১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরন

ভাষা আন্দোলনের পুনরায় জোরালো হওয়ার পিছনে ২৭শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালের খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষন প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে[৩]। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন খাজা নাজিমুদ্দিন ২৫শে জানুয়ারি ঢাকায় আসেন এবং ২৭শে ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষন দেন। তিনি মূলতঃ জিন্নাহ্‌-র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তার ভাষনে তিনি আরো উল্লেখ করেন কোন জাতি দুইটি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি।
নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯শে জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সম্বেত হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তারা তাদের মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের (বর্তমান বাংলা একাডেমী) দিকে অগ্রসর হয়[৬]
১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের 'সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ' গঠিত হয়[৮]। সভায় আরবী হরফে বাংলা লেখার সরকারী প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০ শে জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘটে সমর্থন দেয়া হয়। পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে[৩]
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। সমাবেশ থেকে আরবী হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে[৯]
২০শে ফেব্রুয়ারি সরকার এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঐদিন রাতে বৈঠক করে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এবং পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারন জনগনের মতকে বিবেচনা করার আহবান জানাতে থাকে।
পুলিস অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিকে প্রাচীর তৈরি করে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং উপচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিস কাদাঁনে গ্যাস বর্ষন করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।
কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিস দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিসের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিসকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করতে বলে। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় পুলিস তাদের গ্রেফতার করা শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করে। এই সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কিছু মহিলা তাদের এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে।
বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয় এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়।
কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবেন। ছাত্ররা সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিস দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করেউদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; অবৈধ নাম (যেমন- সংখ্যাতিরিক্ত)। পুলিসের গুলিবর্ষণের কিছু ছাত্রকে ছাত্রাবাসের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন[১০]। আবুল বরকত সে সময় আহত হন এবং রাত ৮টায় নিহত হন। গুলিবর্ষণের সাথে সাথে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ডাক্তার এবং নার্সরা পূর্বে আহত ছাত্রদের বের করে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা করতে থাকেন।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগন ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎখনিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে[১১]

২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

সেদিন আইন পরিষদে বিরোধী দলের সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে এবং অধিবেশন মুলতবি ঘোষনার আহবান জানান। ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যও এই আহবানের সমর্থন জানান। কিন্তু নুরুল আমিন তাদের আহবানের সাড়া না দিয়ে অধিবেশন অব্যাহত রাখেন এবং হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
চিত্র:22 Feb 1952 DURoad.jpg
ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগন ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে[৩]। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহরের নাগরিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। পরে তাদের অংশগ্রহনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশাল মিছিলে অংশগ্রহন করে। বেলা ১১ টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষন করে। এই ঘটনায় সরকারী হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়। শহরের বিভিন্ন অংশে একইভাবে জানাজা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে আর একটি বিশাল মিছিল পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা জুবিলী প্রেসে অগ্নিসংযোগ করে[১২]। উল্লেখ্য জুবিলী প্রেস থেকে সকালের পত্রিকা বের হয়েছিল।
একই দিনে পুলিশ দ্বারা আক্রমন ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। নবাবপুর রোডের বিশাল মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষনে ঘটনায় শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে পরে মারা যান। একই রাস্তায় অহিদুল্লাহ নামে নয় বছরের এক বালকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে ফেলে। আজাদের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ এবং সৈনিকের তথ্যমতে ছিল ৮।

পরবর্তী ঘটনা (১৯৫২)

চিত্র:22 Feb 1952 DURoad.jpg
২৩ ফেব্রুয়ারি সাড়া রাত ঢাকা ম্যাডিকেল কলেজের ছাত্রবৃন্দ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে কাজ করেন। যা ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ যুক্ত করা হয়েছিল যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ[১৩] Inaugurated bস্মৃতিস্তম্ভডটি উদ্বোদন করেন আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা। স্মৃতিস্তম্ভটি পুলিশ ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে ভেঙে দিয়েছিল।[১৪] ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে, কলকারখানার শ্রমিকরা নারায়নগঞ্জ শহরে ধর্মঘটের ডাক দেয়।[১৫] ফেব্রুয়ারি ২৯ তারিখে প্রতিবাদে অংশগ্রহকারীরা ব্যাপক পুলিশী হামলার সিকাড় হন।[১৬]
২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোর প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। তারা জনগনকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে কম্যুনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমন করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারা দেশে লিফলেট বিলি করে। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের ইচ্ছামাফিক সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেউদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; অবৈধ নাম (যেমন- সংখ্যাতিরিক্ত)। পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারন জনগন ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত থাকে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি[১৭]। রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, একই কারনে তাও বাতিল হয়।৮ই এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর রিপোর্টে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উপর গুলি করার কোন উল্লেখযোগ্য কারন দেখাতে পারেনিউদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; অবৈধ নাম (যেমন- সংখ্যাতিরিক্ত)। সরকারের প্রতিশ্রুত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখান করে। ১৪ই এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন সামনে চলে আসে[১৮]। এই সমস্যা নিরসনের পক্ষে অনেক সদস্য মত প্রকাশ করলেও মুসলিম লীগের সদস্যরা এই ব্যপারে নীরব থাকেন। এই বিষয়ের বিপক্ষে তারা ভোট দিলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন[১৯]। ২৭শে এপ্রিল বার সেমিনার হলে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ একটি সেমিনার আহবান করে এবং সরকারের কাছে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৬ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সেদিন ছাত্ররা সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লীগ কমিটির প্রধান নেতা আবদুল মতিন গ্রেফতার হলে কমিটি আবার পুনর্গঠিত হয়।

চূড়ান্ত পর্যায়(১৯৫৩-৫৬)

কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্মরণে শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমানও দিবসটি পালনে সম্মত হন[২০]। ১৮ই ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাত ফেরী-তে যোগ দেন। হাজার হাজার মানুষ কালো ব্যজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসে এবং মিছিল করে প্রাঙ্গন ত্যাগ করে। সহিংসতা রোধের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে আরামানীটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এক দফা দাবি জানানো হয়, ভাষার দাবির সাথে সাথে মাওলানা ভাসানীসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি করা হয়। রেলওয়ের কর্মচারীরা ছাত্রদের দাবির সাথে একমত হয়ে ধর্মঘট পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের ছাত্ররা শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন[২১]। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ফজলুর রহমান বলেন যে বাংলাকে যারা রাষ্ট্রভাষা করতা চায় তারা দেশদ্রোহী। তার এই বক্তব্যে জনগন হতাশ হয়ে তাঁকে কালোব্যাজ দেখায়। সাধারন মানুষের মাঝে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই লেখা সম্বলিত স্মারক ব্যাজ বিলি করা হয়। ভাষা সংগ্রাম কমিটি দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাবেশ আহবান করে। আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দলনের মূল অনুপ্রেরনাদায়ী সঙ্গীত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো... সেই বছর কবিতা আকারে লিফলেটে প্রকাশিত হয়।
১৯৫৪ সালকে পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক ও ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক পট পরিবর্তনের বছর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট যেন আন্দোলনের কোন সুযোগ না পায় সে জন্য মুসলীম লীগ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখেউদ্ধৃতি ত্রুটি: Closing </ref> missing for <ref> tag. এই সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ছয়টি ভাষাকে একই মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলে সেখানকার প্রতিনিধিত্বকারীরা[২২]। আবদুল হক (বাবা উর্দু নামে পরিচিত) এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং তাঁর অবস্থানে অনড় থাকেন। তাঁর নেতৃত্বে ২২শে এপ্রিল করাচীতে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে সহিংস ঘটনায় সিন্ধি ভাষার দৈনিক আল ওয়াহিদ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়[২৩]। অন্যদিকে ২৭শে এপ্রিল বাংলা ও অন্যান্য ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা সংখ্যালঘু উর্দুভাষী যারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিল তাদের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সমাধান

চিত্র:21feb1956 Shaheed Minar Dhaka.jpg
যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে বাংলা একাডেমী গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সফল যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের কিছুদিন পরেই সামরিক আইন জারি হয় এবং ১৯৫৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকার এই প্রকল্প বাতিল করে দেয়। এর আগে ১৯শে ফেব্রুয়ারি সরকার সকল ধরনের নাগরিক অনুষ্ঠানের উপর ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ছাত্র ও সাধারন জনগন ২১ তারিখ রাতের বেলা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সমবেত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে শোকের কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়[২৪]। পুলিস ক্যাম্পাসে সমবেত জনতা ও ছাত্রদের উপর আক্রমন করে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হলে সেখানে পূর্বে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ভাষা আন্দোলনকারীদের সাথে তাদের দেখা হয়। গ্রেফতারকৃত ছাত্ররা জামিন নিতে অস্বীকার করে এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানায়। পরে তাদের মুক্তি দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছেড়ে দিতে শুরু করে। এরই মধ্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। সেদিন প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পাকিস্তানের গণপরিষদে পাচ মিনিট বন্ধ রাখা হয় ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে। সারাদেশব্যপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। আরমানীটোলায় এক বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানীউদ্ধৃতি ত্রুটি: অবৈধ <ref> ট্যাগ; অবৈধ নাম (যেমন- সংখ্যাতিরিক্ত)[২৫]
ভাষা আন্দোলন শুরুর প্রায় দশ বছর পর বাংলা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালের ২৯শে ফেব্রুয়ারি। সংবিধানের ২১৪ অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:
214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali

অর্থাৎ উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। ব্রিটিশ আমল থেকেই দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে ইংরেজীর প্রচলন ছিল। ১৯৬২ সালের ১লা মার্চ আইয়ূব খান পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে (The Consititution of the Republic of Pakistan) বাংলাকে জাতীয় ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়:
The national languages of Pakistan are Bengali and Urdu

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়:
প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা (The state language of the republic is Bangla)
Next Post
No Comment
Add Comment
comment url