গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ১০+১১+১২ (শেষ পর্ব) | Story: Ruper Tori | Episode-10+11+12 Full & Final Episode

গল্পঃ রূপের তরী পর্ব- ১০+১১+১২ (শেষ পর্ব) | Story: Ruper Tori | Episode-10+11+12 Full & Final Episode

#পর্ব_১০+১১+১২ শেষ পর্ব

গল্পঃ #রূপের_তরী
Writer: #Ashura_Akter_Anu
 
 
......
একনাগাড়ে ফোনের রিং বেজেই চলেছে। রাত্রি এগারোটার সময় সাধারনত আদ্রিয়ান ডিনার করে। এমন সময় কারও ফোন আশা করেনা সে। করলেও যদি কোন পেশেন্ট থাকে,তাদের ফোন ধরে। বিরক্তির সাথে ফোনটা ধরার পর ওপাশে যখন আরশের বলার আওয়াজ পেল, রাগে আদ্রিয়ানের চোখমুখ লাল হয়ে গেল।
ধমকের সুরে আরশকে বলে সে,
--রাত এগারোটার সময় পড়াশুনা ফেলে রেখে ফোন দেওয়া হচ্ছে? তোমার সমস্যাটা কি আরশ?তুমি কি একজন ভালো ডক্টর হতে চাওনা?
--সরি স্যার, আসলে ভাবলাম আপনি তো অনেক রেগে আছেন। যদি আরও বেশি রাগ করে ফেলেন আমার ওপর?এমনিতেও কাল আপনি দেখা করতে বলেছিলেন করিও নি,
--আরশ!(হালকা মুচকি হেসে)
--জ্বি আদ্রিয়ান বলুন।
--সরি আজকে ক্লাসরুমে তোমায় বকলাম। তবে একটা জিনস কি যানো?তুমি আসলেই পড়াশুনা ঠিকমতো করছোনা।এ জন্যই তোমার ওপর অনোকটা রাগও আছে আমার।
--সরি, বাট আজকে আপনি যে স্টোরিটা শোনালেন, তার পর, শুধু ওখানেই মন পড়ে থাকে। রূপ ও তরীর তারপর কি হল তা না জেনে থাকতে পারছিনা। আমায় কি বলবেন?
--ওকে, ডু ওয়ান থিং। তুমি টার্মে ভালো রেজাল্ট করো, দেন তোমায় একটা সারপ্রাইজ দিব আমি।
--সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ আমার লাগবে না। আপনি আমায় ওদের অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্পটি বলুন।
--আরশ!(গম্ভীরমুখে)
--ওকে ওকে,তাহলে কবে দেবেন সারপ্রাইজটা?
--সারপ্রাইজটা তখনই পাবে যখন তুমি এক্সামে ভালো রেজাল্ট করবে। সো বি প্রেপেয়ার্ড ফর ইয়োর টার্ম।
--ওকে। তাহলে রাখি।।
আদ্রিয়ান ও আরশ দুজনে এখানে লাভ বার্ডস এর মতন। ওরা দুজনই দুজনকে পছন্দ করে। ওদের প্ল্যান আছে, আরশের মেডিকেল লাইফ শেষ হওয়ার পরই দুজনে বিয়ে করবে।
আজ সকালে যখন আদ্রিয়ান ক্লাসে ঢুকল সব স্টুডেন্টদের আগে থেকেই প্লান ছিল, আজ ক্লাস করবেনা। তাই আদ্রিয়ানকে সবাই জেকে ধরে বসে কোন একটা গল্প শুনবে। সেই থেকে আদ্রিয়ান #রূপ ও তরীর এই গল্পটি ওদের মাঝে তুলে ধরে। যদিও এটা গল্প নয়। এটি গল্প হলেও সত্যি।
.....
দু মাসের মাথায় গিয়ে টার্ম শুরু হয়। এ দু মাসে আরশ প্রচন্ড মন দিয়ে পড়াশুনা করে। এমনিতেও সবকিছুই ওর পড়াই ছিল, শুধু রিভুশন দিয়ে পড়াগুলো আবারও ক্লিয়ার করে নিল সে।
অনেক ভালোভাবে আরশের টার্মটা শেষ হলো। এবার নিশ্চিত সে টপ করবে।
রেজাল্টের দিন আরশ টেনশনে ছিল প্রচুর। এ কারনে নয় যে কি রেজাল্ট হবে, এ কারনে যে সারপ্রাইজটা কি হতে চলেছে। রেজাল্ট আসলো।
হ্যাঁ সত্যিই আরশ টপ করেছে। সব ফ্রেন্ডরা ওকে নিয়ে মাতামাতি করছে, তবে আরশ অন্য চিন্তায় বিভোর। তানিয়া ওকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
--কিরে কি চিন্তা করছিস?নে এবার তো টপ করলি। আদ্রিয়ান স্যার তো আর কিছুই বলবেনা তোকে।
আরশ মনে মনে ভাবছে,
"তোকে কি করে বলি, আজ যে একটা সারপ্রাইজ পাওয়ার কথা, তবে সেটা যে কী হবপ তা ভেবেই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।।"
এর মাঝে আরশের ফোনে টুং করে শব্দ হয়ে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজটা আদ্রিয়ানের। এবং তাতে লেখা আছে "পাঁচ মিনিটের মধ্যে পার্কিং স্পেসে দেখা করো"।
তানিয়াকে হোস্টেলে যেতে বলে, দৌড়ে চলে যায় গাড়ি পার্কিংয়ের স্পেসের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখে আদ্রিয়ান হাসিমুখে হাতে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে।
আদ্রিয়ানের বর্ননা দেই একটু,
৫'৯" লম্বা ও ধবধবে ফর্সা গায়ের রং। গালে হালকা খোচা খোচা দাড়ি। চুলগুলো স্পাইক করা। চোখের পাপড়ি অনেকটা ঘন এবং চোখের মনি একটু বাদামী রংয়ের।
অন্যদিকে আরশ,বলা চলে একটা চলতে ফিরতে পরী। যেমনটা সুন্দরী ঠিক ততটাই চঞ্চল। সাথে প্রচন্ড মেধাবী।
আরশ সেকেন্ড ইয়ারের প্রথমদিকে থাকাকালীন আদ্রিয়ান ওকে প্রোপোজ করে।যেহেতু স্যার তাি মুখের ওপরেই হ্যা বলতে পেরেছিল না আরশ। কিছুদিন সময় নিয়ে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সে।
..
হাফাতে হাফাতে আরশ যখন আদ্রিয়ানের সামনে গিয়ে দাড়ায়, আদ্রিয়ান খানিক হেসে দিয়ে বলে,
--দৌড়ে আসার কি দরকার ছিল?হেটে আসলেই তো পারতে।
--না মানে,আপনি বলেছিলনেন পাঁচ মিনিটের মাঝে আসার কথা। তাই ভাবলাম যদি..
--যদি আমি আবারও বকা দেই?
--না না, সেটা নয়,।
--সেটা কি অন্যটা তা নাহয় পরে বুঝবো, এখন গাড়িতে ওঠো।কোথায় যাচ্ছ কি না যাচ্ছ এমন কোন প্রশ্ন করতে পারবেনা ওকে?
--কিন্তু বলবেন তো,কো..(ওহ সরি,জিহ্বায় কামড় দিয়ে)
--চুপচাপ গাড়িতে বসো।
আরশ আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে বসে, আরশের চুপ হয়ে যাওয়া দেখে আদ্রিয়ান লুকিয়ে হেসে দেয়। এরপর সেও গাড়িতে উঠে। গাড়ি স্টার্ট করে চলতে থাকে আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্যের দিকে।
...
আদ্রিয়ান গাড়িটি এয়ারপোর্টের সামনে এসে দাড় করায়।
--এয়ারপোর্টে কেন এলাম আমরা?বিদেশে বেড়াতে যাচ্ছি নাকি?
--বলেছিনা চুপচাপ থাকো।
--ওকে(মুখ ভার করে)
--এভবে সারাদিন গাড়িতেই বসে থাকবে নাকি বেরও হবে?
--ওহ হচ্ছি তো.।
গাড়ি থেকে বের হয়ে আদ্রিয়ান আরশের হাত ধরে হাটা শুরু করে। এয়ারপোর্টের ভেতরে ঢুকে আরশকে একজায়গায় বসিয়ে দিয়ে আদ্রিয়ান রো এরিয়ার দিকে চলে যায়। একটি ফ্লাইট সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আরশের পাশে এসে বসে।
আরশ এখনও চুপচাপ বসে আছে। আরশকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলে,
--চুপ করে আছো যে?
--আপনিই তো কথা বলতে বারন করলেন।(মুখ গোমড়া করে)
--ওওওহ সো সরি, কিন্তু এখন তো কথা বলো।
--আপনি কি সারপ্রাইজ দিতে চান একটু বলুনতো?আমার মাথায় তো কিছুই আসছেনা। আমরা এয়ারপোর্টেই বা কেন এলাম?
--সব প্রশ্নের জবাব পাবে, যাস্ট ওয়েট এ্যান্ড ওয়াচ।
--আর কতক্ষণ?
--অনলি টেন মিনিটস
--ঠিক আছে।
দশমিনিট পর ইউকে থেকে আসা এয়ারক্রাফট বাংলাদেশে ল্যান্ড করে।আদ্রিয়ানের চোখ সামনের দিকে। কখন ওনারা আসবেন। যাদের ছাড়া আদ্রিয়ান অসম্পূর্ণ।
হঠাৎ আদ্রিয়ানের দৃষ্টি সামনেই থেমে গেল। আরশ ওর চোখের দিকে অনুসরন করে সামনের দিকে তাকালে দেখতে পায় এক মধ্যবয়সী কাপল ওদের দিকেই হাসিমুখে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে।
আদ্রিয়ান দৌড়ে গিয়ে ওনাদের জড়িয়ে ধরে।আরশ শুধু দূর থেকে দেখে যাচ্ছে আদ্রিয়ান এতটা হাসিমুখে আছে যেন সব সুখ ও পেয়েছে।
মহিলাটি একবার আরশের দিকে তাকিয়ে আবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকায়। এরপরই আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে ঘুষি দেয়।
এরপর তিনজন মিলে আরশের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
আরশ ওনাদের এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাড়ায়। মহিলাটি আরশকে কাছ থেকে দেখে আদ্রিয়ানকে বলে,
--হুমম,যতটা বলেছিলি তার চেয়েও বেশি সুন্দর ও মিষ্টি মেয়ে দেখছি।
আদ্রিয়ান মাথা চুলকে আরশের দিকে তাকিয়ে বলে,
--ওহ বলাই হলোনা, ইনি হলেন আমার মা, এবং আমার বাবা (ওনাদের দেখিয়ে)
আরশ তো এ কথাটি শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। এরপর ওনাদের দুজনকে সালাম করে বলে,
--সরি,আংকেল আন্টি,আসলে উনি বলেছিলেন না তো।
--আরে না মা,এতে কোন সমস্যা নেই। আর এমনিতেও ওকে আমরাই বারন করেছিলাম বলতে। (আদ্রিয়ানের বাবা বলে ওঠেন)
এরপর আদ্রিয়ানের বাবা ওর(আদ্রিয়ানের) মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
--তরী!তুমি আরশকে নিয়ে এগোতে থাকো, আমি ও আদ্রিয়ান আসছি।
"তরী!?" নামটি শুনে আরশ চমকে উঠলো। পাচে থাকা আদ্রিয়ানের মায়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
--তরী??
--আমিই তো তরী। কেন মা কি হয়েছে?
আরশ আরেকদফা চমকালো। ওর ধারনাটা আসলেই সত্য কিনা তা যাচাই করতে আবারও প্রশ্ন করলো,
--আন্টি আংকেলের নাম..
--ওহ তোমার আংকেলের নাম,রূপক চৌধুরী রূপ ।
..........🍁🌷
..

#চলবে___
#পর্ব_১১
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
Writer: #Ashura_Akter_Akter
.......
(প্রথমেই কিছু কথা বলে নেই,যদিও এখানে আদ্রিয়ান ও আরশের ক্যারেক্টারটা ম্যাটার করেনা।কারন গল্পটা তো রূপ ও তরীকে নিয়ে। তারপর কাল আপনাদের অনেকেরই কমেন্ট দেখলাম,অনেকের কমেন্ট পড়ে আমি এত হেসেছি যে বলে বোঝাতে পারবোনা😂।কেউ কেউ নাকি আদ্রিয়ান ও আরশকে গে ভেবেছে। যাই হোক আপনাদের জন্য নামটা চেইন্জ করে দিলাম,যদিও আরশ নামটি মেয়েদের ক্ষেত্রেও রাখা হয় ,তবুও আরশ নামটি পরিবর্তন করে আরিশা রাখা হলো। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের নামটি পছন্দ হয়েছে?)
...
আরিশা চোখ মেলে তরীর দিকে চেয়ে আছে। আরিশার চোখ যেন তরীর মুখটা থেকে সরছেই না। তরী আরিশার হাত ধরে মুখে হাসি নিয়ে,
--কিছু হয়েছে আরিশা?এমনভাবে চেয়ে আছো যে?
--নিশ্চুপ
--আরিশা!
তরী আরিশাকে হালকা ধাক্কা দিলে সে চমকে ওঠে। তারপর তরীকে জিজ্ঞেস করে,
--আন্টি,তাহলে আপনিই সেই #রূপের_তরী?
তরী মুচকি হেসে দিয়ে বলে,
--হ্যাঁ।আদ্রিয়ান তোমায় বলেছে?
--জ্বি আন্টি। কিন্তু
--কিন্তু কি?(ভ্রু কুচকে)
--আপনাদের অ্যাক্সিডেন্টের পর কি ঘটেছিল?
--আচ্ছা সব কিছু কি এয়ারপোর্টে দাড়িয়েই শুনবে?চল বাড়িতে পৌঁছে গল্প করি(মুচকি হেসে)
গাড়ি করে ওরা চৌধুরী ম্যানশনের দিকে রওনা দেয়। রূপ ও তরী আসলে লন্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। দুজনেরই প্রচুর ব্যাস্ততার মাঝে থাকতে হয়। তাই এবার ছুটিতে আদ্রিয়ান ওদের একমাসের ছুটিতে বাইরে পাঠিয়েছিল।
-----------------চলুন আরেকবার অতীতে ফিরে যাই----
চার মাস পর আজ তরী চোখ খুললো।অ্যাক্সিডেন্টের পর রূপ ও তরী দুজনেই প্রচুর পরিমানে জখম হয়েছিল।অবশ্য রূপের চেয়ে তরীর অবস্থাই বেশি ক্রিটিক্যাল হয়েছিল। কারন রূপ সিটবেল্ট পরলেও তরী পড়েছিল না। এতে করে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগার পর পরই ওর মাথাটা গাড়ির জানালার পাশে বারি খায়।
দীর্ঘ চার মাস কোমায় থাকার পর আজ একটু হলেও এদিক ওদিক চোখ বুলোচ্ছে।
রূপ একমাসের মাঝেই রিকভার করলেও তরীর চিন্তায় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ত। তরীর চিন্তায় সারাদিন জায়নামাজে বসে কান্নাকাটি করত। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করত না।
তরীর জ্ঞান ফিরলে সামনে সবাইকে দেখতে পায়। মা বাবা বোন,শশুড় কিন্তু ওর চোখ খুজছে রূপকে। একজন নার্স রূপকে খবর দেয় তরীর জ্ঞান ফেরার বিষয়ে। ডাক্তারের সাথে তরীর বিষয়েই আলোচনা করছিল সে। এ খবর শুনে দৌড়ে চলে আসে তরীর কাছে।
পাশে বসে তরীর হাতটি নিজের হাতের মাঝে গুটিয়ে নেয় রূপ।কথা না বলে শুধু চোখের জল ঝড়াতে থাকে সে। তরীকে এতদিন এমন অবস্থায় দেখে বাচার ইচ্ছেই হারিয়ে ফেলেছিল রূপ।
কিছুদিন পর হসপিটাল থেকে তরীকে রিলিজ করে দিলে,ওর সমস্ত কিছুর দেখাশোনার জন্য রূপ হসপিটালে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। একমাসের মত সময়ে রূপ তরীর রিকভারির জন্য দিনরাত চব্বিশঘণ্টা ওর সেবায় লেগে থাকে।
একমাস পর তরী অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে পুরোপিরি নয়। কলেজে যেতে চাইলে রূপ বারন করে। তাই বাড়িতেই পড়াশুনা শুরু করে সে।মাথায় ও পায়ে বেশি আঘাত লেগেছিল। তাই পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে একবছরের মত সময় লেগে যায়। এর পরপরই ওর এইচএসসি এক্সামও এগিয়ে আসে।এবং সব পরীক্ষা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় । এতদিনে তরী ও রূপ বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও ওদের মাঝে কোন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রূপ চেয়েছিল তরীর এইচএসসি এক্সাম শেষ করে কোথাও চান্স নিক তারপর সব দেখা যাবে।
সেই হিসেবে ভার্সিটির প্রেপারেশন নিয়ে অ্যাডমিশন দেয় তরী। অ্যাডমিশনের রেজাল্টের দিন দুপুরে তরী বারবার রুমে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। কি হবে এই টেনশনে ও ঘেমে উঠেছে,যদিও রুমে এসি চলছে।
একটুপর রিশাদ চৌধুরী গম্ভীর মুখ করে তরীর রুমে আসেন।
--তুমি কি এক্সাম ঠিকমতো দিয়েছিলে?
এ কথা শুনে তরীর টেনশন আরও বেড়ে যায়। না যানি কি হয়েছে।
--কেন বাবা?আমি চান্স পাইনি?(কাদো কাদো মুখে)
--তরীইইই!!(বলে চেচিয়ে ওঠে রিশাদ চৌধুরী) কই রে তোরা, মিস্টির প্যাকেটটা নিয়ে আয়।
তরী চমকে ওঠে, হাসিমুখে বলে,
--বাবা আমি?
--হ্যা মা, তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছ।
--নিশ্চুপ(চুপ করে জলমাখা চোখ নিয়ে বসে পড়ে মেঝেতে)
তরীকে উঠিয়ে মিস্টি খাইয়ে স্নেহের সাথে বুকে জড়িয়ে নেন রিশাদ চৌধুরী।তরী ছলছল চোখ নিয়ে ওনার দিকে তাকায়। আর বলে,
--বাবা?উনি কোথায়?
--কে,রূপ?ও তো সেই কখন বেরিয়েছে। আমাকে বলে যায়নি। তুমি না হয় ওকে ফোন কর। দেখ কোথায় আছে ও।
হাসিমুখে ফোনটা তুলে রূপের নম্বরে কল দেয় তরী। কয়েকবার বাজার পরও যখন ফোন ধরলোনা,তরী রেগে গিয়ে নিজের মোবাইলটা অফ করে রাখলো।
[আরেকটা কথা,এতদিনে তরীর চুল অনেক বর হয়ে গিয়েছে🤗।তাই চুল নিয়ে আর কোনরকম ঝামেলা নেই, যাই হোক প্রথমে এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে দিয়েছিলাম ওর সাথে😜]
সন্ধ্যা হয়ে গেল, তাও রূপ বাড়ি ফিরলো না, তাই উপায় না পেয়ে ছাদে চলে গেল। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ছাদের দরজাটা লক করা। সেখান থেকেও মন খারাপ করে রুমে ফিরে এল। কিন্তু রুমে এসে দেখে,কয়েক মুহুর্তের মাঝেই কতটা চেইন্জ। সমস্ত রুমে বেলুন ছড়ানো, ও বিছানার ওপর একটা হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ীএর ওপর গোলাপের বুকে,একটা ভাজ করা কাগজ,এবং সাদা ও গোলাপির মিশ্রনের চুড়ি।
গোলাপ গুলো মুখের কাছে নিয়ে পাপরিগুলোর সাথে একটু ঠোঁট ছুইয়ে নেয় সে। একদম তরতাজা গোলাপ সবগুলো। শাড়ীর পাশে রাখা কাগজটির ভাজ খুলে দেখতে পায়,
"রেগে গেলেন তো, রূপের হলেন"
"দেড়ি না করে ব্যালকনিতে আসুন"
কথাটি পড়ে তরী হেসে দেয়। ধীর পায়ে গিয়ে ব্যালকনিতে গেলে সে দেখে, হাজারো রকমের ফুলের ওপর বিভিন্ন রংয়ের ডিম লাইট জ্বলছে। যাতে সব ফুলের সৌন্দর্য দিগুন পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওখানে একটা কাগজে লেখা আছে,
"শাড়িটা অন্য কারও জন্য নিয়ে আসিনি,তাই শাড়িটা পরে জলদি ছাদে চলে আসুন"
তরী আর দেরি না করে শাড়ি ও চুড়ি পড়ে হালকা সাজে চলে গেল ছাদে।
ছাদটা ছোট ছোট সাদা, লাল, নীল,হলুদ,সবুজ ডিম লাইটে সাজানো হয়েছে, জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফুলের তোরা বসানো রয়েছে, এবং একটা মাঝারি আাকারের চৌবাচ্চা রেখে তাতে ছোট ছোট মোমবাতি ও গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এককথায় যাকে বলে, ছাদটির সৌন্দর্য হাজারগুন পরিমানে বেড়ে গেছে। তরী ছাদের যে জায়গায় দাড়িয়ে আছে তার পেছনে বসে কেউ একজন বলে ওঠে
"কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনো.
,আমি যে তোমায় ভালোবাসি কথাটি সত্য, তবে তোমায় আমি ভালোবাসতে জোর করবোনা,
শুধু একটিবার বলো ভালোবাসি,
আর কোনদিন ভালোবাসতে হবে না,
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না,
আমার জন্য তোমাকে নিশিরাতে পা ভিজাতে হবে না,
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি,
সবাই জানুক কেউ আমায় ভালোবেসেছিল,
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিল,
শুধু এতুটুকুই চাই আমি,কাছে আসো বা না আসো কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটিবার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউ তো অন্তত একটিবার প্রানের ছোয়া দিয়েছিল।
মূহুর্তের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে আবার ঝরের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই চাই আমি এর চেয়ে বেশি চাই না।
হয়তোবা আমি তোমায় আকাশের চাদটি এনে দিতে পারবোনা,
পূর্ব দিকে ওঠা সূর্য টিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা,
পারবো রজনীর পর রজনী জেগে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
তুমি যে একটা পবিত্র ও প্রস্ফুটিত ফুলের মন্জুরি,
তুমি হবে কি এই আপনিময় #রূপের_তরী🍁🌷?
..
কথাগুলো শেষ হতে না হতেই তরী নিজেই বসে পড়ে রূপকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকে,
--ভালোবাসি,প্রচুর ভালোবাসি।রজনীর পর রজনী না হয় একসাথে জাগবো,মরুভুমিতে না হয় একসাথে পা দিব,নিশিরাতে চাদের আলোয় দুজনে মিলে চন্দ্রস্নান করবো। রূপের তরী তো অনেক আগে থেকেই ছিলাম, তবে আজকে কথাটির পূর্নতা পেলাম।
জোস্নার আলোয় গা ভিজিয়ে আজ পূর্নতা পেল রূপ ও তরীর ভালোবাসা।।🍁🌷
..

#চলবে__
#পর্ব_১২(শেষ)
গল্পঃ #রূপের_তরী🍁🌷
Writer: #Ashura_Akter_Anu
......
ড্রয়িংরুমের সোফায় হাতে হাত জড়িয়ে পাশাপাশি বসে আছে রূপ ও তরী। ওদের সামনেই বসে আছে আদ্রিয়ান ও আরিশা। আরিশার চোখে একটু একটু জল। তরী ও রূপের বলা কথাগুলো শুনে গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে ওর।এতটা ভালো কেউ কাউকে বাসতে পারে?
আরিশার চোখের কোনে জমা বিন্দু পরিমান জলটুকু আদ্রিয়ান হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে মুছে দিল।
তরী সোফা থেকে উঠে গিয়ে শেল্ফে রাখা একটা অ্যালবাম আনলো। সেখানে রূপ ও তরীর আগের কতশত স্মৃতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, রূপ তার রুমের দেয়ালে বড় করে তরীর ও নিজের একটা ছবি বড় করে গ্লাস দিয়ে বাধিয়ে রেখেছে।
আরিশা রূপকে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,
--আংকেল! এতটা ভালোবাসা যায় কাউকে?
--কাউকে কতটা ভালোবাসা যায় সেটা আমার জানা নেই তবে,তরীর প্রতি ভালোবাসাটা না কমে শুধু বাড়ছেই।৷ তরীর জন্য আমার ভালোবাসাটা অন্য সবার কাছে অসীম পরিমানে হলেও আমার কাছে সবসময়ই বিন্দু পরিমানই মনে হবে।আমি প্রতিদিন নতুন করে ওকে ভালোবাসি। নতুন করে আমার ওর সংসারটা গোছাই। নতুন করে ওর সাথে নিজেকে অনুভুতিতে ভেজাই।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ছিল। রূপের কথাগুলো শুনে ওর চোখে জল চলে এলো। বাড়িতে প্রথম হবু বউ এসেছে আর এমন সময় এতটা ইমোশনাল সবাই। এটা কি মানায়? তাই সবাইকে উদ্দেশ্য করে তরী বলে ওঠে,
--এই যে, এই প্রথম আরিশা আমাদের বাড়িতে এসেছে আর এমন সময় সবাই এত কান্না কা্না ভাব নিয়ে বসে আছো কেন?চলো চলো,সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।
তরীর কথা শুনে রূপ উঠে তরীর সাথে ডাইনিং রুমে চলে গেল। ড্রয়িংরুমে বসে আছে আদ্রিয়ান ও আরিশা। আরিশার হাতের ওপর হাত রেখে আদ্রিয়ান বলল,
--সরি,আমি তোমায় সবসময় বকাঝকা করি তাইনা?বাট আই প্রমিস, আজ থেকে তোমায় আর কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেবনা। আমার মাকে যেমন করে বাবা ভালোবাসে হয়ত তেমন করে তোমায় ভালোবাসতে পারবোনা, কিন্তু তোমায় সবসময় চেষ্টা করবো খুশি রাখার। তোমার সব ইচ্ছে পুরন করবো।
--তুমি সবসময় যা বলো তা আমার ভালোর জন্যেই তো বলো তাই না? তাহলে এখন সরি কেন বলছো?তবে হ্যা আমার কিছু আব্দার তোমায় রাখতে হবে।
--আবার কি আবদার শুনি?
--এই ধরো, প্রতিদিন বিকেলে আমার জন্যে বেলি ফুলের মালা আনতে হবে। এবং সেটা তুমি নিহের হাতে আমার খোপায় গুজে দেবে।
--হুম,তারপর?
--বৃষ্টি ভেজানো সন্ধ্যায় ঠান্ডা লাগলেও আমার সাথে ছাদে দাড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করতে হবে।
--ওহহহ,তারপর?
--শীতের রাতে আমায় বুকে জড়িয়ে ঘুমোতে হবে।
--ওহহ এই ব্যাপার, তাহলে এসো এখনি ধরি(দুষ্টু হেসে)
--এই না। হয়েছে আর কিছু লাগবেনা। আমার এমন ছোট ছোট আবদার পুরন করলেই হবে।
--এগুলো ছোট ছোট আবদার?আমি হসপিটাল ছে..(আদ্রিয়ানের এ কথায় আরিশা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়,একটু ভয় পেয়ে আদ্রিয়ান বলে)না না, ঠিক আছে ঠিক আছে।
.......
রাত বারোটা বাজতে চলল,রূপ সে কখন বেড়িয়েছে। কোথায় যেন যাবে বলেছে।
আদ্রিয়ান ও তরী ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে রূপের জন্য। কিন্তু রূপের আসার নামগন্ধ নেই। আদ্রিয়ান তরীকে ঘুম ঘুম চোখে বলে,
--মা, আমি না হয় ঘুমিয়ে পড়ি। তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। বাবা আসলে আমি দেখবো। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
আদ্রিয়ান চলে গেলেও তরী সেখানেই বসে থাকে। একটুপর নিজের ফোন খুজতে থাকে তরী। ফোনটা কাছে না থাকায় রুমে চলে যায় সে। রুমে যাওয়ার পর টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে যেই না রুম ছেড়ে চলে আসবে ঠিক তখনই সে খেয়াল করে বিছানার ওপর প্রতিবারের মতোই আজও গোলাপের একটা বুকে রাখা। তার পাশেই একটা শাড়ী ও একডজন ম্যাচিং চুড়ি। পাশেই একটা কাগজ।
তরী আনমনেই হেসে দেয়। আজ ওদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি।
এবং এই দিনটিতে প্রতিবারই রূপ তরীর জন্য সারপ্রাইজ প্লান করে। এবং প্রত্যেকবার সারপ্রাইজটা সেইম হয়।
এবার আর ভুল না করে শাড়িটি পড়েই ব্যালকনিতে যায় সে। সেখানে প্রতিবারের মতই অনেক রকমের ফুল। এবং তার মাঝে আরেকটি কাগজ। যেখানে লেখা,
"আজ তোমায় শাড়ী পড়তে বলবোনা, কারন আমি জানি তুমি শাড়িটি পড়েই এই কাগজটি পড়ছ"তাই দেরী না করে ছাদে চলে এসো"
তরী আবারও হেসে দেয়।
সোজা চলে যায় ছাদে। একই সাজ, একই লাইটিং সবকিছু একইরকম আছে। কিন্তু ভালোবাসাটা একরকম নেই ওদের মাঝে। সেটা যে শতগুন পরিমানে বেড়ে গেছে।
আজ আবারও তরীর পেছনে থেকে হাটু গেড়ে বসে আছে রূপ। আজ আবারও বলতে চায় নিজের মনের কথা। কিন্তু প্রতিবারের মত আজ আর তরী রূপকে বলতে দিলনা। তার আগেই রূপকে জড়িয়ে ধরে বলে ফেলল,
--বলতে হবেনা, আমি তো আপনারই তরী। আমি তো #রূপের_তরী🍁🌷।যা আগেও ছিলাম, এখন আছি এবং সারাজীবন থাকবো।
রূপ নিজের ভালোবাসার আবেশে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তরীকে।❤
.
.
~~~~সমাপ্ত~~~

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url