Panjabiwala | Tribute to Legend | Abdul Gafur Hali | Bangla Music Video ...
Panjabiwala | Tribute to Legend | Abdul Gafur Hali | Bangla Music Video ...
আচমকাই একদিন ছেলেটা আত্মহত্যা করলো। সুইসাইড নোটে লেখা পাওয়া গেল, 'আমি যদি না মরতাম, তাহলে ৪জন মানুষ মারা যেত, আমার মৃত্যু তাদের বাঁচালো, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন।'
এই নোটের অর্থ কেউই অনুধাবন করতে পারলো না। পুলিশ এসে সিলিং থেকে লাশ নামিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেল। মৃত্যুর খবর পেয়ে ছেলেটার বাবা-মা পরের দিন ঢাকায় এলেন। জানালেন সর্বশেষ ৩ দিন আগে ফোনে কথা হয়েছিল রবিনের সাথে তাদের। কোনো রকম অস্বাভাবিক কথা বলেনি সে। এমন প্রাণবন্ত ছেলে, তারা কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ করলেন তাদের ছেলেকে নিশ্চই কেউ খুন করেছে। সে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয়। রবিনের সাথে এই ঘরে আরেকজন ছেলে থাকতো। ওর নাম মফিদুল। প্রায় পনেরো দিন আগে মফিদুল আগের চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে জয়েন হওয়ায় বাসা পরিবর্তন করে অন্য এলাকায় চলে গিয়েছে। বন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে সেও ছুটে আসে।
পুলিশকে জানায় ওর মতো ছেলের পক্ষে আত্মহত্যা করা অসম্ভব। তার মতো ধর্মভীরু ছেলে এই যুগে খুব কমই দেখা যায়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, যাবতীয় হারাম কাজ বর্জন করে চলতো। বাড়ির মালিকও তার মতোই মন্তব্য করলেন রবিনকে নিয়ে। তারা ব্যাচেলর ভাড়া দেন না, কিন্তু ছেলেটার ভদ্রতা, বিনয় তাদের মুগ্ধ করে। ২ বছরের মতো সে এই বাড়িতে বাস করেছে, তার খারাপ কিছুই তাদের নজরে আসেনি।
রিয়াজের পাশের রুমে থাকা মহিলাটি জানান। মাগরিবের আজানের মুহূর্ত। তিনি ঘরে বসে আদা-রসুন বাটছিলেন। হঠাৎই রিয়াজের ঘর থেকে কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পেলেন। এরপরেই অদ্ভুত অস্বাভাবিক গোঙানি। তিনি দ্রুত ছুটে গেলেন ওই ঘরের সামনে। দরজা লক করা ছিল ভেতর থেকে। ছোট জানালাটাও বন্ধ ছিল। ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ প্রথমে বেড়ে পরে কমে যেতে লাগলো। তিনি বুঝতে পারলেন অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছে। বাকি রুমের লোক, বাড়িওয়ালা সবাই এলেন। অনেক ডাকাডাকি করেও রিয়াজের সাড়া না পেয়ে কাঠের জানলা ভাঙলেন। ঝুলন্ত অবস্থায় রিয়াজের লাশ দেখে সবাই স্তব্ধ হয়ে যান।
রিয়াজ এখানকার একটা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। একটা বেকারি শপে ২টা থেকে রাত ১০টার একটা চাকরিও করতো। সেদিন ছুটি ছিল তার।
সুইসাইড নোটে যে হাতের লেখা আছে তা রিয়াজেরই তা সনাক্ত হলো। পুলিশের উপস্থিতিতেই দরজা ভেঙে লাশ বের করা হয়েছিল। পুলিশ তাই নিশ্চিত করে জানালো এটা আত্মহত্যা। কিন্তু এর উদ্দেশ্য কিছুতেই তারা বের করতে পারলেন না। মেয়েঘটিত কোনো বিষয়, কোনো মানসিক অস্থিরতার কোনো ক্লুই পেলেন না তারা। তার মৃত্যুর মাধ্যমে কী করে ৪জন মানুষের প্রাণ বাঁচে! মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরই নিজ গ্রামে দাফন করা হয় তাকে।
যেই ঘরটাতে রিয়াজ আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিল সেই ঘরটা আর কেউই দীর্ঘদিন ভাড়া নিতে চায়নি। কে জানে হয়তো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখতে হয় সিলিং থেকে একটা লাশ ঝুলে আছে। হয়তো ছেলেটার আত্মা এখনো ওই ঘরে আটকে আছে। আরো নানান অপবিত্র চিন্তা। বাড়িওয়ালা নিজেও সন্ধ্যার পর ওই ঘরে যেতে ভয় পেতেন। কেউ ঘর দেখতে আসলে দিনে আসতে বলতেন। ইমাম সাহেব আনিয়ে মিলাদ পড়ানোর পরও ভয় কাটেনি তার। এমন সময় একদিন দুজন ছেলে আসলো বাড়ি ভাড়ার জন্য। তারা স্থানীয় বড় বাজারের ফার্নিচারের দোকানে কাজ করে। রাকিব এবং আসিফ। তারা এই ঘরে অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনাটা জানে। কর্মঠ,সাহসী ছেলে ওরা, ভুতভীতি একেবারেই ছিল না। প্রথম এক সপ্তাহ ভালো ভাবেই কাটলো তাদের এই ঘরে। কিন্তু এরপর একরাত এলো।
মধ্যরাতের দিকে ঘরের দরজায় কারো টোকা পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রাকিবের। জেগে বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে তাকায়। এত রাতে কে? আবার ঠকঠক শব্দ। ঘর পুরোটাই অন্ধকার। দরজার বাইরে যে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে তা সে স্পষ্ট টের পায়। বিছানা হাতড়ে মোবাইল নিয়ে লাইট জ্বালালো। পাশেই আসিফ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে সে প্রশ্ন করলো, কে? কোনো উত্তর এলো না বাইরে থেকে। আবার ঠকঠক শব্দ। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। বাইরে কোনো একজনের দ্রুত শ্বাস নেওয়ার শব্দ আর নড়াচড়া বোঝা যাচ্ছে। দরজা খুলে দিল। আশ্চর্য্য!কেউ নেই। বাইরের বাতিটা দুদিন ধরে নষ্ট। তবে চাঁদের আলোতে মোটামুটি উঠানের সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। সে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখলো আসলেও কেউ নেই। এর মানে কী! সে যে স্পষ্ট অনুভব করলো! পাশের ঘরগুলোর বাতিও বন্ধ। বিরক্ত হয়েই ঘরে ফিরবে এমন সময় উঠোনে কিছু একটা লক্ষ করলো সে। বুকটা কেমন ধক করে উঠলো। লাশ রাখার একটা খাটিয়া। সেখান জ্বলজ্বল করছে যেন সাদা একটা কাপড়। কাফনে মোরা লাশ নাকি! ভয়ে কলজে শুকিয়ে গেল তার। এখানে নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। তবুও ঘরে ফিরে যেতে পারলো না। ধীরে ধীরে মোবাইলের আলো ফেলে খাটিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। তীব্র আগ্রহ আর ভয় মনে। হৃদস্পন্দন পদে পদে দ্বিগুন, তিনগুন করে বাড়ছে। খাটিয়ার একেবারে কাছে আসতেই লক্ষ করলো আগা-গোড়া মোড়া একটি লাশ।
লাশটা মনে হচ্ছে এখনই নড়ে উঠবে। গভীর রাতে এখানে লাশ! অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটছে। নিশির ডাক অথবা জ্বীন ঘটিত কিছু তাকে ফাঁদে ফেলছে। ঝামেলা বুঝতে পেরে উল্টো ঘুরে ছুটে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল সে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো লাশটাও খাটিয়া থেকে উঠে তার পিছু ছুটে আসছে। পেছনে তাকানোর সাহস পেল না ও। ঘরে ঢুকেই দরজা আটকে দিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখনো দ্রুত বুক উঠা-নামা করছে। যেই বিছানার দিকে আলো ফেলে এগিয়ে যেতে লাগলো দেখলো বিছানায় আসিফের যেখানে শুয়ে থাকার কথা সেখানে সাদা কাপড় মোড়া একটি লাশ। কোথা থেকে একটা দমকা বাতাস এলো। লাশের মুখের উপর থেকে কাফনের কাপড় সড়ে গেল। আরে এটাতো আসিফই।
ওর পুরো শরীর কাফনের কাপড় দিয়ে মোড়া কেন! ভয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতে চাইলো সে। কিন্তু কী একটা জড়তা তার মুখ চেপে ধরলো। আসিফের চোখ দুটো কাঁপতে কাঁপতে খুলে গেল। উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে রাকিবের দিকে একবার তাকিয়ে তার মুখটা ভয়ে বিকৃত হয়ে গেল। সে তার দিকে না, বোধ হচ্ছে তার পেছনে কিছু একটা দেখে ভয় পাচ্ছে। এমন সময় ঘাড়ের কাছে গরম নিঃস্বাস পড়ার অনুভূতিতে কেঁপে উঠলো রাকিব। হাত থেকে পড়ে গেল মোবাইলটা। ভয়ে ভয়ে ঘুরে পেছনের দিকে তাকালো সে। না, কিছুই নেই! হঠাৎ আসিফ গোঙাতে লাগলো বিছানা থেকে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে গোঙাচ্ছে। ঝাপসা আলোতে এই ঘরকে নরক মনে হচ্ছে তার। মোবাইল ফোনটা নিচু হয়ে তুলে নিল রাকিব। আসিফের দৃষ্টি লক্ষ করে ধীরে ধীরে আলোটা সিলিং এর দিকে তুললো।
সিলিং থেকে ঝুলে আছে অর্ধেক একটা শরীর। মৃত লাশ, গলায় দড়ি পেঁচানো। কোমর থেকে বাকি অংশ নেই ওটার। রক্তহীম করা দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে লাশটা। চেহারাটা অপরিচিত লাগলো তার কাছে। লাশটার চোখের পাতা নড়লো নাকি! হাত দুটো কাঁধের কাছে উঠিয়ে নিল নাকি ওটা! জিহবা বেরিয়ে এলো মুখ ফুঁড়ে! লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর উপর এর প্রস্তুতি নাকি! এই প্রথম গলা ফেটে চিৎকার দেওয়ার শক্তি পেল যেন তার কণ্ঠ। একটা চিৎকার দিয়েই জ্ঞান হারালো সে।
পরদিন অনেক বেলা হয়ে যাওয়ার পরও সেই ঘর ভেতর থেকে বন্ধ দেখে পাশের ঘরের লোকরা ডাকাডাকি করলো রাকিব আর আসিফকে। কোনো সাড়াই পাওয়া গেল না। প্রতিদিন ৮টার ভেতরেই কাজে চলে যায় ওরা। ফোন বন্ধ পেয়ে ফার্নিচারের দোকান থেকেও একজন এলো ওদের ডাকতে। সেও দরজায় অনেক ধাক্কাধাক্কি করার পরেও কারো সাড়া পেল না। পাশের ঘরের সেই স্ত্রী লোকের হঠাৎ খেয়াল হলো মাঝরাতে হঠাৎ কারো আর্তনাদের শব্দে যেন তার চোখ দুটো খুলে গিয়েছিল। পরে মনে হয়েছে কুকুর বা অন্য কিছু হয়তো ডেকেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওই শব্দটা এই ঘর থেকেই এসেছিল। ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটে গেছে ওই ঘরে। আবার সেই জানালা ভাঙ্গা হলো, জানালার ফাক দিয়ে তাকাতেই সিলিং থেকে দুটো ঝুলন্ত লাশ দেখা গেল। নতুন ভাড়াটে রাকিব আর আসিফের।
পুলিশ আসলো। দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে লাশ নিয়ে যাওয়া হলো। একটা তাড়াহুড়ো হাতের লেখার সুইসাইড নোট পাওয়া গেল। যা কিনা আসিফের হাতের লেখার সাথে মিলে। যেখানে লেখা রয়েছে, 'আমরা যদি না মরতাম তাহলে ৮জন মানুষ মারা যেত। আমাদের মৃত্যু তাদের বাঁচালো। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।'
(সমাপ্ত)