JONONI (জননী) HQ - Humayun Ahmed

JONONI (জননী) HQ - Humayun Ahmed


বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে তীব্র,প্রেমের সম্পর্ক বছরখানেকের। মাকে জানানোর প্রয়োজন ও বোধ করলো না সে, হুট করে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসলো মেয়ে।
দরজার সামনে তীব্র বউ নিয়ে দাড়িয়ে আছে,পাশে তার স্ত্রী ইন্দ্রা। গরমে তার দাড়াতে কষ্ট হচ্ছিলো। ইন্দ্রাণী গলায় ফু দিয়ে তীব্র বলছে ইন্দ্রাণীকে "কই মরেছে, কে জানে, মা দরজা খুলতে কত দেরী করছে দেখো।ইচ্ছে করছে দরজা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলি। তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? এসি ঘর ছেড়ে আমার সাথে এভাবে রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে"
ইন্দ্রাণী কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে বলে "সব কিছু মানিয়ে নিতে হয়।জীবন এক ঘড়ির কাটার উপর নির্ভর করে না।" 
 
তীব্র মায়ের উপর রাগ করে দরজার কলিং বেল টিপেই চলেছে। তীব্রর মা ঘর মুছতে বসেছে, বাকি দুই রুম মোছা শেষ। মধ্য রুম মোছার কাজ চলছিলো তাই কলিং বেলের আওয়াজ শুনতে পায় নি। ঘরে কেউ নেই যে দরজ খুলে দেবে। 
 
তীব্রর মায়ের তবুও কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো কেউ দরজার কলিং বেল বাজিয়ে চলেছে, তাই সে হাত ধুয়ে আস্তে আস্তে শাড়ির আঁচলে হাত দুটো মুছে দরজার দিকে এগোতে লাগলো।
দরজার সামনে আসতেই দেখলো একনাগাড়ে কে যেনো বিরক্তি নিয়ে কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে। তীব্রর মা তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে দিলো।
 
দরজার সামনে তীব্র ও পাশে একটা মেয়েকে দেখে তীব্রর মা রীতিমতো বাকরুদ্ধ। কি বলবে তার কোনো ভাষা নেয়। চুপচাপ একপাশে দাড়িয়ে আছে তীব্রর মা।
ইন্দ্রাণী ঘরে ঢুকে তীব্রর মাকে যেই না সালাম করতে যাবে অমনি তীব্র বলে উঠে "ইন্দ্রা রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নাও, এসব ফরমালিটি কালচার তোমার পুরণ করতে হবে না।"
ইন্দ্রাণী আড়চোখে তীব্রর দিকে তাকিয়ে সালাম করে তার শাশুড়ী মাকে। 
 
তীব্রর মায়ের কাছে তার ছেলের আচরণ আজ নতুন না। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলেই তাকে দেখাশোনা করছে,একটু আধটু অপমান এখন যেনো তার কাছে কিছুই না। তীব্রর মা ভেজা হাতে ইন্দ্রাণীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, ইন্দ্রানী তীব্রর মায়ের হাত ধরে বলে "হাত ভেজা কেন আম্মু?" 
 
ঐ একটু ঘর মুছছিলাম, সমস্যা নাই আমি পরিষ্কার পানি দিয়া হাত ধুইয়া আইছি (তীব্রর মা)
ইন্দ্রাণী কিছু না বলে মৃদু হেসে রুমে চলে গেলো।তীব্রর মা বুঝতে পারলো ইন্দ্রাণী হয়তো ঘৃণা করেছে, তীব্রর মা এতকিছু ভাবার সময় নেই, এখনো ঘর মোছা বাকি। তাই রুমে চলে গেলো ঘর মুছতে।
ইন্দ্রাণী রুমে এসে তীব্রকে বললো "বাসায় এখন থেকে আমি যা যা বলবো তাই তাই হবে। আমার বাবা-মা আমাকে এখানে তোমার ভরসায় দিয়েছে। আমার মা-বাবার মান রেখো"
তীব্র আহ্লাদী স্বরে ইন্দ্রাণীকে কাছে টেনে বলে "অবশ্যই সুইটহার্ট"
হুম তাহলে বাহিরে গিয়ে কাজের মেয়ের খোজ করো।আমি এত কাজ করতে পারবো না (ইন্দ্রাণী)
কাজের মেয়ে কেন? আম্মু তো একাই সব করে,উমি করে নিবে তোমার করা লাগবে না (তীব্র)
আমি যা বলেছি তাই করো নয়তো আমি চললাম (ইন্দ্রাণী)
 
ইন্দ্রাণীর মন রক্ষার জন্য বেরিয়ে গেলো তীব্র কাজের মেয়ে খুঁজতে। ইন্দ্রাণী গাল টিপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে শাশুড়ী মায়ের রুমের দিকে গেলো, তীব্রর মা কোমড়ের ব্যথায় মাটিতে বসে আছে বালতি নিয়ে। ইন্দ্রাণীকে দেখে আমতা আমতা করে তীব্রর মা বললো "আম্মা তুমি রেস্ট নাও,আমি করতাছি এহনি সব"
ইন্দ্রাণী হাত এগিয়ে দেয় তার শাশুড়ী মায়ের দিকে, ভেজা হাত দুটো দিয়ে ইন্দ্রাণীর হাত ধরতে শাশুড়ী মা সংকোচ করছে,ইন্দ্রাণী বুঝতে পেরে নিজেই হাত দুটো ধরে টেনে তুলে তার শাশুড়ীমা'কে। ইন্দ্রাণী তার শাশুড়ীকে খাটে বসিয়ে বালতি নিয়ে মেঝে মুছতে বসে গেলো। 
 
শাশুড়ী মা ডাক দিয়ে বলে "এসব কি করতাছো তুমি? আমি কইরা নিমু তুমি রাহো।"
আম্মু আমায় দেখিয়ে দাও,আমিও কিছু জানি না। তুমি শিখিয়ে দিলে আমিও পারবো। (ইন্দ্রাণী)
ইন্দ্রাণী কোনোভাবে তার শাশুড়ী মায়ের কথা তোয়াক্কা না করে ঘর মুছে বাকি কাজ করতে চলে গেলো।
ইন্দ্রাণীর এমন ব্যবহারে রুহ থেকে যেনো দোয়া বের হচ্ছে তার জন্য তার শাশুড়ী মায়ের।
কাজের মেয়ে নিয়ে এসে ফিরলো তীব্র, ইন্দ্রাণী এক এক করে সব কাজ বুঝিয়ে দিলো। বাকি কাজ নিজেই করবে বলে ঠিক করলো।
 
রাতে খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে, তীব্র মাছের ঝোল নিয়ে ওয়াক থু বলে ফেলে দিলো।ইন্দ্রাণী তীব্রর ব্যবহার গুলো লক্ষ্য করছিলো।
তীব্র তার মায়ের দিকে রক্তিম বর্ণ চোখে তাকিয়ে বললো "এসব কি রেধেছো মা? নুন কই? নুন ছাড়া রান্না করে কাকে গেলাতে বসেছো? এগুলো কুকর ও খাবে না"
তীব্রর মা কিছু বলতে যাবে অমনি ইন্দ্রাণী বাঁধা দেয়,ইন্দ্রাণী আরেক বাটির মাছের ঝোল এগিয়ে দিলো তীব্রর দিকে, আর ইশারায় বলতে লাগলো আমি খুব কষ্ট করে তোমার জন্য রেধেঁছি।
তীব্র মাছের ঝোল মুখে নিয়ে বেশ প্রশংসার সাথে বউয়ের তারিফ করতে লাগলো।
ইন্দ্রাণী বেশ বুঝতে পারলো তীব্রর হাবভাব। কারণ ইন্দ্রাণী ইচ্ছা করে একই ঝোল দুটো বাটিতে আলাদা করেছে। 
 
ইন্দ্রাণী ব্যঙ্গ স্বরে বলে তীব্রকে "এখন নুন কম মনে হচ্ছে না তীব্র?"
তীব্র কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। ইন্দ্রাণী খাবারের প্লেট মুখের সামনে থেকে কেড়ে নিয়ে বলে "যদি কারো পরিশ্রমকে সম্মান করতে না পারো তবে তুমি সেই খাবার খেয়ো না, তুমি এখন যে খাবার গুলো খেলে সবকটাই আমার রান্না। আমি ইচ্ছে করে একই ঝোল দুটো বাটিতে আলাদা করেছি। একটা আম্মুর নাম বলেছি। অপরটা আমার নাম বলেছি। অথচ দুটো ঝোল'ই এক। একই ব্যক্তির রান্না। আমিই রেঁধেছি কষ্ট করে।তাই হয়তো নুন এদিক সেদিক হয়েছে। আর তুমি কি করলে? আম্মুকে যা ইচ্ছা তাই বলে অপমান করলে,এই খাবার কুকুর ও খাবে না তাই না? তাহলে তুমি কি করে খেলে? তার মানে কি তুমিই সেই?" 
 
তীব্রর মা বাঁধা দেয় মাঝখানে,ইন্দ্রাণী তার শাশুড়ীকে থামিয়ে দিয়ে বলে "আম্মু বলতে দাও।সে কুকুর বলেছিলো কাকে? তাই তাকে খাইয়ে প্রমাণ করলাম।সে নিজের জন্মদাত্রীকে সম্মান করতে পারে না,তাহলে আমায় কী করে সম্মান করবে? সে তোমাকে সম্মান দেয় নি। আমিও তাকে দেই নি। যেদিন তোমাকে মায়ের সম্মান পরিপূর্ণভাবে দিবে। সেদিন সে আমার কাছ থেকে ভালো আচরণ আশা করবে।এবার সে ঠিক করুক সে কি চায়। নয়তো তুমি আমি আলাদা হয়ে যাবো আম্মু।এসব পুরুষের জন্য বউ শাশুড়ীর মধ্যে মিল থাকেনা। এদের শায়েস্তা করা দরকার।" 
 
এই বলে ইন্দ্রাণী তার শাশুড়ীকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। খাবারে নুন মিশিয়ে বউ শাশুড়ী রুমে আড্ডা দিয়ে খেতে লাগলো।
অন্যদিকে তীব্র খাবার টেবিলে বসে আছে,খাবারের প্লেটে আঙ্গুল দিয়ে নাড়ছে আর ভাবছে "বউ এনেছি নাকি পিশাচ,আমার খাবার বন্ধ করে অন্যদিকে শাশুড়ীকে নিয়ে খাচ্ছে"
খাবারের প্লেট নিয়ে অসহায়ের মতো রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে তীব্র। ইন্দ্রাণী দেখেও না দেখার ভান ধরে শাশুড়ীর সাথে কথা বলে একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে, তীব্র এসে মায়ের পাশে বসলো মাথানত করে। 
 
তীব্র তার মাকে বলতে লাগলো "মা আমার ভুল হয়েছে আর কখনো এভাবে কথা শুনাবো না।আমাকে খাইয়ে দেবে?"
ইন্দ্রাণী মিটমিট করে হেসে মনে মনে বলতে লাগলো "জব্দ কীভাবে করতে হয় ইন্দ্রাণীকে দেখে শেখা উচিৎ মা। আর তোমাকে কষ্ট পেতে দেবো না। তোমার মেয়ে চলে এসেছে"।
সমাপ্ত
(প্রত্যেক মেয়ে এবং শাশুড়ী এমন হলে সংসারে কোনো দুঃখ আসবে না।)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url