Eid Natok 2017: Mobile Court | Mosharraf Karim | Tisha | By Masud Sejan ...

Eid Natok 2017: Mobile Court | Mosharraf Karim | Tisha | By Masud Sejan ... 

 

অভ্র সকাল থেকে বায়না করছে সে ঘুরতে যাবে। এখনই তাকে নিয়ে যেতে হবে এই বায়না নিয়ে সে আদিলের এক পা জড়িয়ে ধরে আছে। আদিল ফোনে ব্যাস্ত হয়ে কথা বলছিলো, সে যেদিকে যাচ্ছে অভ্র তার এক পা ধরে ঝুলে ঝুলে সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে। কেউ এই দৃশ্য দেখলে না হেসে থাকতে পারবে না। অভ্র যে শুধু সেটাই করছে তা না কিছুক্ষণ পর পর ডোরেমন ডোরেমন বলে চেচিয়ে উঠছে। আদিল ফোন শান্তিতে কথা বলবে যে তারও উপায় নেই। আবার রাগও করতে পারছে না অভ্রর উপর। অভ্রর মুখের হাসি বলে দিচ্ছে সে নিজের এই অদ্ভূত কাজে বেশ আনন্দ পাচ্ছে।
আদিল চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে পড়লো। তারপর লাইনে থাকা কলটা কেটে দিয়ে বুকের কাছে হাত ভাজ করে তার একপায়ে ঝুলন্ত অভ্রর দিকে তাকালো। আদিল ফোন কেটে দিতেই অভ্র এক গাল হেসে বলল," ডোরেমন!" ডাকটা বেশ সুর করেই ডাকলো সে।
আদিল ভ্রু কুঁচকে বললো," ডু আই লুক লাইক এ ডোরেমন? আর ইউ কিডিং উইথ মি?"
অভ্র চোখ পিট পিট করে তাকালো তার মতন চার বছর বয়সী শিশুর কাছে বেশ জটিল লাগলো, আদিলের বলা কথাগুলো। আদিল একট নিশ্বাস ফেলে বললো," বলো কি চাই তোমার?"
অভ্র ঠোঁট উল্টে বললো," ঘুরতে যাবো।"
আদিল তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো," আচ্ছা,ঠিক আছে কালকে নিয়ে যাবো তোমায়। এইবার পা ছাড়ো।"
অভ্র না সূচক মাথা নাড়লো। আদিল অবাক হয়ে বললো," কেনো?"
অভ্র চোখ পিট পিট করে বললো," মজা লাগছে।" আদিল নিরুপায় ভঙ্গিতে সামনে তাকালো। এই ভাবে তার পা ধরে ঝুলতে নাকি এই ছেলের ভালো লাগছে। ভেবে হালকা হাসিও পেলো তার।
স্পৃহা কলেজ থেকে ফিরে অভ্রকে এই অবস্থায় দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আদিল কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না। অভ্র কোথা থেকে যে এইসব অদ্ভুত খেলা গুলো শিখে?
স্পৃহা হাসতে হাসতে বললো," কি করছে ও?"
আদিল নিরস চেহারায় বললো," দোল খাচ্ছে।"
স্পৃহা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো তারপর অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো," বাহ্, দোল খাওয়ার অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে তাহলে?"
আদিল হেসে বললো," পরীক্ষা কবে তোমার?"
স্পৃহা ভ্রু নাচিয়ে বললো," পরীক্ষা দিয়ে কি হবে ভাবছি আর কলেজেই যাবো না।"
আদিল চিন্তিত গলায় বললো," কেনো?"
স্পৃহা বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো," কিছু ছেলে পিছু নিয়েছে? একেবারে অতিষ্ট করে দিয়েছে।"
পাশ দিয়ে জিম যাচ্ছিলো।স্পৃহাকে ছেলেরা বিরক্ত করছে শুনে সে বেশ অবাক হয়ে তাকালো। স্পৃহা জিমের এমন দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো," কি আশ্চর্য! এমন অবাক হয়ে তাকানোর কি আছে?" স্পৃহার কথায় আদিল ঘাড় ঘুরিয়ে জিমের দিকে তাকালো।
জিম তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো," তোমাকে ডিস্টার্ব করে? কার ঠেকা পড়েছে?"
স্পৃহার মুখের উপর জিমের এমন উক্তি শুনে সে বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললো," মানে? আমি এতোই খারাপ দেখতে? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? জিজু তুমি এর একটা বিহিত করো!"
জিম তীক্ষ্ণ গলায় বললো," বিহিত করার কিছু নেই। যে মেয়ে স্টুপিড কথাটার উত্তরে পাঁচটা কথা শুনিয়ে আসতে পারে। সেই মেয়ে কেউ ডিস্টার্ব করবে আর সেটার ভয়ে কলেজে যাবে না, সেটা অবিশ্বাস্য নয় কি?"
স্পৃহা দাতে দাঁত চিপে জিমের দিকে তাকালো তারপর আদিলকে বললো," তুমি এই লোকটাকে কিছু বলবে না?"
আদিল বুঝেই পায় না এরা দুজন এইভাবে যুদ্ধ করে বেড়ায় কেনো? আদিল এইবার কি বলবে? সে বেশ কায়দা করে জিমকে বললো," তোর এইভাবে স্পৃহাকে বলা ঠিক হয় নি। ছিঃ,মেয়েদের সাথে কেউ এইভাবে কথা বলে?"
জিম প্রতি উত্তরে কিছু বললো না তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে রইলো। স্পৃহা রাগী গলায় বললো," কাল থেকে এই লোকটা আমাকে কলেজে দিয়ে আসবে নিয়ে আসবে। আমি কিছু জানি না, জিজু তুমি এইটা ফাইনাল করো। আমার জীবনেরও দাম আছে, আমারো প্রটেকশন লাগবে।"
এদের দুজনের কান্ড দেখে আদিল হাসি আটকে রাখার চেষ্টা করছে। এমন সিরিয়াস মুহুর্তে হাসা ঠিক হবে না। আদিল সিরিয়াস হয়ে বললো," হুম, অবশ্যই এটাই ফাইনাল। জিম এখন থেকে তোমাকে আনা নেওয়া করবে।"
জিম হতবাক হয়ে আদিলের দিকে তাকালো। আদিল ঠোঁট চেপে হাসলো। পরক্ষনেই স্পৃহা মুখ ঘুরিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রূমে চলে গেলো। জিম হতবাক হয়ে বললো," এটা কি হলো?"
আদিল হেসে বললো," আমিও সেটাই ভাবছি।" বলতে বলতে আদিলের হটাৎ অভ্রর কথা মনে পড়লো। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে অভ্র পায়ে ঝুলে নেই। আদিল এদিক সেদিক তাকাতেই তার চোখ আটকে গেলো বারান্দার এক পাশে। অভ্র স্নিগ্ধার কোলে বসে আছে আর ফিসফিস করে দুজনে গল্প করছে। অভ্র যে কখন স্নিগ্ধার কাছে চলে গেছে আদিল খেয়াল করেনি। স্নিগ্ধা কি অনায়াসে অভ্রকে এতটা আদর করে আগলে রাখছে। অন্য কেউ কি পারতো ঠিক এতটা যত্নে অভ্রকে আগলে রাখতে?
বিকেলে স্নিগ্ধা আর অভ্র জিমের সাথে কারাগারের ফিরলো। স্নিগ্ধার জন্যে এই বাড়িটি কারাগার থেকে কম না। আদিল তাদের ফিরবার আগেই কোথায় যেনো বেরিয়েছে। জিমের উপর দায়িত্ব দিয়েছে ওদের সাবধানে বাড়ি নিয়ে আসার।
আদিলের এই বাড়িটিতে প্রাণ নেই, আনন্দ নেই, হইচই নেই।
স্নিগ্ধা চুপচাপ সভাবের মেয়ে তার শান্ত জিনিস পছন্দ কিন্তু এই বাড়িটি মাত্রাতিরিক্ত নির্জন।
আদিল নামক প্রাণীটি এই বাড়িতে থাকলেও একটা রমরমা পরিবেশ থাকে আর সে না থাকলে কেমন নিশ্চুপ হয়ে থাকে।
স্নিগ্ধা নিজের মধ্যে এই ক্ষুদ্র এক পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।
আদিলকে কি তার ভালো লাগছে?
মনে মনে এগুলো সে কি চিন্তা করছে ভেবেই তার অবাক লাগছে। ইদানিং আদিলকে নিয়ে সে বেশি ভাবছে।
হুট করে এমন পরিবর্তনের কারণ কি? নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন করলো স্নিগ্ধা। কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না।
স্নিগ্ধা নিজের ভাবনার জগতে থাকতেই হটাৎ অভ্রর কান্না শুনতে পেলো সে। স্নিগ্ধা ব্যাস্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ব্যাথা পেয়েছে ভেবে অস্থির হয়ে বেরিয়ে দেখে সেই লক করা রুমটির সামনে দাড়িয়ে অভ্র কাদঁছে। জিম তাকে কি যেনো বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অভ্র বুঝতে চাইছে না। স্নিগ্ধা এগিয়ে এসে অভ্রকে কোলে জড়িয়ে ধরলো, তারপর জিমের দিকে তাকিয়ে বললো," ও এইভাবে কাদছে কেনো?"
জিম নিচু গলায় বললো," অভ্র এই রূমে যেতে চায় কিন্তু এই লকের পাসওয়ার্ড আমার জানা নেই। স্যার না আসলে কিছু করা যাবে না। উনি রওনা দিয়েছেন এক্ষুনি এসে পড়বেন।"
স্নিগ্ধা হাঁটু ভাঁজ করে বসে অভ্রর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো," একটু অপেক্ষা করো। এভাবে কাদতেঁ হয় না। কি আছে ঐ রুমে?"
অভ্র চোখের পানি আবারো ছল ছল করতে লাগলো। সে কাদো গলায় বললো," আম্মুকে দেখবো। ওকে বলো খুলে দিতে।"
স্নিগ্ধা হতবাক হয়ে তাকালো। আম্মুকে দেখবে মানে? স্নিগ্ধা অভ্রকে বুকে টেনে নিয়ে অবাক হয়ে জিমের দিকে তাকালো তারপর জিমকে জিজ্ঞেস করলো," মাকে দেখবে মানে? কি আছে ঐ রুমে?"
এই প্রশ্নের উত্তরে জিম চুপ করে রইলো। স্নিগ্ধা দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার আগে কারোর ব্যাস্ত পায়ের আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলো আদিল চলে এসেছে। আদিল এসেই ব্যাস্ত হয়ে অভ্রকে স্নিগ্ধার থেকে নিয়ে নিজের কোলে আনলো তারপর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো," কি হয়েছে কাদঁছ কেনো?"
অভ্র অস্পষ্ট গলায় বললো," আম্মুকে দেখবো। " আদিল এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলো না। অভ্রকে কোলে নিয়ে সেই দরজার সামনে চলে গেলো। তারপর দরজায় পাসওয়ার্ড আর নিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে দরজা খুললো। স্নিগ্ধা হতবাক হয়ে দাড়ালো। দরজাটা খুলতেই প্রথমেই বিশাল এক ছবি চোখে ভাসলো স্নিগ্ধার। রুমটা খুব যত্নে সাজানো। চোখের পলক না পড়তেই রুমটার দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। স্নিগ্ধা বেশ বড় একটা ধাক্কা খেলো। যাদের যে নিজের জীবনের সাথে এতো যত্নে জড়িয়ে নিয়েছে তাদের মনে যে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ন কেউ বাসা বেধে বসে আছে সেটা তো তার জানাই ছিলো না। কেমন অস্থির লাগছে স্নিগ্ধার! এ কোন নতুন ধাঁধা?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url