কী অর্থ বহন করে তবে আপনি কী বলবেন প্রিয় পাঠক?এটুকু লেখে পেজে পোস্ট করতেই একটা মন্তব্য উড়ে এলো। "আমার কাছে রাতের অনেক অর্থ। আজকের রাতটা কেমন ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি কোনো কষ্টে আছি। আবার মনে হচ্ছে আমার কষ্ট কোনো অর্থই বহন করে না। তবে এ মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আপনার লেখা পড়ে আমার রাতটা একটু হলেও ভালো কাটবে।" এ মন্তব্যকারির আর কেউ নয় ডাক্তার অর্নব। কী সুন্দর করে লিখে সে। নিরা ভাবল সে যদি চেষ্টা করে আমার থেকেও ভালো লিখতে পারবে বলে আমার মনে হয়। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি মানুষটাকে যতটা খারাপ ভাবি ততটা হয়তো সে না। কারণ যার অনুভূতি এত সুন্দর সে খারাপ হয় কী করে! যার অনুভূতি যত সুন্দর সে তত ভালো লিখতে জানে।আমার খুব ইচ্ছে করছে তার মন্তব্যের উত্তর দিতে। কিন্তু ভয় করছে যদি কিছু মনে করে সে। অনেক ভেবে রিপ্লাই দিলাম। "আপনার কষ্টের কারণটা কী জানতে পারি?"রিপ্লাই আসল, "মনে করুন আপনার গল্পের কোনো নায়িকার বিরহে কষ্ট পাচ্ছি।" এটুকু লিখে একটা হাসির ইমোজি দিয়েছে সে। বুঝল সে মজা করছে। আবার পরক্ষণেই নিরা ভাবল সে কী আমাকে নিয়ে কষ্টে আছে? তার সুন্দর গুছানো জীবনটা তো আমার জন্যই এলোমেলো হয়েছে। হয়তো সে এখন দিয়াকে বিয়ে করত। আর দিয়া তার বউ হলে এখন নিশ্চয়ই তাকে বারান্দায় রাত কাটাতে হত না। নানা ভাবনায় নিরার মনে যে রোদের মতো উজ্জ্বল এক টুকরো ভালো লাগা ছিল। হঠাৎ তা নিভে গেল। আবার মন ভার হয়ে গেল। নিজেকে একটা উচ্ছিষ্ট বৈ কিছুই মনে হলো না। আর এই মন খারাপ হওয়া মানে অনেকটা সময় ধরে লিখতে বসা। যখন সে লিখতে বসে তখন তার কোনোদিকে মন থাকে না। শুধু প্রতিটি চরিত্রে সে নিজেকে ভেবে লিখে যায়। ভাবে তাদের হাসিই তার হাসি। তাদের কান্নাই তার কান্না!★★রাতে নিরা নিচে একটা চাদর পেতে অর্নব আসার আগেই শুয়ে পড়ল। সে কিছুতেই চায় না অর্নবের মুখোমুখি হতে। এটা নিয়ে কোনো জবাবদিহিও করতে সে নারাজ। তাই শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করল। অর্নব বারান্দার দিকে হেঁটে আসতেই তার পায়ে কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল। নিরা কিছু পড়ার শব্দ শুনে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারল তার পায়ের উপর ভারি কিছু পড়েছে। মাথা উঁচু করে দেখতেই হতভম্ব হয়ে গেল। কিছু না দেখার ভান করে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবল, "এ লোক নাকি ডাক্তার একটু দেখেও হাঁটে না। ঘরে এত জায়গা থাকতে আমার পায়ের কাছেই এসে পড়ল। মরণ আমার। ধুর উঠছে না কেন এ লোক। কী ভারী!অর্নব পড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে রইল। কীসের উপর পড়ল এটা দেখতে উঠে বসল। দেখল নিরা নিচে শুয়ে আছে। মুহূর্তে তার মেজাজটা বিগড়ে গেল। উঠে বসে বলল, " এই মেয়ে তোমার মাথায় ঠিক কত রকমের সমস্যা আছে। এভাবে নিচে শুয়েছো কেন? তোমার জন্য আমি যে পড়ে গেলাম।"নিরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল বলল, "এই যে চুপ থাকেন। কীসের ডাক্তার হইছে যে দেখেশুনে চলতে পারেন না?""এই মেয়ে তুমি আমার ডাক্তারি নিয়েও কথা শোনাচ্ছো?""হ্যাঁ শোনাচ্ছি। চোখ মনে হয় হাতে নিয়ে হাঁটেন। এতবড় বড় চার চোখ কেন আছে শুনি?"অর্নব অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, "চার চোখ দেখলে কোথায়?"নিরা ডান হাতের দুই আঙুলের ইশারায় বলল, "দুটো অর্জিনাল, আর দুটো ফেইক। মানে চশমা।"অর্নব নিরার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বারান্দায় চলে গেল। নিরা ভাবল বিছানায় ঘুমানোর জন্য তাকে জায়গা করে দিলাম। আর সে কী কিনা আবার বারান্দায় চলে গেল! আজব লোক তো! ধুর সে যা করার করুক। আমি নিচেই ঘুমাব।★★★দেখতে দেখতে নিরার বিয়ের এক মাস কেটে গেছে। সময়ের সাথে সাথে তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। অর্নব হাসপাতালে আসে যায়। রাতে বারান্দায় ঘুমায়। নিরা নিচেই ঘুমায়। দুজনের জেদে বিছানাটা খালি পড়ে থাকে। দুজন দু ' জায়গায় ঘুমায় এ হচ্ছে তাদের দাম্পত্য। খুব বেশি কেউ কারো সাথে কথা বলে না। যা কথা হয় তা শুধু প্রয়োজনের। হঠাৎ একদিন অর্নব কতগুলো বই এনে নিরাকে দিয়ে বলল, "বইগুলো রাখো। তুমি বোধহয় বই পড়তে পছন্দ করো। এগুলো তোমার ভালো লাগবে আশাকরি।"নিরা অবাক হয়ে বলল, "আমার জন্য আপনি বই এনেছেন?"অর্নব ভ্রুকুচকে বলল, "বই আনা কী দোষের কিছু? ""আমি কখন বললাম দোষের। আপনি সবসময় এত বেশি কেন বুঝেন বলেন তো? কাঠখোট্টা ডাক্তার একটা।"অর্নব গম্ভীর গলায় বলল, "কাউকে কিছু উপহার দিলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় সেটুকু তো জানোই না। আবার তাকে খারাপ উপাধি দিচ্ছো? তুমি কী জানো? তুমি যে মেয়েটা চুড়ান্ত অকৃতজ্ঞ?"নিরা আগুন চোখে তাকিয়ে বলল, "আপনিও কম যান কীসে! উপহার দিয়ে কেমন খোঁটা দিচ্ছেন।"অর্নব অবাক হয়ে বলল, "এ মেয়ের সাথে কথা বলাটাই ভুল হয়েছে আমার। বিরক্তিকর নেয়ে একটা!" অর্নব হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। নিরা ব্যাক্কলের তার পথের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বইগুলো নাড়াচাড়া করে দেখল। তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর সিডনি শেলডনের কয়েকটি বই। দেখেই খুশি হয়ে বইগুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগল। ভাবল লোকটা মন্দ নয়। বইগুলোর জন্য তাকে একটা ধন্যবাদ দেয়াই যায়। কেন যে সে আসলে আমার মেজাজটা বিগড়ে যায় কে জানে। যতই ভাবি ভালো ব্যবহার করব তা হয় না। বরং উল্টো ঝগড়া হয়ে যায়। আমি মেয়েটা কী আসলেই ঝগড়াটে!★★★সেদিনের পর মায়ানের সাথে আর দিয়ার কথা হয়নি। হঠাৎ এভাবে কল কেটে দেয়ার কারণ সে বুঝল না। তাই দিয়াকে কল দিল। রিসিভ করতেই মায়ান বলল, "কীরে তুই আমাকে কিছুই জানালি না কেন?"দিয়া বলল, "নিরার সাথে অর্নবের বিয়ে হয়ে গেছে। এ খবর আমি তোকে কীভাবে দেই বল তো?মায়ানের যেন বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। কিছু সময় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, " কী বলছিস তুই এসব? তোর সাথে অর্নবের বিয়ে হওয়ার কথা সেখানে নিরা আসল কোথায় থেকে? "নিরা সবকিছু তাকে খুলে বলল। মায়ান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ছয়মাস পর তো তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তখন সে তার স্বপ্নের মানষীকে আপনা করে পাবে।দিয়া তাকে বলল, "তুই তাড়াতাড়ি দেশে চলে আয় মায়ান। তোকে এখন আমার খুব দরকার। "মায়ান কি ভেবে যেন বলল, "আমি কালকের ফ্লাইটে দেশে আসছি।"
আজকের রাতটা নিরার কোনো এক অজানা কারণে নির্ঘুম কাটল। পুরো পেজে ঘুরে নিজের সবগুলো উপন্যাসের কমেন্ট বক্সে গিয়ে অর্নবের কমেন্ট খুঁজতে লাগল। পেজে ঘুরে সে বুঝতে পারল তার লেখালেখির শুরু থেকেই অর্নব তার নিয়মিত পাঠক। এবং প্রতিটি পর্বে তার সুন্দর গঠন মূলক মন্তব্য রয়েছে। যা তাকে লেখার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছে পাঠকের মন্তব্য। এতে লেখকের লেখার আগ্রহ বাড়ে। সে ভাবছে পৃথিবীটা আসলে গোল। নয়তো এর সাথে কেন আমার দেখা হলো।
নিরা বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল৷ পা টিপে টিপে এমন ভাবে সেদিকে গেল যেন কোনো শব্দ না হয়। গ্লাসের ফাঁকে তাকিয়ে দেখল অর্নব কী করছে। অর্নব তখন ফোনে কিছু একটা পড়ছে। হয়তো নিরার লেখা গল্পই পড়ছে। নিরা ধীরে ধীরে সেখান থেকে বিছানায় আসল। অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। তারসাথে মিশে গেছে ভয়। এ লোকটা যদি জানতে পারে সেই লেখক ইপ্সিতা রাহমান তবে তো সর্বনাশ। নিরা তাড়াতাড়ি প্লে স্টোর থেকে একটা এপ লক নামাল নিজের ফেসবুক এবং নোট এপ দুটো লক করে দিল। যদি কোনোদিন তার ফোন অর্নবের হাতে পড়ে যায় তবে সর্বনাশ হবে। অর্নবের কাছে সে খুবই তুচ্ছ মেয়ে। তাই নিরা কিছুতেই চাইছে না সে জানুক সে বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় লেখক।
মানুষের জীবন কী অদ্ভুত তাই না! কীভাবে কীভাবে যেন সবকিছুর সমীকরণ কত সহজে হয়ে যায়। যা হবার নয় তাই হয়।
★★★
জানালা দিয়ে গলে আসা রোদের ঝিলিক চোখে পড়ায় নিরার ঘুম ভাঙে। কেন সে জানে না অবচেতন মনে তার পাশের বালিশটার দিকে তাকিয়ে দেখল। না আজকেও মানুষটা ঘুমাতে আসেনি। তার নিজের খুব অপরাধ বোধ হলো। তার জন্য কেন কেউ নিজের ঘর বিছানা ছেড়ে কষ্ট করে ঘুমাবে। তাই সে তৎক্ষনাৎ ঠিক করে নিল আজ থেকে সে নিচে ঘুমাবে। সে চায় না অন্তত তাকে কেউ করুণা করুক। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুতেই দরজার সামনে অর্নবের সাথে সামনাসামনি হয়ে গেল। দুজনেই অপ্রস্তুত হাসল। অর্নব একপাশে সরে গিয়ে দাঁড়াল। নিরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে মুখ মুছে নিল৷ অর্নব কী ভেবে যেন একবার সেদিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
হাতে সময় নেই আজ একটা ইমারজেন্সি অপারেশন আছে তাই অর্নব তাড়াহুড়ো করছে। নিরা চুল আঁচড়ে নিচে চলে গেল। অর্নব ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে সবাই নাস্তা করতে বসেছে। সে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, "মা আজ একটা ইমারজেন্সি অপারেশন আছে তাই নাস্তা করতে পারব না। আসছি আমি।"
নিরা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে নাস্তা করছে একবার ভালো করে খেয়াল করলে দেখতে পেত এক মুহূর্তের জন্য অর্নব তার দিকে তাকিয়েছিল।
★★★
রাত কারো জন্য সুখের হয়ে নামে, আর কারো জন্য দুঃখের হয়ে। কেউ বা দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আর কেউ সুখের নিশ্বাস নেয়। মানুষের জীবনটা এমনই বৈচত্রময়। আজ যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় আপনার জন্য এ রাত কী অর্থ বহন করে তবে আপনি কী বলবেন প্রিয় পাঠক?
এটুকু লেখে পেজে পোস্ট করতেই একটা মন্তব্য উড়ে এলো। "আমার কাছে রাতের অনেক অর্থ। আজকের রাতটা কেমন ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি কোনো কষ্টে আছি। আবার মনে হচ্ছে আমার কষ্ট কোনো অর্থই বহন করে না। তবে এ মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে আপনার লেখা পড়ে আমার রাতটা একটু হলেও ভালো কাটবে।" এ মন্তব্যকারির আর কেউ নয় ডাক্তার অর্নব। কী সুন্দর করে লিখে সে। নিরা ভাবল সে যদি চেষ্টা করে আমার থেকেও ভালো লিখতে পারবে বলে আমার মনে হয়। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি মানুষটাকে যতটা খারাপ ভাবি ততটা হয়তো সে না। কারণ যার অনুভূতি এত সুন্দর সে খারাপ হয় কী করে! যার অনুভূতি যত সুন্দর সে তত ভালো লিখতে জানে।
আমার খুব ইচ্ছে করছে তার মন্তব্যের উত্তর দিতে। কিন্তু ভয় করছে যদি কিছু মনে করে সে। অনেক ভেবে রিপ্লাই দিলাম। "আপনার কষ্টের কারণটা কী জানতে পারি?"
রিপ্লাই আসল, "মনে করুন আপনার গল্পের কোনো নায়িকার বিরহে কষ্ট পাচ্ছি।" এটুকু লিখে একটা হাসির ইমোজি দিয়েছে সে। বুঝল সে মজা করছে। আবার পরক্ষণেই নিরা ভাবল সে কী আমাকে নিয়ে কষ্টে আছে? তার সুন্দর গুছানো জীবনটা তো আমার জন্যই এলোমেলো হয়েছে। হয়তো সে এখন দিয়াকে বিয়ে করত। আর দিয়া তার বউ হলে এখন নিশ্চয়ই তাকে বারান্দায় রাত কাটাতে হত না। নানা ভাবনায় নিরার মনে যে রোদের মতো উজ্জ্বল এক টুকরো ভালো লাগা ছিল। হঠাৎ তা নিভে গেল। আবার মন ভার হয়ে গেল। নিজেকে একটা উচ্ছিষ্ট বৈ কিছুই মনে হলো না।
আর এই মন খারাপ হওয়া মানে অনেকটা সময় ধরে লিখতে বসা। যখন সে লিখতে বসে তখন তার কোনোদিকে মন থাকে না। শুধু প্রতিটি চরিত্রে সে নিজেকে ভেবে লিখে যায়। ভাবে তাদের হাসিই তার হাসি। তাদের কান্নাই তার কান্না!
★★
রাতে নিরা নিচে একটা চাদর পেতে অর্নব আসার আগেই শুয়ে পড়ল। সে কিছুতেই চায় না অর্নবের মুখোমুখি হতে। এটা নিয়ে কোনো জবাবদিহিও করতে সে নারাজ। তাই শুয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করল। অর্নব বারান্দার দিকে হেঁটে আসতেই তার পায়ে কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল। নিরা কিছু পড়ার শব্দ শুনে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারল তার পায়ের উপর ভারি কিছু পড়েছে। মাথা উঁচু করে দেখতেই হতভম্ব হয়ে গেল। কিছু না দেখার ভান করে আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবল, "এ লোক নাকি ডাক্তার একটু দেখেও হাঁটে না। ঘরে এত জায়গা থাকতে আমার পায়ের কাছেই এসে পড়ল। মরণ আমার। ধুর উঠছে না কেন এ লোক। কী ভারী!
অর্নব পড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে রইল। কীসের উপর পড়ল এটা দেখতে উঠে বসল। দেখল নিরা নিচে শুয়ে আছে। মুহূর্তে তার মেজাজটা বিগড়ে গেল। উঠে বসে বলল, " এই মেয়ে তোমার মাথায় ঠিক কত রকমের সমস্যা আছে। এভাবে নিচে শুয়েছো কেন? তোমার জন্য আমি যে পড়ে গেলাম।"
নিরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল বলল, "এই যে চুপ থাকেন। কীসের ডাক্তার হইছে যে দেখেশুনে চলতে পারেন না?"
"এই মেয়ে তুমি আমার ডাক্তারি নিয়েও কথা শোনাচ্ছো?"
"হ্যাঁ শোনাচ্ছি। চোখ মনে হয় হাতে নিয়ে হাঁটেন। এতবড় বড় চার চোখ কেন আছে শুনি?"
অর্নব অবাক চোখে তাকিয়ে বলল, "চার চোখ দেখলে কোথায়?"
নিরা ডান হাতের দুই আঙুলের ইশারায় বলল, "দুটো অর্জিনাল, আর দুটো ফেইক। মানে চশমা।"
অর্নব নিরার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে বারান্দায় চলে গেল। নিরা ভাবল বিছানায় ঘুমানোর জন্য তাকে জায়গা করে দিলাম। আর সে কী কিনা আবার বারান্দায় চলে গেল! আজব লোক তো! ধুর সে যা করার করুক। আমি নিচেই ঘুমাব।
★★★
দেখতে দেখতে নিরার বিয়ের এক মাস কেটে গেছে। সময়ের সাথে সাথে তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। অর্নব হাসপাতালে আসে যায়। রাতে বারান্দায় ঘুমায়। নিরা নিচেই ঘুমায়। দুজনের জেদে বিছানাটা খালি পড়ে থাকে। দুজন দু ' জায়গায় ঘুমায় এ হচ্ছে তাদের দাম্পত্য। খুব বেশি কেউ কারো সাথে কথা বলে না। যা কথা হয় তা শুধু প্রয়োজনের।
হঠাৎ একদিন অর্নব কতগুলো বই এনে নিরাকে দিয়ে বলল, "বইগুলো রাখো। তুমি বোধহয় বই পড়তে পছন্দ করো। এগুলো তোমার ভালো লাগবে আশাকরি।"
নিরা অবাক হয়ে বলল, "আমার জন্য আপনি বই এনেছেন?"
অর্নব ভ্রুকুচকে বলল, "বই আনা কী দোষের কিছু? "
"আমি কখন বললাম দোষের। আপনি সবসময় এত বেশি কেন বুঝেন বলেন তো? কাঠখোট্টা ডাক্তার একটা।"
অর্নব গম্ভীর গলায় বলল, "কাউকে কিছু উপহার দিলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয় সেটুকু তো জানোই না। আবার তাকে খারাপ উপাধি দিচ্ছো? তুমি কী জানো? তুমি যে মেয়েটা চুড়ান্ত অকৃতজ্ঞ?"
নিরা আগুন চোখে তাকিয়ে বলল, "আপনিও কম যান কীসে! উপহার দিয়ে কেমন খোঁটা দিচ্ছেন।"
অর্নব অবাক হয়ে বলল, "এ মেয়ের সাথে কথা বলাটাই ভুল হয়েছে আমার। বিরক্তিকর নেয়ে একটা!" অর্নব হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
নিরা ব্যাক্কলের তার পথের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বইগুলো নাড়াচাড়া করে দেখল। তার প্রিয় লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আর সিডনি শেলডনের কয়েকটি বই। দেখেই খুশি হয়ে বইগুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগল। ভাবল লোকটা মন্দ নয়। বইগুলোর জন্য তাকে একটা ধন্যবাদ দেয়াই যায়। কেন যে সে আসলে আমার মেজাজটা বিগড়ে যায় কে জানে। যতই ভাবি ভালো ব্যবহার করব তা হয় না। বরং উল্টো ঝগড়া হয়ে যায়। আমি মেয়েটা কী আসলেই ঝগড়াটে!
★★★
সেদিনের পর মায়ানের সাথে আর দিয়ার কথা হয়নি। হঠাৎ এভাবে কল কেটে দেয়ার কারণ সে বুঝল না। তাই দিয়াকে কল দিল। রিসিভ করতেই মায়ান বলল, "কীরে তুই আমাকে কিছুই জানালি না কেন?"
দিয়া বলল, "নিরার সাথে অর্নবের বিয়ে হয়ে গেছে। এ খবর আমি তোকে কীভাবে দেই বল তো?
মায়ানের যেন বাকশক্তি হারিয়ে গেছে। কিছু সময় নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, " কী বলছিস তুই এসব? তোর সাথে অর্নবের বিয়ে হওয়ার কথা সেখানে নিরা আসল কোথায় থেকে? "
নিরা সবকিছু তাকে খুলে বলল। মায়ান একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ছয়মাস পর তো তাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। তখন সে তার স্বপ্নের মানষীকে আপনা করে পাবে।
দিয়া তাকে বলল, "তুই তাড়াতাড়ি দেশে চলে আয় মায়ান। তোকে এখন আমার খুব দরকার। "
মায়ান কি ভেবে যেন বলল, "আমি কালকের ফ্লাইটে দেশে আসছি।"