Cholna Sujon | Official Music Video | Bokhate (2016 Short Film) | Siam &...

Cholna Sujon | Official Music Video | Bokhate (2016 Short Film) | Siam &...


বাসর রাতে জানতে পারলাম আমার বউ তরীর ভয়াবহ সমস্যা আছে। তার পাদের সমস্যা। তার পাদে আমার সমস্যা নেই, সমস্যা হলো দুর্গন্ধ ওয়ালা পাদে বড়ই সমস্যা। সে সাথে ফ্রিতে আওয়াজ তো আছেই।
পাদ সবাই দেয়, কিন্তু তরীর যে ধরণের আওয়াজ হয়, তা মাইকের আওয়াজ থেকে কম নয়। পুরো এলাকা জেনে যায়। এই মেয়ের সাথে বিয়ে হয়ে তছনছ আমার জীবন ও ইজ্জত।
তো বাসর রাতে যখন তরীর কাছে গেলাম, প্রথমত তার গোমটাটা উল্টালাম। তার চাঁদেরমত চেহারা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বিষ্মিত গলায় বললাম," বাঃ! তুমি খুব কিউট। তোমার মতো মেয়ে পেয়ে আমি ধন্য।"
কিন্তু আমার ধন্য হওয়ার বারোটা বাজিয়ে সে ঠুস করে শব্দ করে পাদ ছেড়ে দিলো। আমি থতমত খেয়ে রইলাম। এটা কি হলো!
আমি নিজের মনকে বুঝালাম, হয়ত বাসর রাতে দুষ্টুমি করছে তরী। হাজবেন্ডের সাথে দুষ্টুমি না করলে কার সাথে করবে! কিন্তু পাদ মেরে দুষ্টুমি, এটা আবার কেমন কথা! খুবই চিন্তার বিষয়।

আমি সেদিকে তোয়াক্কা না করে, আমি তাকে আবার বলতে থাকলাম," তরী! তুমি শুধু সুন্দরী নও, তুমি হলে বিশ্ব সুন্দরী।"
কিন্তু সে বিশ্ব কাপানোয় ভো, ভো, করে শব্দ করে ছেড়ে দিলো! তার পাদে আমার বাসর রাতের নতুন পালঙ্ক নড়ে উঠলো। সেগুন গাছের খাট ছিলো, নইলে তো খাট ফুটো হয়ে যেত! এমন পাদ আমি আগে কখনো দেখেনি। ভো, ভো... ভো..ত।
রীতিমতো আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বুকের একপাশে ধরে বসে রইলাম।
ওমা! সে দুর্বল হয়ে গেছে!
কিন্তু সে মুখ দিয়ে ফু, ফা শব্দ করতে লাগল।
আমি ভাবলাম, হয়ত আওয়াজটা মুখ দিয়েই করছে।
কিন্তু ধুম করে যখন আরেকটা দিলো, আমার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়।
ওমাগো...এত আওয়াজ কীভাবে সম্ভব!
আমি ওমাগো বোম বলে দিলাম দৌড়।

দুষ্টুবন্ধুরা যে বাসর রাতে বোমা ফিট করবে না তার বিশ্বাস নেই। এখন অপু বিশ্বাসকেও বিশ্বাস করা যায় না।
তাই আমার দৌড়। দৌড়াতে দৌড়াতে মনে পড়ল, আরে বাসর রাতে যে আছি আমি। বাসর রাত থেকে বেরোলে, বন্ধুরা অন্যকিছু ভাববে, ভাববে আমি দুর্বল। অল্পতেই আমার শক্তি শেষ। তাই বাধ্য ছেলের মতো ইউ টার্ন করে দৌড়ে চলে এলাম।
ভাগ্যিস! আমার নাক বন্ধ ছিল নইলে তো সে রাতই আমার জীবনের ইতি ঘটত। কিন্তু বাসর রাতে কি পালিয়ে যাওয়া যায়, কত আশা-ভরসা থাকে, তাই ফিরে এলাম। আর একটা-দুইটা পাদে কি আসে যায়! মনকে বুঝালাম, আজ হয়ত তরীর বিয়ের খাবারের জন্য পেটে গ্যাস হয়েছে। তাই অমন অবস্থা।
সে পাদ মেরে হাসতে থাকল। এই প্রথম কোনো বউকে পাদ মেরে হাসতে দেখলাম। এই মেয়ের লাজ শরম বুঝি নেই।
সে আমাকে বলল," সরি! আসলে বাথরুম হচ্ছে না তাই আমার এই অবস্থা!"

আমি কান্না মাখা চোখে বললাম," তোমার পেট খারাপ হওয়ার আর সময় পেলো না। বাসর রাতে? এমন হলে আমাদের বাসর রাত হবে কীভাবে? প্লিজ! আর এই কাজ করো না।"
সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। আমি তাকে আগামী জীবনের জন্য উপদেশ দিতে থাকলাম। আমি বললাম," জীবনে প্রবলেম থাকবেই, সে প্রবলেমকে জয় করা একজনের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যদি একসাথে থাকি, তা জয় করা সহজ হয়ে যাবে। কি থাকবে তো আমার পাশে?"
কিন্তু তরী দেখছি, কষ্টদায়ক ঠোঁট কামড়ে আছে।

আমি তার দিকে তাকালাম, কি হলো কিছু বলছ না যে? কি থাকবে তো?
কিন্তু তরী দুইহাতের মুষ্ঠি শক্ত করে আছে। যেন কিছু একটা সহ্য করছে। আমি এবার বিরক্ত হয়ে চেচিয়ে বললাম," কি থাকবে তো?!"
এবার, সে ভয় পেয়ে ভ,,, ভ,, ভ, ভত, ভত করে উঠল। আশেপাশে সবাই কি না-কি কি ভেবে, দিলো দৌড়।
কেউ একজন বলল, বাসর রাত বোম ফুটছেরে পালাও!
আমি বুকের পাশে ধরে বসে রইলাম। এটা কি ছিল!
কেউ একজন পুলিশকে ফোন দিয়ে দিলো, বাসর রাতে জঙ্গীর আক্রমণ বলে।
আমার ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল। এরকম ভাবে কেউ ভয় লাগাতে পারে, আমি জানতাম না। সে সাথে এ ও বুঝলাম, কেউ এভাবে হ্যাঁ বলতে পারে।

এদিকে সে বোম মেরে দূর্বল হয়ে ঘুমিয়ে গেল।
ঘুমের মধ্যেও ঠুস, ঠাস শব্দ করতে লাগল।
হায়, হায় এই আমি কাকে বিয়ে করলাম! এমন পাদুক-ও কেউ হতে পারে!
কিছুক্ষণ পর, পুলিশ চলে এলো ।

এসআই পুরো ঘর ঘেরাও করে, মাইক দিয়ে বলল," তোমাদের চারপাশ থেকে ঘেরাও রাখা হয়েছে, তাই
আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।"
কিন্তু বউ এর ঠুসঠাস শব্দ শুনে এসআই ব্রাশফায়ার করে না দেয়, সে চিন্তায় আমি কাঁদতে থাকলাম।
এখন কি করি! ও আল্লাহ তুমি বলে দাও!
আমি তাকে জাগাতে বললাম," তরী! এই তরী! তরী!"
কিন্তু সে ঘুমে কাতর। তার ঘুম ভাঙছেই না। খুব ধকল গেছে।

এদিকে এসআই বলছে," জঙ্গিরা আপনারা যদি আত্মসমর্পন না করেন, তাহলে আমরা ভিতরে আসতে বাধ্য হবো।"
আমি ভয়ে শীতের মতো কুঁকড়ে গেলাম। এখন কি করি!
আমার মাথায় বুদ্ধি আসতেই তরীর ব্যাকসাইড বরাবর পালঙ্কের পায়ার নিচে থাকা ইট সোজাভাবে দিয়ে দিলাম। যেদিকে শব্দ হচ্ছিল তা এখন বন্ধ।
যাক! এখন আর শব্দ হচ্ছে না।

আমি দুইহাত উপুড় করে বেরিয়ে এলাম।
শ'খানেক পুলিশকে বাইরে বন্দুক হাতে দেখে ঘাবড়ে গেলাম।
আমি চিৎকার দিয়ে বললাম," স্যার! বাসর রাতে কোনো জঙ্গী নেই! এসি বাস্টের জন্য শব্দ হয়েছে!"
এসআই বিশ্বাস করে টেনশন মুক্ত হলেন।
তিনি বাসর রাতের ভিতরে এলেন। সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন।
কিন্তু তরীর ব্যাক সাইডে ইট দেখে, চলতি পা থামিয়ে চমকে উঠলেন!

উনি জিজ্ঞাসা করলেন," নতুন বউয়ের পিছনে ইট কেন?"
আমি আমতা আমতা করে বানিয়ে বললাম," না মানে ইয়ে, এটা আমার মৃত শাশুড়ির দেয়া শেষ স্মৃতি তো তাই বউ যত্ন রেখেছে।"

উনি অবাক হয়ে বললেন," তাই বলে পাছায়?"
উনি আবার আমার চেহারা দেখে বললেন," না! আপনার চেহারা চুপসে আছে, তার মানে কিছু আপনি লুকাচ্ছেন! বলেন, কি লুকাচ্ছেন!"
- "না স্যার কী লুকাবো?"
-আমি ভিক্টিমকে দেখেই সব বুঝি। বলেন!
-এটা আমার জীবন-মরণ। এটা ধরবেন না প্লিজ!
উনি আমার কথা তোয়াক্কা না করে, ইটটা নেয়ার জন্য যে-ই এগোতে লাগলেন, আমি বাধা দিলাম। বললাম," প্লিজ! এই কাজ করবেন না। অনেক বড়ো বিপদ হয়ে যাবে আপনার!"

তিনি আমাকে সরাতে সরাতে বললেন," এটাতে নিশ্চয়ই কোনো কিন্তু আছে। দেখি তো!"
তিনি আমাকে ঠেলে যে-ই ইটখানা সরালেন, আমি আমার দু'কানে দুই হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে রাখলাম।
ইট সরাতেই,,,

ধুম, করে এমন আওয়াজ হলো যে, কান বন্ধ থাকা অবস্থায়ও আমি শুনতে পেলাম। পুলিশ মহাশয় এমন ভয় পেলো যে, তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে কই মাছের মতো মেঝেতে শুয়ে কাতরাতে লাগলেন।
শেষে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য কোমায় চলে গেলেন।
কথা না শুনলে, যা হয়। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনল।

পুলিশ অফিসারকে হাসপাতালে এম্বুল্যান্স করে নেয়া হলো।
হার্ট অ্যাটাকের কোনো প্রমাণ না থাকায়, একটুর জন্য হাফ মাডারের মামলা থেকে বেঁচে গেলাম।
এই পাদুক বউয়ের জন্য আমার জীবন একদম ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
সেদিন বাবাকেও হাসপাতালে পাঠালো তরী।

আমার বাবা কিছু না জেনেই উনার বন্ধু বাসায় এলে, তরীকে ডাক দিয়ে সামনে নিয়ে এলেন।
এনে, তরীকে দেখিয়ে বললেন," এটা হলো শাওনের বউ তরী। সুন্দর না?"
যখন বাবার বন্ধু "হ্যাঁ" বলতে যাবেন, ঠিক তখন তরী ধুম করে পাদ ছেড়ে দিলো। দু'জনেই হার্টের রোগী ছিলো। এমন আচমকা ভয়ানক শব্দে বাবার আর তার বেস্ট ফ্রেন্ড দুজনেই মেঝেতে শুয়ে কারেন্ট ধরার মতো কাঁপা-কাঁপি করতে লাগলো।
শেষে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, ডাক্তার জানালো," যদি আবার এমন শব্দ হয়, তাহলে আর তাদের বাঁচানো যাবে না।"
বন্ধু তো বাইরে থাকেন, তাই প্রবলেম নেই। চিন্তা শুধু বাবাকে নিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে বাবাকে হোটেলে পাঠিয়ে দিলাম। এখন তিনি একা হোটেলে দিনযাপন করে থাকেন। আমি চাইনা আমার বাবা মারা যাক।

এই পাদুক মেয়েকে বিয়ে করতাম না। তরীর রুপ দেখেই, বিদেশে থাকতেই, তাকে মোবাইলে মাধ্যমে বিয়ে করে ফেলি। করোনার কারণে অনুষ্ঠান না হওয়াতে তার এই সমস্যা ধরা পড়েনি।
আমার কপাল, না খারাপের হলোগ্রাম বুঝছি না। এমন বউও কি কারো হতে পারে!
শালার! অলটাইম পাদুক বউ পেলাম! এই জীবনে আর মনে হয় বাসর করাও হবে না।

সবসময় তরী যে পাদে তা কিন্তু নয়। হঠাৎ করেই দিয়ে দেয়, তাই হয়েছে যত জ্বালা। এলার্ট থাকারও সময় দে না। তার সব পাদে যে আওয়াজ হয়, তা নয়, কিছু কিছু শব্দ ছাড়াও করে থাকে। আর সে শব্দ ছাড়া পাদ হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভয়ানক হাতিয়ার।
সেদিন আমার বন্ধু এলে, আমি তার সাথে সোফা বসিয়ে কথা বলতে থাকি। সে আমার অনিচ্ছাকৃত তরীকে ডেকে আনলে, তরী যখন জিজ্ঞাসা করল কেমন আছেন?"

তখন প্রশ্নের সাথেই ফিস করে যখন তার অস্ত্র ছেড়ে দিলো। বন্ধু নাক ধরেই অজ্ঞান হয়ে যায়। শেষে বাড়িতে নিয়ে গেলে,জ্ঞান ফিরল। হায়রে বন্ধু! কতই না তার ইচ্ছা ছিল ভাবীর সাথে দুষ্টুমি করার। এখন সে ভয়ে আমাদের এদিকে আসে না।
কেউ কেউ তরীর সাইলেন্ট পাদে বমিও করতে থাকে। প্রেগন্যান্ট হলেও এত বমি মানুষ করে না, যখন তাতে করে।
সেদিন পাশের বাসার ভাবী ডিমের জন্য এলে, তাকে অন্যরকম ডিম উপহার দিলেন।
যখন তিনি তরীকে বললেন," ভাবী একটা ডিম হবে।"
সে যখন হবে বলেই ধুম করে পাদ মারল, তখন ভাবী ভয় পেয়ে আবার বাসায় ফেরত গেলো।
সে থেকে উনি আর কারো কাছে ডিম চান না।

এই মেয়ের জন্য জীবন আমার শেষ। তরীর পাদের জন্য সেদিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে লাগলাম। রিক্সায় উঠলাম। কিন্তু রিক্সাওয়ালা ২০ বার রিক্সা থেকে নেমে টায়ার চেক করল। সে ভেবেছিল হয়ত তার টায়ার ফাংচার হয়েছে। কিন্তু ফাংচার যে আমার বউ সে বুঝল না।
তরীর পাদের শব্দগুলোও অদ্ভুত ধরণের। কখনো বোমার মতো, কখনো টায়ার ফাংচারের মতো, কখনো ককটেল বাজির মতো। এমন জগন্য প্রতিভা আর দুনিয়াতে নেই।

শেষে তরীকে এসি রুম বিশিষ্ট এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার বলল," মা! তোমার কীসের প্রবলেম!"
তরী বলল," স্যার আমার পাদের সমস্যা! প্লিজ! আমাকে বাঁচান!"
কিন্তু তরী এসি রুমে ফিসফিসানি গ্যাসটা যে আসা মাত্রই ছেড়ে দিয়েছিল ডাক্তার সাহেব বুঝতে পারেনি! বুঝলে কি আর অমন হতো!
আমার অলটাইম নাক বন্ধ, তাই বেঁচে গিয়েছিলাম।
ডাক্তার এসিরুমে, গন্ধে এদিক ওদিক পাগলের মতো ছুটতে লাগল। এমন ডাক্তারের বাঁঁচবার জন্য ছুটাছুটি আমি আর দেখেনি। সে কি ছুটাছুটি!

কিন্তু দরজা পর্যন্ত পৌছাতে পারেন নি। তার আগেই অক্কা পেলেন। আমিও যদি দরজাটা খুলতে পারতাম, আজ দেশ থেকে একটা ডাক্তার কমতো না।
"পাদ খেয়ে ডাক্তার খুন!"
এমন ভয়ানক হেডলাইন উঠল পত্রিকায়। হায়রে মানুষের হাসাহাসি। তরীকে নিয়ে হৈ-চৈ পড়ে গেল।
তবে, পাদের জন্য কোনো শাস্তির বিধান না থাকায়, পুলিশ আমাদের কিছু করতে পারল না। তা নিয়ে প্রশাসনের চিন্তাভাবনা আছে, এমনটা জানিয়েছেন এক মন্ত্রী।
এই মেয়েকে কি যে করি বুঝতে পারি না। সেদিন মাও নাক চেপে তাকে বুঝালেন। বললেন," মা! তোমার যখন পাদ আসবে, তুমি তখন সহ্য করে থাকো। বাথরুমে গিয়ে দিয়ে আসো। এভাবে মানুষের সামনে দিলে, আমাদের খান বংশের কোনো ইজ্জত থাকবে না। আশেপাশের মানুষ হাসাহাসি করছে, আপনার বউ পাদে। মা রে,, প্লিজ! আমাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে একটু কষ্ট করো।"

মা কান্না করে বললেন," তোমার ভয়ে তোমার শশুর ঘরে আসতে পারে না। না জানি হোটেলে কেমন আছে। আশেপাশের কেউও এখন আমাদের এখানে আসে না, একটু দয়া ত করো। তোমার পাদের জন্য কখন যে কি হয় সে ভয়ে কলিজার পানি যে শুকিয়ে গেল। "
কিন্তু তরীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও পাদ বেরিয়ে আসে। পাদ কি আর অত কিছু বুঝে।
তরীকে ডিভোর্সও দিতে পারছি না। যে উকিলের কাছেই যাই, তাকে যখন বলি পাদের জন্য বউকে ডিভোর্স দিচ্ছি, সে শুনেই হাসতে হাসতে মারা যাওয়ার অবস্থা। ডিভোর্স তো অনেক দূরের বিষয়।
তাকে যে কি যে করি কিছুই বুঝছি না।
সেদিন বাড়ির মালিকের এই পাদের জন্য ডিভোর্স হয়ে গেল। উনারা ঢাকায় থাকেন। ঢাকা থেকে এসেছিলেন, উনার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে।

উনারা আরাম করে সোফায় বসলেন। তরী সামনে বসে রইল। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলাম, যাতে অঘটন না ঘটে। আমার হাতে ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে মালিকের বউ বললেন, " তোমরা সপরিবারে বিয়েতে এসো।"
ঠিক তখন তরী অস্ত্র ছেড়ে দিলো। তা সোফার সাথে স্লিপ খেয়ে বাড়ির মালিক হয়ে, বাড়ির বউ বরাবর চলে গেল। একের পর এক শব্দ ছাড়া চলতেই থাকল।
তিনি না পারতেই, ফিসফিস করে তার হাজবেন্ডকে বললেন," এই কাজ তুমি ছাড়া কেউ না। তোমাকে আমি চিনি!"
বাড়ির মালিক বললেন," আমি না তুমি করেছ।"
একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে লাগলেন।

শেষে বাড়ির মালিকের বউ, অবু ১০,২০ গুনতে লাগলেন। ১০০ যার গুনাই আসবে সে, এ কুকাজ করেছে। আসলো, একবার মালিকের বউ।
আবার আরেকবার বাড়ির মালিক ।
মুহূর্তেই রণক্ষেত্র। হায়রে একে-অন্যকে রেসলিং কিল-ঘুষি।

পাদের জন্য মারপিট। আমি আর মা, ওদের একে অন্যকে ধরে রাখলাম। কিন্তু কাজ হলো না। তারা দু'জনায় দু'দিকে আহত হয়ে গেল।
মানুষ মরে যাবে কিন্তু এই পাদের ক্রেডিট কেউ নিতে চায় না।
শেষে তাদের মেয়ের বিয়ের দিন তাদের ডিভোর্স হয়ে গেল। সত্যটা আমি চেয়েও বলতে পারি নি। কি করে বলব যে, এটা আমার বউয়ের কাজ!

তরীকে নিয়ে কি করি মাথায় আসে না। বন্ধুদের সাথে পরামর্শও নিলাম।
কেউ বলে ডিভোর্স দিতে, কেউ বলে বনবাসে রেখে আসতে, কেউ বলে খুন করতে, আবার কেউ বলে পাইপ লাগিয়ে দিতে।
তার পাদুক টেনশনের জন্য, যে ছেলে আমি সিগারেট খাই না, শেষে সে আমি মদ ধরলাম।
টেনশন কমাতে এই ছাড়া আর কোনো উপায় যে নেই।
কিন্তু একদিন মদ খেয়ে বাড়িতে প্রাইভেটকার নিয়ে ফিরতে লাগলাম, ঠিক তখন এক্সিডেন্ট করে বসলাম।
গুরুতর আহত হলো এক ব্যক্তি। পরে জানলাম তিনি মন্ত্রী।

তার গাড়ির সাথেই আমার গাড়ির টক্কর হলো। হায়রে আমার ফুটো কপাল!
আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।
নিশ্চিত আমার বড় সাজা হবে।
তরী, আমাকে কান্না মাখা চোখে হাত ধরে বলল," টেনশন না করতে।
আমাকে আদালতে তোলা হলো।

দর্শকদের কাতারে তরীও এলো। আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকলাম। না জানি কি হয়!
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, বারের মদ খাওয়া ছবি যখন আইনজীবী, জজের সামনে পেশ করলেন, তখন আমি দোষী সাব্যস্ত হলাম। নিশ্চিত আমার বড় ধরণের সাজা হবে।
আহত মন্ত্রীও উপস্থিত হলেন আদালতে।
জজ আমার রায়ের ১৩পৃষ্ঠা কাগজ পড়তে লাগলেন। কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠা না শেষ করতেই, ভো ভো, ভোত করে দর্শক সারি থেকে পাদের শব্দ হলো।

জজ, হাতুড়ি টেবিলে মেরে বললেন, সাইলেন্ট!
সবাই হাসতে থাকল।
আবারো, একই শব্দ। উনি সাইলেন্ট, সাইলেন্ট প্লিজ! করতে লাগলেন।
আমি ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তিনি পড়তে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেল আদালতে।
জজ সাহেব, আইনজীবী সবাই নাক ধরে থাকল।

জজ সাহেব নাক ধরে পড়তে থাকলেন," মদ খেয়ে গাড়ি চালানো ওয়াক! ওয়াক!"
আহত মন্ত্রী নাক ধরে দৌড়াতে লাগলেন।
সবাই এদিক অদিক গন্ধে ছুটতে লাগল। জজ সাহেব রায় পড়া বন্ধ করে ওয়াশরুমের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। ওয়াশরুমে মানুষের লাইন বেধে গেল।
আদালতের সবাই যে পাদের গন্ধে সেখানে।
একে একে সবাই এলো।

কিছুক্ষণ পর, আবার জজ ও অন্যরা ওয়াশরুম থেকে ফেরত এলো। জজ সাহেব আবার রায় পড়তে লাগলেন।
অল্প পড়তেই যখন জজ সাহেব নাক টানলেন তখন জজ ওয়াক ওয়াক করতে লাগলেন। তিনি হাতুড়ি মেরে বললেন,"প্লিজ! যার পেট খারাপ তিনি বাইরে যান। নইলে রায় দেয়া যে যাবে না।"
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবারো।

জজ সাহেব নাক চেপে কান্না করে বললেন," এঁই কাঁজ কঁরবেন না। আঁমি মারা যাঁবো। উপরওঁয়ালাকে ভয় করুন।"
এক পুলিশকে কে এই কাজ কে করে, তা বের করতে নির্দেশ দিলেন। সে গন্ধ বরাবর এগোতে গিয়ে নিজেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইল।
কিছুক্ষণ পরে তরী ভয়ানক ফিসফিসানি পাদ দিয়ে দিলো। আর বসে থাকতে পারছে না কেউই।

সবাই দুর্গন্ধে এদিক-ওদিক ছুটতে লাগল আবারো।
একের সাথে এক বারি খেতে থাকল। সবাই বলতে থাকল, পালাও রে! এখান থেকে!
জজ, ডাইরেক্ট অজ্ঞান হয়ে গেলেন। মামলা দেয়া মন্ত্রীও অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
আইনজীবী থেকে সবাই অজ্ঞান।

একসপ্তাহ রায়ের ডেট পেছানো হলো।
একসপ্তাহ পর, সেখানেও একই অবস্থা।
নাক ধরেও জজ সাহেব রায় পড়তে পারছেন না।
তিনি বাধ্য হয়ে অবসরে চলে গেলেন।
বাদীপক্ষও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে পারছে না।
পরের শুনানিতে কোনো জজ ভয়ে এলেন না। মন্ত্রী নিজেও না! এমন কি কেউই উপস্থিত হলেন না। এই প্রথম আসামী আমি, আর তরী পুরো আদালতে একা আছি। আমার সাথে থাকা পুলিশও আদালতে ঢুকিয়ে দিয়েই ভয়ে পালিয়েছে।
এই প্রথম জজের সময়মত অনুপস্থির জন্য আমাকে বেখসুর খালাস করা হলো। আমাকে থানা, পুলিশ সবাই ভয় পেতে থাকল, এখন কেউ আর আমার সামনে পড়ে না।

চাইলেই তরীকে ডিভোর্স দিতে পারতাম কিন্তু দিইনি। কারণ, কবুল একটি শব্দ নয়, একটি ওয়াদাও। সে ওয়াদা হলো সব খারাপ পরিস্থিতিতে একে অন্যের সাথে থাকার।
তরীর এখন আর সমস্যা নেই। তার রোগ নির্ণয় হয়ে গেছে। সে ভাত খেলেই তার প্রবলেম হয়। তাই সে আমার জন্য ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সে এখন রুটি খায়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url